নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া-পেকুয়া ::
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বর্মি আর্মির গুলি, বোমা, দা–কিরিচের কোপ ও সীমান্তে স্থলমাইনের আঘাতে আহত শিশু–নারীসহ ১৮ জন আহত রোহিঙ্গা কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্্রীস্টান হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর আগে আরো ১৫ জন আহত রোহিঙ্গা চিকিৎসা নিয়ে উখিয়াস্থ ক্যাম্পে চলে গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার মালুমঘাট খ্রীস্টান হাসাপাতালে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ শিশুসহ ১০ জনকে চিকিৎসা দিয়ে একটি অস্থায়ী কক্ষে রাখা হয়েছে। অপর ৮ জন অপরারেশন থিয়েটারে রয়েছে। অপারেশনে থাকা আহতদের মধ্যে সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত শিশু আজিজুল হকের দুই পা’ই কেটে ফেলতে হয়েছে। অন্যদের ক্ষতস্থানে একাধিক সেলাই করতে হয়েছে। ভর্তি থাকা আহতরা হলেন : মো. ওসমান, মো. রিয়াজ, মো. আইয়ুব,
মো. হোবাইব, মো. শোফাইয়েত, মো. রিদুয়ান, মো. জোবায়ের, মো. ইউছুপ, জোবায়ের আহমেদ, আবদুল নবী, কামাল উদ্দিন, জহুরা বেগম, তাসমিন, মনোয়ারা বেগম, সাবেকুন্নাহার, কাউছার বিবি, আজিজুল হক ও অজ্ঞাত একজন। এছাড়া গত ২৬ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আহত আরো ১৫ রোহিঙ্গা এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ক্যাম্পে ফিরেছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
আহত ওসমান জানান, আমি বুচিডং এলাকায় চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে বর্মি আর্মি প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে আমি আহত হই। আমার ভাই ইসমাইলের সহায়তায় বাংলাদেশে প্রবেশ করি। মংডু এলাকার বাসিন্দা মোবাইল মেকানিক জোবায়ের বলেন, বর্মি আর্মির গুলিতে আহত হয়ে এলাকার লোকজনের সাথে অনেক কষ্টে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এখানকার ক্যাম্প কর্মকর্তাদের সহায়তায় চিকিৎসা নিচ্ছি।
মংডু গরতরবিল এলাকার মাদ্রাসা ছাত্র আবদুল নবী বলেন, মিয়ানমারের সেনাবহিনীর গুলিতে আহত হই আমি। মৃত্যু যন্ত্রণা সয়ে পরিবার সদস্যসহ গ্রামের লোকজনের সাথে পাহাড়ি এলাকা হয়ে বাংলাদেশে আসি। তার বাবা আবদুল আজিজ কান্না ভেজা কণ্ঠে বলেন, গত ২৬ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করে রাখাইন রাজ্যে। ওইসময় সেনাদের সাথে মুখোশ পরিহিত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উগ্র যুবকরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালায়। বসতবাড়িও আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে গুলিবিদ্ধ ছেলে নবীসহ পরিবার সদস্যদের নিয়ে উখিয়া সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে চলে আসি। পরে, ক্যাম্প কর্মকর্তাদের সহায়তায় আমার ছেলেকে মালুমঘাট হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
পাঠকের মতামত: