ঢাকা,সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ই্‌উপি নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা, সহিংসতার শঙ্কা

শাহীন মাহমুদ রাসেল :: চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের কক্সবাজারে শীতের প্রভাব প্রথম ও প্রবলভাবে অনুভূত হয়। গত সপ্তাহ খানেক জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেল, গরম কাপড় এখনো গায়ে ওঠেনি কারও। তবে শীতের হাওয়া বইতে শুরু না করলেও ভোটের হাওয়া বেশ জোরেশোরেই বইছে জেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে।

খোঁজ নিজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের অগষ্টে। মার্চেই অনুষ্ঠিত হতে পারে ইউপি নির্বাচন। থাকতে পারে দলীয় প্রতীক। এরই প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে সব এলাকায় নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে-ময়দানে আগাম প্রচারে সরব হয়ে উঠেছেন। অনেকেই ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, উঠান বৈঠক ও কর্মী সমাবেশ শুরু করছেন। সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে হাজির হচ্ছেন। কেউ কেউ এলাকার ভোটারদের মাঝে দিচ্ছেন আগাম প্রতিশ্রুতি। এছাড়াও নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে ভোটের মাঠে নিজেদের অনুকূলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অনেকেই। প্রচার-প্রচারণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমানতালে চলছে। চায়ের দোকানে দোকানে বইছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে বিশ্লেষণ। নড়েচড়ে উঠেছে সদস্য পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

দরিদ্র ভোটারদের কাছে টানতেই সাহায্য-সহযোগিতা ও মানবিক আচরণের ছড়াছড়ি চলছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, দয়া, দোয়া ও আশীর্বাদ সংগ্রহের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। কে বেশি আগাতে পারেন তা নিয়ে রীতিমতো চলছে প্রতিযোগিতা। আবার ভোটাররাও নানা হিসাব-নিকাশ করছেন প্রার্থীদের আচরণের ধরণ নিয়ে। কোন প্রার্থী কত টাকা সহায়তা দিলেন, কারা সহায়তা পেল আর কারা পেল না তা নিয়েও চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

অন্যদিকে আসন্ন ইউপি নির্বাচন ঘিরে সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে সদরের কয়েকটি ইউনিয়ন। যারমধ্যে ঝিলংজা অন্যতম। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। নিজেদের প্রভাব জাহির করতে প্রতিনিয়ত গ্রুপ ভারী করে শক্তির জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা ও তাদের অনুসারীরা। এছাড়া হুমকি-পাল্টা হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। আর তা চলছে ফেসবুকের বিভিন্ন ফেক আইডির মাধ্যমে। এছাড়া অনেকে একে অপরকে কীভাবে ‘সাইজ’ করবেন সে পরিকল্পনাও করছেন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে রীতিমত উদ্বিগ্ন সাধারণ ভোটাররা।

সবচেয়ে বেশি তোড়জোড় চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে। কোনো কোনো ইউনিয়ন পদে চার-পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে নেমেছেন। দলীয় সমর্থন পেতে একই ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থীর পক্ষ থেকে চলছে নানারকম তদবির, রাজনৈতিক নেতার বাড়ীও সরগরম হয়ে উঠেছে। দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে ওইসব ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

স্থানীয় থেকে শুরু করে ছুটছেন ওপর মহলের হেভিওয়েট নেতাদের কাছে। জোর লবিং-গ্রুপিংয়ের পাশাপাশি ওইসব নেতাকে খুশি রাখতে প্রার্থীরা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।

এদিকে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জোরেশোরে মাঠে-ময়দানে দেখা গেলেও কক্সবাজারে প্রায় নিষ্ক্রিয় বিএনপি-জামায়াতের অধিকাংশ প্রার্থিতার ব্যাপারে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আলাপচারিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এ দুই রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

তবে মনোনয়ন পেতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও গোপনে চালাচ্ছেন তোড়জোড়। পুলিশি হয়রানি আর মামলার ভয়ে কেউ কেউ মাঠে নামার সাহসই পাচ্ছেন না বলে একাধিক সুত্র দাবী করেছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের মার্চ থেকে কয়েক ধাপে শুরু হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন। স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় পরিধির ইউপি নির্বাচন আয়োজনে ইতিমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতিও শুরু করেছে ইসি। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ইসি এই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করতে পারে। আইন অনুযায়ী, আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সব ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় ইসি।

জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় ৭১টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ৩২ জন। এছাড়া ১৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। গত ইউপি নির্বাচনে ১৫ জন চেয়ারম্যান পদে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন ৭ জন। জাতীয় পার্টি সমর্থিত ১ জন চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন বোর্ড (স্থানীয় সরকার) এর সিদ্ধান্তের লিখিত কিছু আমরা এখনো পাইনি। কেন্দ্র থেকে যেভাবে নির্দেশনা আসবে সবকিছু সেভাবে ই হবে।

এদিকে উন্নয়ন বঞ্চিত বিভিন্ন উপজেলার আশা-নিরাশার দোলাচলে সাধারণ ভোটার তাদের যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে শুরু করেছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ।

পাঠকের মতামত: