মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী ধর্ষণ, নির্যাতন ও লুটপাট চালাচ্ছে অভিযোগ করে একে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ শামিল হতে পারে বলে মনে করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এমন ভয়াবহ পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। এর আগে জাতিসংঘও একই অভিযোগ তুলেছিল। মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া চলছে বলেও অভিযোগ করেছিল জাতিসংঘ।
উল্লেখ্য এ বছর অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইসলামি চরমপন্থা দমনে কাজ করছেন বলে দাবি করছেন তারা। আর তা এমন কঠোর প্রক্রিয়ায় চালানো হচ্ছে যে সেখানে সংবাদমাধ্যমকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
মিয়ানমার ও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সাক্ষাৎকার, স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ এবং ভিডিও ও ফটো-র ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে অ্যামনেস্টি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী দেশটিতে বেআইনি হত্যাকাণ্ড, বহু ধর্ষণ, পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেবার মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে সেখানে ‘মানবিক বিপর্যয়’ তৈরি হয়েছে। অ্যামনেস্টি মনে করছে এসকল কর্মকাণ্ড মানবতা বিরোধী অপরাধের শামিল হতে পারে। সংস্থাটির দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা বিষয়ক পরিচালক রাফেন্দি ডিজামিন বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেসামরিক রোহিঙ্গাদেরকে নির্মম ও নিয়মতান্ত্রিক সহিংসতার লক্ষ্যে পরিণত করেছে।’
চলমান সহিংসতা নিয়ে আলোচনা করতে আঞ্চলিক নেতারা যখন ইয়াঙ্গুনে জড়ো হয়েছেন তখনই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো। সদস্য রাষ্ট্রের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য এভাবে ১০ জাতিরাষ্ট্রবিশিষ্ট আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ আসিয়ানের নেতাদের মিলিত হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।
.
অ্যামনেস্টির হিসেব অনুযায়ী, গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধের আদেশ দিতে জাতিসংঘের সঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্ত শুরুর উদ্যোগ নিতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি।
জাতিসংঘ এরইমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে। তাদের বিরেুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ তোলা হয়। এবারের সংঘর্ষে রাখাইন রাজ্যের মৃতের সংখ্যা ৮৬ জন বলে জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘের হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত ঘরহারা হয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ। পালাতে গিয়েও গুলি খেয়ে মরতে হচ্ছে তাদের। মিয়ানমারে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাস করে। কিন্তু, সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা তাদেরকে দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকার তো করেই না বরং এসব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করে থাকে। রাখাইন রাজ্যেে এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির পরেও চলমান দমন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে দায় এড়াতে চাইছে দেশটির সরকার। রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘর পোড়াচ্ছে বলেও দাবি করছে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিশ্চিত করেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবেই চেনে। জাতিসংঘের অবস্থানও আলাদা নয়। সে কারণেই মিয়ানমারকে জাতিগত নিধন চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে সংস্থাটি। সূত্র: বিবিসি
পাঠকের মতামত: