ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

বৌদ্ধ পর্যটকরা বাংলাদেশে আসছে না কেন

বিবিসি বাংলা::
রামুতে গৌতম বুদ্ধের একটি বিশাল মূর্তি

গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি গন্তব্যে পরিণত করার কথা বলা হচ্ছে। সরকার এজন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে বৌদ্ধ ধর্মের কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাকে পরিচিত ও জনপ্রিয় করার উদ্যোগও নিয়েছে।

সেই সঙ্গে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা আবিষ্কারও হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পর্যটকের সংখ্যা বাড়েনি বলেই জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রশ্ন হতে পারে এর পেছনে কারণ কি। উত্তর খুঁজতে আমি গিয়েছিলাম ঢকার সবুজবাগের অতীশ দীপঙ্কর সড়কের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে। সেখানে দুপুরের খানিক আগে চলছে আহার-পূর্ব প্রার্থনা।

প্রার্থনা সভার একপাশে অপেক্ষমাণ তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে জানা গেল, দেশের প্রধান এই বৌদ্ধ মহাবিহারে প্রায় রোজই দেশ-বিদেশ থেকে অনেক দর্শনার্থী এবং পূণ্যার্থী আসেন। তবে এর মধ্যে বিদেশীদের সংখ্যা খুব কম।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে বৌদ্ধ ঐতিহ্য বিষয়ক দু’দিনের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে, বাংলাদেশে বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যভিত্তিক পর্যটন বিকাশের কথা বলেছিলেন।

এরপর ২০১৭ সালে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়েছিল বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মের স্থাপনাগুলোতে বিদেশী পর্যটক বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। কিন্তু এক বছর পরে বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটররা বলছেন, এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি।ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন টোয়াবের সহ-সভাপতি মোঃ রাফেউজ্জামান বলছিলেন, বৌদ্ধ ধর্মের পর্যটকদেরকে বেশিরভাগ ট্যুর অপারেটর এখনও আলাদা করে টার্গেট করে না।

“আমরা বৌদ্ধ, হিন্দু এবং মুসলমানদের জন্য আলাদা প্যাকেজ দেই। কিন্তু বৌদ্ধদের জন্যে আলাদা করে কিছু করি না। অথচ বৌদ্ধ প্রধান দেশগুলো থেকে যারা আসেন, তাদের সংখ্যা বললে আমরা ভালোই টুরিস্ট পাচ্ছি।”

বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ বাংলাদেশের পাহাড়পুরে অবস্থান করেছিলেন এবং সেখানে বৌদ্ধ স্তূপ রয়েছে। ফলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে বাংলাদেশ অন্যতম একটি পবিত্র স্থান। প্রতিবছর ভুটান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে পর্যটক আসেন। তারা নওগার পাহাড়পুর, বগুড়ার মহাস্থানগড়, কুমিল্লার শালবন বিহারসহ অল্প কয়েকটি পরিচিত জায়গাতেই বেশি যান।

অল্প পরিচিত বা নতুন কোন দর্শনীয় স্থানে যান না তারা। এর কারণ কি? পর্যটন বিষয়ক একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল হক বলছেন, এজন্য সরকারের কিছু উদ্যোগ নেবার প্রয়োজন ছিল, যা নেওয়া হয়নি।

“মার্কেটিং করা হয়নি বিষয়টি নিয়ে। সেই সঙ্গে পর্যটকদের ওসব জায়গায় যাবার জন্য অবকাঠামো, তারা কোথায় গিয়ে থাকবেন এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”

বাংলাদেশে প্রতিবছর ছয় লাখের মত বিদেশি পর্যটক আসেন। এদের মধ্যে ঠিক কতজন বেরাতে আসেন, আর কতজন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তার কোন সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। ফলে দেশে কোন ধর্মের পর্যটকের সংখ্যা কত তাও বলতে পারেনা সরকার।কিন্তু পরিকল্পনা ঘোষণার পর, সরকার কেন বৌদ্ধ পর্যটক আকর্ষণে সফল হতে পারছে না?

বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী মোঃ নাসির উদ্দিন বলছেন, এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উদ্যোগ ও সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে।

“যে যে মন্ত্রণালয়, যে যে বিভাগ এর সঙ্গে যুক্ত, সবার সংশ্লিষ্টতা অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু সবারই পরিকল্পনার মধ্যে ট্যুরিজমটা রাখতে হবে, এতে নতুন বাজেট বা কিছুই হয়তো লাগবে না।”

এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকায় আজ শুরু হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা, যেখানে এশিয়ার বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। অংশগ্রহণকারীদের অনেকে বলছিলেন, বাংলাদেশে পর্যটন খাতে আয় বাড়াতে হলে পরিকল্পনার কোন বিকল্প নাই।

পাঠকের মতামত: