উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
সারাদেশে চতুর্থ ধাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নির্যাতন, সম্প্রদায়ের অনেকের বিপুল পরিমাণ জমি দখলে রাখা, শিক্ষক নায়ারণ দাশ হত্যাকাণ্ডে মদদদান, পুরো পরিবারকে ভারত চলে যেতে বাধ্য করা, সাবেক পৌর কাউন্সিলর লক্ষ্মণ কান্তি দাশকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা ও এক্সেভেটর পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, তার পৈতৃক বাড়ির চারিদিকের মাটি কেটে পুকুর করা, বন উজাড়ের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া, সংরক্ষিত বনের ভেতর ইটভাটা স্থাপন, পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অভিযোগ থাকায় এবার তার হাতে নৌকা প্রতীক দেননি কেন্দ্রীয় মনোনয়ন মনোনয়ন বোর্ড।
দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মনোনয়ন না পাওয়ার কারণে উপজেলার সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন তার ছোট ভাই নাছির উদ্দিনকে চেয়ারম্যান পদে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন নৌকা ডোবাতে। এমনকি তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক হামিদ হোসেনকেও প্রার্থী করিয়েছেন ভাইয়ের পক্ষে এজেন্ট বাড়াতে। এই পরিস্থিতিতে গিয়াস মনোনয়ন না পেয়ে তার ভাইকে যেনতেনভাবে জিতিয়ে আনতে ভোটের মাঠে মরিয়া হয়ে উঠেছেন, ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছেন। এজন্য বাজেট করেছেন কোটি টাকার। নৌকার পক্ষে যারা কাজ করছেন, তাদেরকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে শাসাচ্ছেন, কঠিন পরিণতির হুমকি দিচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবচার থেকে শুরু করে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দদেরও গিয়াস নির্দেশ দিয়েছেন তার ছোট ভাই নাছির উদ্দিনের মোটর সাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে। এতে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ নৌকার বিরুদ্ধে মাঠে কাজ করা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।
ইউনিয়নটিতে এবার দলের মনোনয়ন তথা নৌকা প্রতীক পেয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন। বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত গিয়াসকে এবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন না দেওয়ায় পুরো উপজেলার মানুষ বেশ খুশি হন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ। কারণ গিয়াস ও তাঁর পাঁচ ভাইয়ের অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে পুরো ইউনিয়নের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হেলাল উদ্দিন চকরিয়া নিউজের কাছে অভিযোগ করেছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনে অভিযুক্ত এবং বন উজাড়ের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মনোনয়ন না পেয়ে খোদ তার ছোট ভাই নাছির উদ্দিন এবং ব্যক্তিগত গাড়িচালক হামিদ হোসেনকেও প্রার্থী করিয়েছেন নৌকার বিজয় ঠেকাতে।
হেলাল উদ্দিন বলেন, নৌকার পরাজয় নিশ্চিত করে আপন ভাইকে যেনতেনভাবে জেতাতে গিয়াস উদ্দিন বাজেট করেছেন কোটি টাকার। তিনি রাতে হেলমেট পড়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় গোপন বৈঠক করছেন। মসজিদে ঢুকিয়ে শপথ করাচ্ছেন অনেককে। ওইসময় সেখানে যারা উপস্থিত থাকছেন, তাদের কাউকে ছবিও তুলতে দিচ্ছেন না। এমনকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় অনেককে ফোন করে বাড়িতে ডেকে নিয়ে তার ভাইয়ের পক্ষে কাজ করতেও নির্দেশ দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এসব বিষয় উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ চকরিয়া উপজেলার সভাপতি রতন বরণ দাশ চকরিয়া নিউজকে বলেন, গিয়াস একজন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি। তিনি দীর্ঘসময় ধরে আওয়ামী লীগের মতো অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের বড় পদ দখলে রেখে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সর্বস্তরের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন। কেড়ে নিয়েছেন অনেকের জমিজমা। দিগরপানখালী গ্রামের শিক্ষক নারায়ণ দাশের পৈতৃক সম্পত্তি জবর-দখলে রাখা, তাকে (নারায়ণ) রাতের আঁধারে গুলি করে হত্যা করা এবং পুরো পরিবারককে ভারত চলে যেতে বাধ্য করেন গিয়াস। এবার তাকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন না দেওয়ায় সবচেয়ে খুশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। কিন্তু গিয়াস তার অপরাধ সাম্রাজ্য বলবৎ রাখতে এবার নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তার ছোট ভাই নাছিরের পক্ষে কাজ করতে এবং ভোট দিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সমাজভিত্তিক নেতাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। নৌকায় ভোট না দিতে হুমকিও দিচ্ছেন।
অবশ্য চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ (কক্সবাজার-১) জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ব্যক্তি কোনো বিষয় না, দলের প্রধান যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তার পক্ষে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে একযোগে প্রকাশ্যে মাঠে কাজ করতে হবে। কেন্দ্রের কঠোর এই নির্দেশনা যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্র এবং জেলা আওয়ামী লীগকে অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চকরিয়া নিউজকে জানিয়েছেন, ফাঁসিয়াখালীসহ অন্যান্য ইউনিয়নে যারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। যতো বড় নেতাই হউক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে এসব ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য অসংখ্যবার ফোন করা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে। কিন্তু তিনি ফোন না ধরায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অবশ্য দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়ন না পাওয়ার পর থেকে তিনি (গিয়াস) আগে থেকে পরিচিত কারো ফোনও ধরছেন না।
প্রসঙ্গত, উপজেলার আলোচিত ইউনিয়ন ফাঁসিয়াখালীতে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন প্রার্থী। তন্মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত সমর্থিত একক প্রার্থীর পাশাপাশি আরো ৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। কালের কন্ঠ
পাঠকের মতামত: