কক্সবাজার সদরের বিমানবন্দরসংলগ্ন নাজিরারটেক, ফদনার ডেইল, কুতুবদিয়াপাড়ায় প্রায় অর্ধলাখ মানুষের বসবাস। যাদের বেশিরভাগই সাগরে জোয়ার, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে বাড়িঘর হারিয়ে জেলা সদরের এ এলাকায় এসে অস্থায়ী ঝুপড়ি, বস্তিঘর গড়ে বসবাস করছেন। একইভাবে উপকূলের গৃহহারা লক্ষাধিক মানুষ জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় সরকারি খাস জমি ও বন দখল করে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছেন। উদ্বাস্তুরা বলছেন, মূলত এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকা ও দুর্যোগের ফলে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণেই সাগরের জোয়ারের পানি বাড়িঘরে ঢুকে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যমতে, সর্বদক্ষিণের ইউনিয়ন শাহপরীর দ্বীপের বর্তমান জনসংখ্যা ৪০ হাজার। গত চার বছরে এ এলাকা ছেড়ে গেছে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ। বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপবাসীও চার বছর ধরে জোয়ার-ভাটার সঙ্গে বসবাস করছেন। অবস্থা এমনই ভয়াবহ যে, জোয়ার এলে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে হয়। এখন তারা আতঙ্কে আছেন, কখন বসতভিটাটুকু সমুদ্র গ্রাস করে নেয়। এ ছাড়া শাহপরীর দ্বীপের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে চার বছর।
সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ নির্মাণে একটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু কাজ শুরু করার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুর রহমান জানান, শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ নির্মাণে ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। তবে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না। এর কাজ সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানোর একটি প্রস্তাব রয়েছে। এ প্রস্তাবের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতেই কিছুটা দেরি হচ্ছে। একই অবস্থা দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নে। সেখানকার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গত তিন বছরে
দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার একর জমি সাগরে তলিয়ে গেছে। উদ্বাস্তু হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ। আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের সাগরপাড়ার এক হাজার ৩০০ মিটার ভাঙা বেড়িবাঁধ দীর্ঘ তিন বছর পর সম্প্রতি মেরামত হয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই গত পূর্ণিমার জোয়ারে আবার বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। একইভাবে জোয়ারের পানি ঢুকেছে হায়দারপাড়া, তেলিপাড়া, কাজীপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়।
এ ছাড়া আগামী বর্ষা মৌসুমে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের অর্ধলাখ মানুষও সাগরের জোয়ারে তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, কাকপাড়া অংশে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮ চেইন বেড়িবাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে রুহুল কাদের মানিক নামের এক ঠিকাদারকে। কিন্তু ছয় মাস ধরে তার খোঁজ নেই
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিক জানান, কাকপাড়া অংশের বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শুরু করার জন্য কয়েকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ওই ঠিকাদার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করবেন। অন্যথায় তার কার্যাদেশ বাতিল করে আবার টেন্ডার আহ্বান করা হবে।
পাঠকের মতামত: