ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

ভূমি অধিগ্রহন শাখা থেকে ৫ সার্ভেয়ার ও ২ কানুনগো প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক ::  কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহন শাখায় কর্মরত পাঁচ সার্ভেয়ার ও এক কানুনগোকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে তাদের কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে প্রত্যাহার করে বিভিন্ন জেলায় পদায়ন করা হয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। কিন্তু রকমারী অনিয়মে জড়িত ভূৃমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন।

জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় সেবা প্রার্থীদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগে প্রত্যাহার হওয়া সার্ভেয়াররা হচ্ছেন মাসুদ রানা, জহিরুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন, কেশব লাল দে ও এমদদাুল হক। এদের মধ্যে কয়েকজনকে একটানা দুই বছর ধরে কক্সবাজারে কর্মরত থাকার কারনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

অন্য এক আদেশে কানুনগো হাবিব উল্লাহ খানকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে প্রত্যাহার করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কল সেন্টারে কাজ করার নিমিত্তে সংযুক্ত করা হয়। একই আদেশে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রেষনে থাকা নেপাল চন্দ্র ধরের প্রেষন আদেশ বাতিল করে তাকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মস্থল ন্যাস্ত করা হয়।

জানা যায়, মহেশখালীর বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি প্রকল্প, মেরিন ড্রাইভ রোড ও কক্সবাজার – দোহাজারি পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহন হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব জমি অধিগ্রহনে নানা কাজে সার্ভেয়ার ও কানুনগোরা অনিয়ম দুর্নীতি করে মানুষকে হয়রানি করে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব সার্ভেয়ার ও কানুনগোর কারনে জমির মালিকরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা ঘুষ ছাড়া কথাও বলেন না। তাদের কারনে অনেকে জমির প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। অনেকের চেক আটকা পড়েছে। তাদের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে অনেকের পায়ের জুতা ক্ষয় হয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত এসব অভিযোগ সেবা প্রার্থীদের। যে সব সার্ভেয়ার ও কানুনগোকে বদলী করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো: আশরাফুল আফসার জানান, যে সব সার্ভেয়ার ও কানুগোকে প্রত্যাহার করা হয়েছে তারা সকলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রেষনে কর্মরত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকায় তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।

কোন দুর্নীতি ও অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া হয়না। সেবা প্রার্থীদের হয়রানি না করে শতভাগ সেবা নিশ্চিত করে সবাইকে কাজ করতে হবে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিন্তু ভুক্তভোগীরা জানান, এসব অনিয়মের নেপথ্য ইন্ধনদাতা ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিপূরণ প্রত্যাশীরা জানান, দালালচক্রের দ্বারা পরিচালিত এ কর্মকর্তার সরকারী অফিসে সবসময় কয়েকজন দালাল অবস্হান করে। দাবীকৃত ঘুষ না পেয়ে অনেক ক্ষতিপূরন আবেদন ফাইল আটকে রেখেছেন আবু হাসনাত মোঃ শহীদুল হক। সদর উপজেলার ঈদগাঁও এলাকার এক ভুক্তভোগী জানান, অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ আবেদন জমা দিলে সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার অযথা সময়ক্ষেপন করে ও দালালের মাধ্যমে পার্সেন্টিজের নামে ঘুষ দাবী করে। এতে সম্মত না হওয়ায় অধিগ্রহনকৃত জমি পরিদর্শনের সময় আবেদনকারীর দখল পেলেও এলএও’র যোগশাজসে তা নথিতে লিপিবদ্ধ করেনি উক্ত সার্ভেয়ার। বরং পরে একাধিকবার শুনানীর নামে প্রহসন সৃষ্টি করে। সর্বশেষ গত এপ্রিলে শুনানীর নোটিশ দেয় এলএও আবু হাসনাত মোঃ শহীদুল হক। কিন্তু নোটিশে উল্লেখিত সময় সকাল ১১টায় উপস্হিত হলেও শুনানী করেনি এলএও। একই দিন দুপুরের পরে গোপনে অপর পক্ষকে ডেকে একতরফা শুনানী নেয়ার অভিযোগ করেন তিনি । অারেক ভুক্তভোগী বলেন এলএও হাসনাত ও বিতর্কিত এক সার্ভেয়ারের দাবীকৃত ঘুষ না দেয়ায় বিগত ৭/৮ মাস যাবৎ ক্ষতিপুরন পাননি।
যাবতীয় অনিয়মের মূলহোতা এলএও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হককে ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে প্রত্যাহার করা না হলে মানববন্ধনসহ অন্যান্য কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

পাঠকের মতামত: