ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

মা ও স্ত্রী’র সামনে সাংবাদিক নির্যাতনকারী চকরিয়ার সেই ইউএনও বদলি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: সাংবাদিক নির্যাতনের কেলেঙ্কারি গায়ে মেখে চকরিয়া থেকে বিদায় নিলেন ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ। নির্ধারিত কর্মস্থল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা পদে যোগদানের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে চকরিয়া ত্যাগ করেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে চকরিয়া উপজেলার সাহাবিল গ্রামের বাসিন্দা ছালেহ বিন নুর নামে একজন সংবাদকর্মীকে সদ্য বিদায়ী ইউএনও সৈয়দ শাসুল তাবরীজ তার কার্যালয়ে ডেকে মা ও স্ত্রীর সামনে অমানবিক প্রহার করেন। প্রহারের পর বিষযটি এলাকায় কাউকে না বলতে তাকে হুমকি দেন ইউএনও।

নির্যাতিত সংবাদকর্মী ছালেহ বিন নুর জানান, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী শান্তি পদ দে-এর বেশকিছু দুর্নীতির তথ্য পেয়ে প্রমাণ স্বরূপ তথ্য চিত্র মোবাইলে সংরক্ষণে রাখি।

এই বিষয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিলে তার জেরে গত ২৮ ডিসেম্বর আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার ফোনে কল আসে। ছালেহ বিন জানান, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) দেহরক্ষী মাহমুদুল হাসান নামে পরিচয় প্রদান করে এক ব্যক্তি আমাকে ইউএনও’র সাথে দেখা করতে বলেন। সেখানে গেলে ইউএনও অফিসে কোনো অঘটন ঘটতে পারে এমন ধারণা করে আমার ব্যবহৃত স্মার্টফোনটি কৌশলে বাসায় রেখে যাই, কিন্তু যা ধারণা করা হয়েছিল তাই ঘটেছে। অফিসে ডুকতে না ডুকতেই ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করেন। একপর্যায়ে আমার হাত-পা বেঁধে ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, দেহরক্ষী মাহমুদুল হাসান, শান্তি পদ-দে, সৌরভ, কাজল ও ইফাতসহ বেশ কয়েকজন আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। খবর পেয়ে মা ও স্ত্রী ঘটনাস্থলে এলে তাদের সামনে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন ইউএনও। এরপর তার দেহরক্ষী কালো লম্বা একটি লোহার পাইপ এনে আমাকে ফের মারতে শুরু করেন। আমার স্ত্রী এবং মা এই চিত্র দেখে ইউএনওর হাতে- পায়ে ধরলেও মন গলেনি। বরং নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে আমার মার কাছ থেকে ফোনটি নিয়ে ইউএনও আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসসহ ফোনের সকল তথ্যাদি ডিলেট করেন এবং ফোনটি নিয়ে নেন।

একই সাথে একটি অঙ্গীকারনামা প্রস্তুত করে তাতে আমাকে স্বাক্ষর দিতে বলেন, আমি স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইউএনও আমাকে ইয়াবাসহ নারী নির্যাতন, ইভটিজিংয়ের মিথ্যা মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দিবেন বলে হুমকি দেন। তাতেও রাজি না হওয়ায় আমাকে ইলেকট্রিক শর্ট দিয়ে অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।

আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছেড়ে দেয়া হয়। এমন ঘটনা স্থানীয় সাংবাদিকদের কেন জানাইনি জিজ্ঞেস করলে ছালেহ বিন নুর জানান, তাকে এলাকায় না থাকতে বলেছে ইউএনও। থাকলে এবং ঘটনা কাউকে বললে গ্রেফতার করে মোবাইল কোর্ট দিয়ে হাজতে পাঠাবে বলে হুমকি দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ইউএনও তাবরীজসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এদিকে নির্যাতনের ঘটনায় ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ সাংবাদিকদের বারবার বলে আসছেন, এ ধরণের কোনো ঘটনা সংবাদকর্মী ছালেহ বিন নুরের সাথে ঘটেনি। বরং স্থানীয় দফাদারের মেয়ের সাথে ইভটিজিং ঘটনা আড়াল করতে এসব বলছে ছালেহ বিন নুর। তবে এসব বলেও শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক নির্যাতনের কেলেঙ্কারি মাথায় নিয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে বিদায় নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার চকরিয়া ত্যাগ করেছেন তিনি।

 

পাঠকের মতামত: