ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মিয়ানমারে দিনে দেখা যায় ধোঁয়া, রাতে শোনা যায় চিৎকার ও গুলির শব্দ

mianআবদুল আজিজ, কক্সবাজার :::

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে রাত হলেই শোনা যাচ্ছে গুলির শব্দ ও মানুষের চিৎকার। দেখা যাচ্ছে ধোঁয়া ও আগুনের লেলিহান শিখা এবং ভেসে আসে মানুষের কান্নার আওয়াজ। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশি অধিবাসিরা জানিয়েছেন, ‘গত সোমবার বিকালে মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে হেলিকপ্টার থেকে বোমা বা মর্টার সেল নিক্ষেপের মতো হামলার দৃশ্যও দেখা গেছে।’

এদিকে, এ কারণে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা সতর্কবস্থায় রয়েছে। যাতে করে মিয়ানমারের কোনও নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।

টেকনাফ হোয়াইক্যং এলাকার মুদি দোকানদার মোহাম্মদ হোছন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মুসলিম অধ্যুষিত বাড়ি ঘরে আগুন জ্বলার দৃশ্য ও  হেলিকপ্টার থেকে বোমা ফেলার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তহোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার লালু বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘মিয়ানমারের ভয়াবহ হামলার দৃশ্য দেখে চোখের পানি আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আগুনের লেলিহান শিখায় মনে হচ্ছে একের পর এক গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

মিয়ানমার সীমান্তের খুব কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতন প্রত্যক্ষ করেছেন টেকনাফ উলুবনিয়া সীমান্তের ৫০ বছরের বৃদ্ধ নজির আহমদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘দিনে বেলায় আগুনের ভয়াবহ ধোঁয়ার কুম্বলি দেখা যায়। রাতে শোনা যায় গুলি ও বোমার আওয়াজ। গভীর রাতে ভেসে আসে মানুষের আর্তনাত। এতেই বুঝা যায় মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে চলছে ভয়াবহ নির্যাতন।’

এছাড়াও টেকনাফের হোয়ইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এই বর্বরতা দেখেছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তারা জানিয়েছেন, ‘এখনও এ হামলা চলছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেখানে বেসামরিক অধিবাসীদেরকে হত্যার পাশাপাশি ধর্ষণও করেছে এবং গ্রামের পর গ্রাম তারা জ্বালিয়ে দিচ্ছে।’সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দিচ্ছেন বিজিবির টেকনাফ কোম্পানির এক সদস্যসীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে টেকনাফস্থ বিজিবির-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। কেউ যাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সতর্কমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এখানে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এছাড়া টেকনাফ সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশের অধিবাসীরা যাতে আতঙ্কিত না হয়, সেজন্য বিজিবি’র সদস্যরা সীমান্তে সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ করছে। যে কোনও ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে এলাকাবাসীকে সীমান্ত এলাকা ও নাফ নদীতে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে, সীমান্তের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, ‘সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢেকিবনিয়া, কুমিরখালী, শিলখালী, বলিবাজার, নাকপুরা এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ২টি সামরিক হেলিকপ্টার কেয়ারি প্রাং, নাইচাপ্রু, বলি বাজার, নাকপুরা, কুমিরখালী এলাকার আকাশে হেলিকপ্টার টহল নিয়মিত টহল দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বেশ কয়েককটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সীমান্ত পুলিশের ৯ সদস্য নিহত হয়। সেই হামলার জন্য রোহিঙ্গা মুসলমানদের দায়ী করে আসছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর থেকে ওই অঞ্চলে ত্রাণকর্মী এবং সাংবাদিকের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: