এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বাদি হয়ে ২০০৫ সালে ১ কোটি ৪২ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫০৪ রাজস্ব ফাঁিকর অভিযোগে একটি সার্টিফিকেট মামলা করেছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। মামলার আর্জিতে অভিযোগ করা হয় চকরিয়া উপজেলা রামপুর মৌজার অধীন (পুর্ব পুরুষের সম্পত্তি রামপুর সমবায় সমিতির) ৭ হাজার চিংড়িজমি দখলে রেখে মৎস্য অধিদপ্তর উল্লেখিত পরিমাণ টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁিক দিয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন থাকলেও অদ্যবদি মৎস্য অধিদপ্তর উল্লেখিত পরিমাণ চিংড়িজমি দখলে রেখে কতিপয় ভুমিদুস্য চক্রকে নামমাত্র টাকার বিনিময়ে রক্ষনাবেক্ষনের সুযোগ দিচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে, মৎস্য অধিদপ্তরের লাগামহীন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রায় একযুগের বেশি সময় উল্লেখিত চিংড়িজমির মালিকানা ফিরে পাচ্ছেন না রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি। এমনকি উল্লেখিত পরিমাণ চিংড়িজমির দখল বুঝিয়ে দিতে উচ্চ আদালতের আদেশ থাকলেও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা মানছে না। এতে পুর্বপুরুষের রেখে যাওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছেন রামপুর সমিতির অন্তত ১০ হাজার সভ্য ও পোষ্যরা।
উল্টো উল্লেখিত পরিমাণ চিংড়িজমি দখলে রেখে কতিপয় ভুমিদুস্য চক্রকে নামমাত্র টাকার বিনিময়ে রক্ষনাবেক্ষনের সুযোগ দিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা রাজস্ব ফাঁিক দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন রামপুর সমিতির সভ্য পোষ্যরা।
রাজস্ব ফাকির এই ধরণের অভিযোগ তুলে সর্বশেষ ১৩ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-মহাপরিচালকের দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক শহীদুল ইসলাম লিটন।
অভিযোগটিতে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ, অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক মো.হাবিবুর রহমান, উপ-পরিচালক (চিংড়ি) জিয়া হায়দার চৌধুরী, ভুমি মন্ত্রানালয়ের সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারি কমিশনার (ভুমি), উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা, চকরিয়া থানার ওসি, পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়ন ভুমি সহকারি কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের একজন আইন কর্মকর্তাসহ মোট ১৩জনকে বিবাদি করা হয়েছে।
রামপুর সমিতির সম্পাদক শহীদুল ইসলাম লিটন বলেন, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার রামপুর সমবায় কৃষি উপনিবেশ সমিতি লিমিটেড (রেজি: নং ২৩৯৩/৭২ চট্ট) হাজারো বয়োবৃদ্ধ সদস্য নিয়ে গঠিত একটি সমিতি। বর্তমানে এই সমিতিতে প্রায় ১০ হাজার সভ্য আছেন। স্বাধীনতা পুর্ববর্তী সময় থেকে চকরিয়া উপজেলার রামপুর মৌজার চিংড়িজমি পুর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া সম্পত্তি হিসেবে সমিতির সভ্যরা শান্তিপুর্ণভাবে ভোগদখলে ছিলেন।
তিনি দাবি করেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে উল্লেখিত চিংড়িজমি সমিতির মালিকানা থেকে বেহাত হলে আইন আদালতের আশ্রয় নেয়া হয়। সেইসময় থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত আইনী লড়াইয়ে নিন্ম আদালত থেকে উচ্চ আদালত উল্লেখিত চিংড়িজমির মালিকানা রামপুর সমিতির বলে রায় ডিগ্রি দিয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারী হাইর্কোটের (পিটিশন নং ১০৯৬২/১২ এর ১২-০৮-২০১২ ইং স্ট্যটাস-কু) আদেশও সমিতির পক্ষে এসেছে। ওই আদেশে উল্লেখিত চিংড়িঘেরের দখল বুঝিয়ে দিতে উচ্চ আদালত দুই সপ্তাহের আদেশের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের আদেশ দিলেও তা মানছে না কক্সবাজার আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এমনকি সমিতির ১০ হাজার সদস্যের মালিকানাধীন এ সম্পদ উদ্ধারে উচ্চ আদালত ও জেলা প্রশাসকের যত আদেশ জারি করা হয়, তার বদলে ততবার উচ্ছেদে নামে মৎস্য বিভাগের লোকজন।
দুদকে লিখিত অভিযোগে রামপুর সমিতির সম্পাদক শহীদুল ইসলাম লিটন দাবি করেন, আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করে কতিপয় প্রভাবশালী ভুমিদুস্য চক্রকে আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে উল্লেখিত চিংড়িজমি দখলে থাকতে সুযোগ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এমনকি দেশের প্রচলিত সংবিধান লঙ্ঘনে সমিতির পক্ষে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকাবস্থায় নামমাত্র টাকার বিনিময়ে উল্লেখিত চিংড়িজমি ইজারা নবায়ন দিয়ে সরকারের বিপুল টাকার রাজস্ব ক্ষতি করেছে। পক্ষান্তরের একে অপরের যোগসাজসে জমির মালিকানা থেকে সমিতির সভ্যদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই ধরণের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে একযুগের বেশি সময় ধরে সমিতির সদস্যরা পুর্ব পুরুষের সম্পত্তি উল্লেখিত চিংড়িজমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থার কারণে সমিতির ১০ হাজার সভ্য-পোষ্যরা বর্তমানে রুটি-রুজির উৎস হারিয়ে মানবেতন জীবন কাটাচ্ছেন।
পাঠকের মতামত: