ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা ব্রিজ চরম ঝুঁকিতে

মিজবাউল হক, চকরিয়া :
দক্ষিণ অঞ্চলের সাথে সড়কপথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা ব্রিজ। গত কয়েক মাস ধরে ঝুকির মধ্যে যানবাহন চলাচল করছে এই ব্রিজ দিয়ে। ইতোমধ্যে ব্রিজের বিভিন্ন অংশ ও মাঝখানের একটি পিলার ফাটল দেখা দেয়ায় আরও বেশি ঝুকির মধ্যে যাতায়ত করতে হচ্ছে যানবাহন গুলোকে। যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুকি এড়াতে ব্রিজের নিচে বালির বস্তা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া দশটনের বেশি মালামাল পরিবহন না করতে নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগ। দ্রুত সময়ে সংস্কার বা মেরামত না করলে যে কোন মুহুর্তে ব্রিজটি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও যান চলাচলকারীরা।
জানা যায়, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে সড়ক পথে যাতায়তের অন্যতম ব্রিজ চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা ব্রিজ। ১৯৫৫ সালে মাতামুহুরী নদীর উপর নির্মিত হয় এ চিরিঙ্গা ব্রিজটি। চার বছরের বেশি সময় লেগেছে তিন’শ মিটার ব্রিজটি নির্মাণ করতে। মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। সেই থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ব্রিজটির উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে চরম ঝুকির মধ্যে। সম্প্রতি ব্রিজটির নিচে একটি পিলার ফাটল দেখা দিয়েছে। পিলারের উপরিভাগে প্রায় তিন ফুট মত লম্বা ফাটল ধরেছে। মধ্যখানের কিছু অংশ ঝরে গেছে। এ অবস্থায় চরম ঝুকির মধ্যে এ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করছে হাজার হাজার যানবাহন। এতে উদ্ভিগ্ন হয়ে পড়েছে জনসাধারণ। ব্রিজের মাঝখানে ভাঙ্গা অংশে বসানো আলাদা পাতাটন দিয়ে ৬-৭ বছর ধরে চলাচল করছে যানবাহন গুলো। বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে চলছে মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা ব্রিজটি। দ্রুত ব্রিজটি সংস্কার বা মেরামতের উদ্যোগ না নিলে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
এদিকে কয়েক সপ্তাহ ধরে মাতামুহুরী ব্রিজে গাড়ি উঠলেই কাপতে থাকে। তাছাড়া ব্রিজের গার্ডার গুলো ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। নানা সমস্যার মাঝে গাড়ি চলাচল করতে হচ্ছে চালকদের। গাড়ি চলাচলের সময় ব্রিজ কাপতে থাকায় গত ১৩এপ্রিল নিচে বালির বস্তা দেওয়া হয়েছে। সেখানে সড়ক ও জনপদ বিভাগের লোকজন দুদিন ধরে প্রায় এক হাজার বালির বস্তা দিয়েছে। এর উপর গাছ ও তক্তাও রয়েছে। কোনভাবে যান চলাচল করছে ব্রিজ দিয়ে। ব্রিজের দুই মাথায় লাল পতাকা দেওয়া হয়েছে। দশ টনের অধিক মালামাল পরিবহন করা যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কয়েকজন গাড়ির চালক বলেন, প্রতিদিন জীবনের ঝুকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এরপরও সংসারের কারণে গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছি। এরমধ্যে জীবনটাকে ঝুকি করেছেন মাতামুহুরী নদীর ব্রিজটি। উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে গেলে কম্পন দেয় ব্রিজটি। তাছাড় বিভিন্ন অংশে ফাটল রয়েছে। এখনো মেরামত করেনি। এতো বড় ব্রিজের নিচে বালির বস্তা দিয়ে কতটুকু রক্ষা হবে ?
স্থানীয় লোকজন জানান, সারাদেশ থেকে কক্সবাজারে যেতে মাতামুহুরী ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়ত করতে হয়। জেলা শহরের প্রায় ২২লাখ মানুষের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন ব্রিজটি। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার যানবাহন এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করছে। এছাড়া এই জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লবণ, মাছ, তরিতরকারি, সবজি, শুটকী, আসবাবপত্র যানবাহনে নিয়ে যেতে এ ব্রিজ হচ্ছে একমাত্র ভরসা। নানা কারণে মাতামুহুরী ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন শতশত যানবাহন, এ ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল করে। ফলে যে কোন মুহুর্তে দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসি।
চকরিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী আবু এহেসান আজিজুল মোস্তফা বলেন, মাতামুহুরী নদীর ব্রিজের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ব্রিজের কিছু গার্ডার ঝুকির মধ্যে রয়েছে। মাঝখানে যাতে কম্পন না হয় সেজন্য বালির বস্তা দেওয়া হয়েছে। দশটনের বেশি মালামাল পরিবহন না করতে বলা হয়েছে। বড় ধরণের সংস্কার না করার আগে এসব বালির বস্তা কিছুটা হলেও রক্ষা করবে বলে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: