আতিকুর রহমান মানিক :::
মহাগ্রন্হ আল-কোরআন নাজিলের মাস পবিত্র মাহে রমজান। রমজানের প্রথমার্ধে রহমতের ১০ দিনের ৭ম দিবস অতিবাহিত হচ্ছে আজ। পবিত্র এ মাসের সবকিছুই সু-শৃংখল। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কাছে রমজানের অন্যতম সওগাত তারাবীহ নামাজ। সালাতুত্ তারাবীহ সীমাহীন ফজীলতপূর্ণ একটি ইবাদাত। রমজান মাসে ইশার ওয়াক্তে ইশার ফরজ ও সুন্নাত নামাজ আদায়ের পর বিতির নামাজের আগে দু-দু রাকাত করে যে নামাজ পড়া হয়, তাকে তারাবীর নামাজ বলা হয়। তারাবী আরবী শব্দটি ‘তারবিহাতুন’ এর জমাঅা অর্থাৎ বহুবচন। এর আভিধানিক অর্থ এসেররাহাত বা আরাম করা। যেহেতু তারাবীর নামাজ আদায়কালে প্রতি চার রাকাত নামাজ পড়ার পরে, চার রাকাত নামাজ পড়ার সমপরিমাণ সময় বিলম্ব করা হয়। অর্থাৎ যেহেতু শরীয়তের বিধান হলো ধীরে ধীরে আরাম করে তারাবীর নামাজ আদায় করা, তাই এ নামাজকে তারাবীর নামাজ বলা হয়। সালাতুত্ তারাবীহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যদি কেউ তারাবীর নামাজ না পড়ে তাহলে সে অবশ্যই গুণাহ্গার হবে।
তারাবীর নামাজ কত রাকাত? এ বিষয়ে আমাদের সমাজে বেশ মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। কেউ পড়ে বিশ রাকাত, কেউ বার রাকাত আবার কেউ আট রাকাত। তবে এ সম্পর্কে প্রসিদ্ধ চার মায্হাবের চার ইমাম অর্থাৎ ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ:), ইমাম শাফঈ (রহ:), ইমাম মালেক (রহ:) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (রহ:)সহ অধিকাংশ মুজতাহিদ ও মুহাকক্কি এর অভিমত হল, তারাবীর নামাজ বিশ রাকাত। তবে এ সম্পর্কে ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও তাঁর অনুসারীগণ ভিন্নমত পোষণ করে থাকেন। তারাবীর নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত ও প্রত্যেকটা মতের পক্ষে ও বিপক্ষে বিস্তর আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তবে ইনসাফের কথা হল, হযরত ওমর (রা:) এর খেলাফতকালে বিপুল সংখ্যক সাহাবীর উপস্হিতিতে জামাতে বিশ রাকাত তারাবীর নামাজ পড়ার গ্রহণযোগ্য প্রমাণ রয়েছে এবং এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের এজমা প্রতিষ্ঠিত। আর এটাই আমাদের জন্য বড় দলীল। এছাড়া বর্তমানে পবিত্র কাবা শরীফ, মসজিদে নববী-সহ পৃথিবীর সকল জাতীয় মসজিদে তারাবী বিশ রাকাত পড়া হয়। তারাবীহ নামাজ সকলেরই পড়া উচিৎ। কারণ দীর্ঘ একটি বছর ঘুরে আবার রমজান মাসের সাক্ষাৎ নাও মিলতে পারে। তারাবীর নামাজের ফজীলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ (স:) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান-সহ সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে তারাবীর নামাজ পড়বে, তার পূর্ববর্তী সমস্তত গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী-মুসলিম) হযরত আবু হুরায়রা (রা:) এ বিষয়ে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুল (স:) বলতেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াব হাসিলের নিয়তে রমজানের ইবাদাত করবে (তারাবীর নামাজ পড়বে) তার পূর্ববর্তী সব গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মুসলিম) আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও তারাবীহর নামাজের উপকারীতা প্রমাণিত। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় বিভিন্ন আইটেম সহযোগে ভরপেট ইফতার, এরপর রাতের খাবার হজম করতে পাকস্হলীকে বেগ পেতে হয়। কিন্তু তারাবীহ নামাজের সময় বিশ রাকাত নামাজ আদায় করতে বিশবার রুকু ও চল্লিশবার সিজদা করতে হয়। এছাড়াও দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, যা একপ্রকার স্বাস্হ্যসম্মত ব্যায়ামও বটে। তাই তারাবীহ নামাজের দ্বারা হজমক্রিয়ায় ও মানবদেহের পাকস্হলীতে সহায়ক ভূমিকার সৃষ্টি হয়। আরেকটি ব্যাপার হল, অন্যান্য নামাজ সারাবছর পড়া যায় কিন্তু ইচ্ছা করলেও বছরের অন্যান্য সময় তারাবীহ নামাজ পড়া যায়না। এটা শুধু রমজান মাসের জন্যই খাস অর্থাৎ নির্ধারিত। তাই রমজান মাসে তারাবীহ নামাজের সুযোগ হাতছাড়া করা কারো উচিত নয়। অসীম ফজীলতপূর্ণ তারাবীহ নামাজে শরীক হওয়ার জন্য আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দিন, আমীন।
=====================
আতিকুর রহমান মানিক
(ফিশারীজ কনসালটেন্ট ও সংবাদকর্মী)
চীফ রিপোর্টার
দৈনিক আমাদের কক্সবাজার।
মুঠোফোন -০১৮১৮-০০০২২০
পাঠকের মতামত: