ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মালুমঘাটে সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ দোকান নির্মাণের অভিযোগ ইজারাদারের বিরুদ্ধে

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: ১৪২৮ বাংলা সনে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট বাজারটি সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে ইজারা পেয়েছিলেন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি স্থানীয় ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট ডুমখালী গ্রামের নুরুল আজমের ছেলে। সেবার সেলিম আয়কর ভ্যাটছাড়া ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বাজারটি ইজারা নিলেও পুরোবছর একদিকে করোনা সংক্রমণের কারণে বাজার না বসার কারণে কাঙ্খিত পরিমাণ টোল আদায় করতে পারেনি। অন্যদিকে শুধুমাত্র বাজারের নির্ধারিত স্থান থেকে কিছু পরিমাণ টোল আদায় করতে পারলেও বাজারের হাসঁ-মুরগী, মাছ বাজার এবং খালী জায়গা জোরপুর্বক দখলে নিয়ে অবৈধ দোকান নির্মাণ করা কতিপয় দখলবাজদের কবল থেকে সিংহভাগ টোল আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এ কারণে ইজারাদার সেলিম ১৪২৮ সনে বিপুল টাকার লোকসান দিয়েছেন। যদিও তিনি ওইবছর সরকারি ঘোষনা মোতাবেক সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে সমুদয় রাজস্ব উপজেলা প্রশাসনের কোষাগারে জমা দিয়েছেন। এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে ইজারাদার সেলিম অভিযুক্ত দখলবাজদের কবল থেকে বকেয়া টাকা টোল আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাজারটি ১৪২৯ বাংলা সনের জন্য ইজারা না দিতে প্রশাসনের কাছে বারবার লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

বিষয়ের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনপুর্বক বকেয়া টাকা টোল আদায়ে প্রশাসনিক সহযোগিতা চেয়ে ইজারাদার সেলিম গত ২৭ জানুয়ারী কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, ৭ ফেব্রুয়ারী চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সর্বশেষ ৭ মার্চ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আলাদাভাবে তিনটি লিখিত অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী বাজার ইজারাদার মোহাম্মদ সেলিম অভিযোগ তুলেছেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও বিষয়টির আলোকে কোনধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উল্টো উল্লেখিত সময়ের মধ্যে (গত ফেব্র“য়ারী মাসে) চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন উপজেলার সকল হাট বাজার ইজারা নিলামের আওতায় ১৪২৯ বাংলা সনের জন্য মালুমঘাট বাজারটি ইজারা দিতে দরপত্র আহবান করেন।

তিনি বলেন, আগের বছর বাজারটি ইজারা নিয়ে নিজের বিপুল টাকার লোকসান হলেও ১৪২৯ সনে তিনি বাজারটি পুনরায় ইজারা পাবেন এই আশা থেকে দরপত্রে অংশনেন। যদিও সেখানে সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে ডুমখালী গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে বাহাদুর মিয়া নতুন বছরের জন্য মালুমঘাট বাজারটি ইজারা পেয়েছেন।

আগের ইজারাদার সেলিমের অভিযোগ, অভিযুক্ত বাহাদুর মিয়া মুলত মালুমঘাট বাজারের সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে নির্মাণ করা অবৈধ দোকান তথা মার্কেটের মালিকানা পাকাপোক্ত করার জন্য এবছর বাজারটি সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে আবির্ভুত হয়ে ইজারা নিয়েছেন। নীতিমালা অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) তিনি বাজার রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব নেয়ার কথা থাকলেও তাঁর আগে থেকে নিজের লোক দিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের জিন্মি করে দুই থেকে তিনগুন হারে টোল আদায়ের কার্যক্রম শুরু করেছেন।

পাশাপাশি অভিযুক্ত বাহাদুর মিয়া বাজারের সরকারি বিপুল জায়গা নতুন করে দখলে নিয়ে বর্তমানে দিনরাত কাজ চালিয়ে অবৈধ দোকান নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন। ভুক্তভোগী মোহাম্মদ সেলিম বাজারের সরকারি জায়গা দখলে অবৈধ দোকান নির্মাণে আইনের বাধ্যবাধতা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশিত গেজেটমুলে ২০১৮ সালের হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) বিধিমালা এর খচড়া আদেশের ১৯(১) নং অধ্যাদেশে উল্লেখ্য আছে, হাট বাজারের সরকারি খাসজমি কেউ অবৈধভাবে দখলে রাখিলে বা এই আইনের বর্ণিত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে হাট বাজারের খাসজমির উপর কোন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করলে বা নির্মাণের উদ্যোগ নিলে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনাধিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা অনধিক একবছর বিনাশ্রম কারাদন্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

আগের ইজারাদার মোহাম্মদ সেলিম দাবি করেন, সরকারি বাজারের জায়গা দখলে নিয়ে আগে মার্কেট নির্মাণ এবং বর্তমানে নতুনভাবে জায়গা দখলে নিয়ে অবৈধ দোকান নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখলেও প্রশাসন বিষয়টির আলোকে অভিযুক্ত বাহাদুর মিয়া এবং তাঁর সহযোগিদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। এই অবস্থার কারণে মালুমঘাট বাজারের সরকারি জায়গা দিনদিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে। তাতে সরকারের বিশাল অঙ্কের ক্ষতিসাধন হচ্ছে। তাই জনস্বার্থে বিষয়টির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান চকরিয়া নিউজকে বলেন, সরকারি বাজারের জায়গায় সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেনা। সেখানে মালুমঘাট বাজার ইজারাদার যদি সেই কাজটি করে থাকেন, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

পাঠকের মতামত: