কক্সবাজার–চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে কক্সবাজারে আসার পথে চকরিয়ার ১৫ কিলোমিটার পর মেদাকচ্ছপিয়া এলাকায় চোখে পড়ে শতবর্ষী, সুউচ্চ গর্জন গাছের একটি বাগান। প্রায় এক হাজার একর আয়তনের চিরহরিৎ ও শতবর্ষী বৃক্ষের এই বাগানটিকে ১৩ বছর আগে ‘জাতীয় উদ্যান’ ঘোষণা করা হলেও সেই ঘোষণাই সার। এখানে পর্যটকদের সুবিধার জন্য গড়ে তোলা হয়নি কোন কিছুই। এরপরও প্রায় প্রতিদিনই শত শত পর্যটক এখানে পিকনিকে মেতে ওঠছে। ফলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে এই উদ্যানটি একটি নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার–চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের মেদাকচ্ছপিয়া বনবিটের ৩৯৫ দশমিক ৯২ হেক্টর বা ৯৭৮একর বনাঞ্চলকে ২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিমূলে ‘জাতীয় উদ্যান’ ঘোষণা করা হয়। এরও প্রায় ৮/৯ বছর পর সেখানে অবস্থিত বৃক্ষ গণনা করে ১০ হাজার ৩৩৭টি শতবর্ষী গর্জন গাছ পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে শতবর্ষী গাছের সংখ্যা কমতে কমতে ৯ হাজারের নীচে চলে এসেছে বলে জানা গেছে। এরপরও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মোটেও কমেনি। বরং দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে এখানকার জীববৈচিত্র্য। আর এতেই দৃষ্টি কাড়ছে পর্যটকদের। প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে পিকনিক করছে বিনাখরচে। সুউচ্চ বৃক্ষের ছায়াতলে বসে পাখির কিচির–মিচির ধ্বনি শুনতে শুনতে এখানে কিছুক্ষণ সময় কাটানো বেশ উপভোগ্য বলে মনে করেন পর্যটকরা।
সম্প্রতি মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে পিকনিক করতে গিয়ে সত্যিকার ‘বনভোজনের’ মজা পেয়েছেন বলে জানান, রাজধানীর একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এক শিক্ষার্থী বলেন– এই পার্কের পাশে লবণ মাঠ ও চিংড়ি ঘের। অদূরে মহেশখালীর পাহাড়; দেখতে কতই না উপভোগ্য।
আসিফ আদনান নামের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভের সাথে প্রশ্ন তুলেন– এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটনের উন্নয়নে কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না।
তিনি বলেন– কক্সবাজারে আসার পথে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, এর মাত্র ২/৩ কিলোমিটার দক্ষিণে মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান যে কারো নজর কাড়ে। এখানে আধুনিক সুযোগ–সুবিধা সৃষ্টি করা হলে চকরিয়ার দক্ষিণাংশ এক বিশাল পর্যটন জোনে পরিণত হবে।
একই মতামত কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খানেরও।
তিনি বলেন– এমন সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে কক্সবাজারের পর্যটনেরইতো উন্নতি হবে।
স্থানীয়রা জানান– এই বাগানের সু–উচ্চ ও শতবর্ষী গর্জন গাছ, বাগানের মাঝ দিয়ে আসা প্রায় ২ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পথ, দৃষ্টি কাড়ে পর্যটকদের। তাই অনেকেই কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়ায় এখানে। নির্জনতা ও নিরাপত্তার কারণে এতদিন পার্কে বেশি সময় কাটাত না কেউ। কিন্তু মেদাকচ্ছপিয়া বনবিটের কর্মী সংকটের কারণে সহ–ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে এখানে দিবারাত্রি পাহারার ব্যবস্থা রাখায় এখন নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। এরফলে নিরাপত্তা নিয়ে এখানে কোন চিন্তার কারণ নেই। এছাড়া পার্কের তিন পাশে লোকালয় থাকায় এখানে কোন দূর্বৃত্ত অঘটন ঘটিয়ে পার পাওয়ারও সুযোগ নেই। চলতি পর্যটন মৌসুমে এই উদ্যানে প্রায়–প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক পিকনিক পার্টি আসছে বলে তারা জানায়।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা কেরামত আলী মল্লিক জানান, এই উদ্যানের জন্য সরকারী তরফ থেকে বিশেষ বরাদ্দ পাওয়া না যাওয়ায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব না হলেও বনবিভাগ নিজস্ব উদ্যোগে এখানকার বনজ সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। এরই আওতায় এ উদ্যানের বনাঞ্চলকে এএনআর (গাছ থেকে বীজ পড়ে স্বাভাবিক পন্থায় যে চারা তৈরী হয়) বাগান সৃজনের মাধ্যমে বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য হিসাবে গড়ে তুলছে। এছাড়া এই জাতীয় উদ্যান থেকে গর্জন গাছের লক্ষ লক্ষ বীজ সংগ্রহ করে নার্সারিতে এনে চারা তৈরি করা হচ্ছে। আর এসব চারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে বনবিভাগের বাগান সৃজনের জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে। বর্তমানে এই উদ্যানটি দেশের প্রথম ও একমাত্র মাদার ট্রি গর্জন বাগান হিসেবে পরিচিত।
তিনি জানান– পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য জন্য সম্প্রতি এই উদ্যানের ফাঁকে ফাঁকে তৈরি করা হয়েছে কিছু টহল শেড বা পাহারাদার বিশ্রামাগার। আর এসব কর্মকান্ডে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই সময় কাটাতে চলে আসছে উদ্যানে।
পাঠকের মতামত: