ঢাকা,রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মুর্শিদাবাদে বিক্ষোভ, রেল স্টেশন ভাঙচুর

অমিতাভ ভট্টশালী, বিবিসি, কলকাতা:

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক বিক্ষোভ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ আর মেঘালয়ে।

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ আর হাওড়াতে ব্যাপক বিক্ষোভের সময়ে বেশ কয়েকটি ট্রেন আর দুটি রেল স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়েছে, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বাস।

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা আর হাওড়ার উলুবেড়িয়া স্টেশন দুটিতে বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে।

উলুবেড়িয়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি ট্রেনেও পাথর ছোঁড়া হয়। তারপরে দুটি স্টেশনের সামনেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন লাইন। হাওড়া থেকে খড়্গপুর ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেন আটকিয়ে পড়েছে।

বেলডাঙ্গা স্টেশনেও একই ভাবে ভাঙচুর চলে শুক্রবার। ওই এলাকার কয়েকটি বাস আর গাড়িতেও ভাঙচুর চালানোর পরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভ হয় সেখানকার থানার সামনেও।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বিজেপির এক রাজ্যস্তরের নেতা আক্রান্ত হয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এই বিক্ষোভগুলির খবর পাওয়ার পরেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। বৈঠকের শেষে তিনি আবেদন জানিয়েছেন যাতে মানুষ গণতান্ত্রিক পথে, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের প্রতিবাদ জানান।

কলকাতায় নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিক্ষোভ।পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের খবর পাওয়ার পরেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন।

আলিগড়ে ছাত্র বিক্ষোভ

উত্তরপ্রদেশের আলিগড়েও শুক্রবার ছাত্র আর শিক্ষকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পৃথক মিছিলের শেষে তারা দাবি সনদ পেশ করেছেন নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনীগুলি প্রত্যাহার করার জন্য।

মুসলমান ছাড়া প্রতিবেশি তিন দেশের সংখ্যালঘু মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আনা বিলের বিরুদ্ধে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও শুক্রবার পথে নেমেছিলেন।

তারা দাবি সনদ পেশ করার জন্য সংসদ ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ক্যাম্পাসেই ওই বিক্ষোভ মিছিল আটকিয়ে দেয় পুলিশ। ছাত্রদের ওপরে পুলিশ লাঠি চার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে।

তথাগত রায়ের টুইট

মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে শুক্রবার পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে সেখানকার রাজ্যপাল তথাগত রায়ের একটি টুইট বার্তার পরে।

বিজেপির প্রাক্তন নেতা মি. রায় টুইট করে লেখেন, ”সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দুটি বিষয় কখনই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এক, এই দেশ ভাগ হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতেই। দুই, গণতন্ত্রে বিভাজন থাকবেই। কেউ যদি সেটা না চান, তাহলে উত্তর কোরিয়ায় চলে যেতে পারেন।”

হাজার হাজার মানুষ আজ মিছিল করছিলেন নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। তার মধ্যেই এই টুইট বার্তার পরে মিছিল ঘুরে যায় রাজভবনের ফটকের দিকে।

মেঘালয় রাজ্যে আগেই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট আর এস এম এস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

নাগরিকত্ব আইন: ক্ষোভে ফেটে পড়েছে আসাম, বিল বৈষম্যমূলক বলে অভিযোগ

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সফর বাতিল

এই বিলের প্রতিবাদে আসামে হিংসাত্মক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল আগেই। অন্যান্য রাজ্যেও বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ, মিছিল চলছিল।

এরই মধ্যে আসামের গুয়াহাটিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা বাতিল হয়েছে।

পিছিয়ে গেছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর উত্তরপূর্ব ভারতের সফরও।

শুক্রবার নতুন এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে গোয়াতেও।

তবে আসামে যে বিক্ষোভ হচ্ছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে, তার সঙ্গে ভারতের অন্য প্রদেশে বিক্ষোভগুলির বিস্তর ফারাক আছে।

আসামের মানুষ মনে করছেন যে নাগরিকত্ব আইনে সংশোধন আনার ফলে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে কথিত অবৈধ বাংলাদেশীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার ছাড়পত্র পেয়ে যাবেন। আর তখন আসামের মূলনিবাসীদের ভাষা,সংস্কৃতি সহ অস্তিত্বই সঙ্কটের মুখে পড়বে।

তারা এও বলছেন, এনআরসি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে বিপুল সংখ্যায় বাংলাভাষী হিন্দুদের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, তাদের আইনে পরিবর্তন এনে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বিজেপি নেতৃ্ত্বাধীন সরকার।

আসামের প্রতিবাদী সংগঠনগুলো বলছে কোনও ধর্মের ভিত্তিতে নয়, কোনও অবৈধ বাংলাদেশীকেই আসামে থাকতে দেওয়া যাবে না – তিনি হিন্দু হোন বা মুসলমান।

কলকাতায় একটি কলেজের সামনে বিক্ষোভ।ভারতের বিভিন্ন শহরে এই বিল বৈষম্যমূলক অভিযোগ করে এই বিল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে।

রাষ্ট্রহীন করার চেষ্টা

আসামের মুসলমানদের ক্ষোভ এই জন্য, যে, এনআরসি প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন করে ভারতীয় হওয়ার সুযোগ দিলেও যে কয়েক লাখ মুসলমান এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের এবার আক্ষরিক অর্থেই ভারতীয় নাগরিক হওয়ার আবেদনেরও সুযোগ না দিয়ে রাষ্ট্রহীন করার চেষ্টা করছে সরকার।

আসামের বাংলাভাষী হিন্দুদের একটা বড় অংশ কিন্তু মনে করছে যে নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনের ফলে তারা লাভবান হলেও হতে পারেন। কিন্তু সন্দেহ রয়েছে তাদের মনেও।

আসামের বাইরে অন্যান্য রাজ্যে যেসব বিক্ষোভ হচ্ছে, সেটা আসামের মুসলমান সমাজের ক্ষোভের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ হোক বা আলিগড় অথবা জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এই কারণে যে, প্রতিবাদীরা মনে করছেন যে নতুন আইনে আসলে মুসলমানদের নাগরিকত্বহীন করার একটা প্রচেষ্টা আছে।

পাঠকের মতামত: