নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে কক্সবাজারের লবণ চাষিরা মাঠ পর্যায়ে লবণ উৎপাদনে নেমে পড়লেও হঠাৎ করে লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় চোখের জলে বুক ভাসছে চাষিদের। এক মাস আগেও প্রতি কেজির বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে তা নেমে এসেছে মাত্র ৪ টাকায়। এই অবস্থায় লবণ চাষিদের ঘরে ঘরে হতাশা দেখা দিয়েছে।
কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, লবণ মিল মালিকেরা সিন্ডিকেট করে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এমনকি উৎপাদিত লবণ কম দামে বিক্রিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে অনেকে উৎপাদিত লবণ বিক্রি না করে মাঠের গর্তে, গুদামে মজুদ করছেন। তবে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য যে তারা পাবেন সেই নিশ্চয়তা কেউ দিচ্ছেন না।
আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গতকাল বুধবার এই অভিযোগ করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শহীদুল্লাহ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া, কলিম উল্লাহ কলি, সোয়াইবুল ইসলাম সবুজ, ইউসুফ বদরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, প্রায় এক মাস আগেও চাষিরা মিল মালিকদের কাছে ৮০ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা লবণ বিক্রি করেছেন ৮৫০ টাকা থেকে ৮৭০ টাকায়। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে মিল মালিকেরা হঠাৎ করে লবণের দাম কমিয়ে দেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তারা প্রতিমণ লবণ কিনেছেন ১৭০ টাকা দরে। সে হিসাবে বর্তমানে প্রতি কেজি লবণের মূল্য প্রায় ৪ টাকা। অথচ সাধারণ ক্রেতারা এখনও বাজার থেকে প্রতি কেজি লবণ কিনে খাচ্ছেন ৩০-৩৫ টাকা দরে।
দেশের লবণশিল্প মাফিয়া সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে বলে মন্তব্য করেছেন চাষিরা। তারা অভিযোগ করেন, দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যাতে পূরণ না হয়, সেজন্য চাষিদের মাঝে পরিকল্পিতভাবে হতাশা তৈরি করা হচ্ছে। যাতে চাষিরা লবণের দাম না পেলে মাঠ ছেড়ে চলে যান। এতে লবণের ঘাটতি দেখা দেবে। তখন মিল মালিকেরা কম দামে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির সুযোগ পাবেন। দেশের সম্ভাবনাময় এই খাতকে বাঁচাতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক ইদ্রিচ আলী বলেন, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফ ও চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালীর উপকূলে শত বছর ধরে লবণ উৎপাদন হয়ে আসছে। চলতি মৌসুমে ৬২ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্টিক টন। চলতি মৌসুমে ১৫ নভেম্বর থেকে গত ১০ মার্চ পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮ লাখ মেট্টিক টন। তিনি বলেন, বর্তমানে লবণ উৎপাদনের পরিবেশ যথেষ্ট অনুকূলে রয়েছে। এতে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
পাঠকের মতামত: