ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

মহাসড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

পর্যটননগরী কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার চকরিয়ায় মহাসড়কের একাধিক স্থানে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় গড়ে ওঠেছে। এতে পর্যটকসহ সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ।

পৌরসভার দুই প্রান্তে চিরিঙ্গা মাতামুহুরী ব্রিজের কাছে জম জম হাসপাতালের সামনে এবং শহীদ আবদুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায় ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা।

স্থানীয়রা জানান, ওই দুই জায়গা পার হতে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা পর্যটকসহ যাত্রীসাধারণের। সহসা ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় সরিয়ে নিয়ে পৌরশহরের গুরুত্বপূর্ণ ওই দুই স্থানকে দুর্গন্ধমুক্ত এবং পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জনসাধারণের।

চকরিয়া পৌরসভার বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, চকরিয়া পৌরসভা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। কিন্তু এই পৌরসভায় নাগরিক সুবিধার ছিটেফোঁটাও নেই। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারে নাজুক। নেই ময়লা-আবর্জনা ফেলার ডাম্পিং স্টেশন।

এতে একটু বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কে কয়েক ফুট পানি জমে থাকার পাশাপাশি যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে দুর্গন্ধময় শহরে পরিণত হয় চকরিয়া পৌরশহর।

এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলেছে, পৌরসভায় ইতোপূর্বে যাঁরা চেয়ারম্যান বা মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন, তাঁরা জনগণের সমস্যা লাঘবে এবং ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন ও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেননি।

এর ফলে বর্তমান পৌরসভাকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চকরিয়া পৌরশহরের চিরিঙ্গায় ঢুকতেই চোখে পড়ে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। অসহনীয় দুর্গন্ধে হাঁটাচলাও দায়!

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচলকারী এস আলম, সৌদিয়াসহ বিভিন্ন পরিবহনের যানবাহনের চালক ও হেলপাররা জানান, মহাসড়কের চকরিয়া মাতামুহুরী ব্রিজ পার হয়ে চিরিঙ্গায় ঢুকতেই মারাত্মক দুর্গন্ধে শ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো উপক্রম হয় যাত্রী-সাধারণের। এতে পর্যটকদের মাঝেও চকরিয়া সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে।

এস আলম পরিবহনের বাসচালক মনজুর আলম বলেন, ‘মাতামুহুরী ব্রিজ পার হয়ে পৌরশহর চিরিঙ্গা ঢুকতেই দুর্গন্ধে নাকাল হয়ে নাক-মুখ ঢেকে পার হতে হচ্ছে। কয়েকবছর ধরে এই অবস্থা চলছে। এর ওপর সড়কে যানজট সৃষ্টি হলেতো কোনো কথাই নেই। তখন ময়লা-আবর্জনার স্থানে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ’

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ও চকরিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার সাবেক কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গায় মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় গড়ে ওঠায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি দুর্গন্ধ ও বর্জ্য পোড়ানোর বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া প্রাণীকুলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেনের অভাব দেখা দিতে পারে। তাই এই ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় সরিয়ে নেওয়া জরুরি। ’

তবে আশার কথা জানিয়েছেন চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে হাত দিয়েছি। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে সচল করতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ড্রেন। এই কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলে চিরিঙ্গা আর জলাবদ্ধতার শিকার হবে না। ’

মেয়র জানান, চকরিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর চকরিয়া পৌরশহরের অনেক জায়গা পরিত্যক্ত এবং খালি ছিল। কিন্তু ইতোপূর্বে যাঁরা দায়িত্ব পালন করে গেছেন তাঁদের উদ্যোগ ছিল না ময়লা-আবর্জনা ফেলার একটি ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পৌরবাসী এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে পর্যটননগরী কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের।

মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য একটি ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে দুটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দুই জায়গার একটি পৌরসভার বাটাখালীস্থ মাতামুহুরী ব্রিজের আগে রুহুল কাদের মিয়ার বাড়ির কাছের পরিত্যক্ত ডোবা এবং অপরটি পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়ার মাতামুহুরী নদীর চর তথা আল্লাহর চর। ’

চকরিয়া পৌরসভার সচিব মাস-উদ মোর্শেদ জানান, একটা সময় গেছে চকরিয়া পৌরশহর ঘুরে একটি ডাম্পারও ভরতি হতো না ময়লা-আবর্জনায়। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা কয়েকগুণ হওয়ায় এখন দিনে দুই ট্রাক ও রাতে চার ট্রাক ময়লা-আবর্জনা হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে মহাসড়কের পাশেই অস্থায়ীভাবে এসব ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হচ্ছে। সচিব মাস-উদ মোর্শেদ বলেন, ‘গত ৮ অক্টোবর পৌরসভার মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের। এখন শুধু জায়গা নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: