নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
জ্বালানী তেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কয়েক দিনের মধ্যেই বেসামাল হয়ে পড়েছে বাজার পরিস্থিতি। এতে সংসার খরচ যোগাতে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছে নিম্ন এবং মধ্যবিত্তর আয়ের মানুষ। সবার দাবী কোর প্রকার আয় না বাড়লেও হঠাৎ করে অধিক হারে ব্যায় বেড়ে যাওয়াতে জীবন সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কক্সবাজার শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে,ব্রয়লার মুরগী কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৫০ টাকার মধ্যে, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৯০ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, এছাগা চালের বাজারও চরম উর্ধগতির দিকে এক সপ্তাহর মধ্যে প্রতি বস্তা চালের মূল্য ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে সে হিসাবে বাজারে বর্তমানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজী) মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ম ৩৪০০ টাকায়, সে হিসাবে প্রতি কেজী চালের মধ্যে মূল্য পড়ছে ৬৮ টাকা। এছাড়া একটু ভাল মাছ খাওয়ার কোন সুযোগ নেই, ঢেলা মলা মাছ ও এখন বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৩০০ টাকা, আর ইলিশ মাছ যেন শোনার হরিণ খুচরা বাজারে প্রতি কেজী ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। এছাড়া অন্যান্য মাছের কেজিও ৫০০ টাকার নীচে নেই। বাজারে তরিতরকারীর দাম বৃদ্ধিতো আছেই।
এদিকে বাজারের এমন পরিস্থিতিকে জীবন সংসার চালানো কঠিন বলে মন্তব্য করে শহরের পাহাড়তলী এলাকার মিস্ত্রি আবুল হোসেন বলেন, আমি একজন রাজ মিস্ত্রি, মাঝেমধ্যে বিদ্যূৎ মিস্ত্রির কাজও করি ঘরে ৩ ছেলে মেয়ে মা সহ ৫ জনের পরিবার। গত কয়েক দিন ধরে ভাল মাছ তরকারি বলতে খেতেই পারিনি,আগে ব্রয়লার মুরগী কিনতাম এখন সেটাও কিনতে পারছি না। কারন এক দেড় কেজি ব্রয়লার মুরগীর দামও আসে সাড়ে ৩৫০ টাকা, সাথে তেল মসলা তরিতরকারি কোথায় পাব।
শহরের একটি আবাসিক হোটেলের ক্যাশ কাউন্টারে চাকরীরত মিজানুর রহমান বলেন, আমার ৪২ বছর জীবনে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আর পড়িনি। কর্মক্ষেত্রেও বেতন বাড়ায় নি, তার উপর হঠাৎ করে সব কিছুর এভাবে দাম বাড়তে কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। এখন সারাদিন চিন্তায় থাকি কখন ঘরে ছেলেমেয়েদের মুখে দুবেলা খাবার তুলে দিতে পারবো। আর ক দিনই বা পারবো। সত্যি কথা বলতে খুবই কষ্টের মধ্যে আছি,যা বলতো পারছি না,সইতেও পারছি না।
মোহাম্মদ সৌরভ হোসেন নামের এক ট্যোবাকো কোম্পানীতে কর্মরত একজন বলেন, আমরা গাধার মত সারাদিন রাত পথে পথে হেটে কোম্পানীর মাল বিক্রি করি, মাস শেষে বেতন পায় ১৬ হাজার টাকা। এখন সেই টাকাই ম্যাচ খরচ, খাবার খরচ, ঔষধ, জামা কাপড় সহ কিভাবে চলবো সরকারকে একটু বুঝায় দিতে বলেন। অথচ আমি বিএ পাস করেছি অনেক জায়গায় ঘুরেও চাকরী পায়নি। শেষে এখন পথে পথে মার্কেটিংয়ের কাজ করছি কি করবো, পেটে ভাততো দিতে হবে?
শহরের টেকপাড়ার ওসমান গণি পুতু বলেন, দ্রব্যমুল্য নিয়ে কেউ কিছু বললে রাজাকার হয়ে যায়, সে জন্য আমার মনে হয় মানুষের নীরবে চোখের পানি ফেলে কিন্তু মুখ ফোটে বলেনা। বাজারে গিয়ে দেখেন মানুষ কি কষ্টে আছে, মাসে এক টাকা বাড়তি আয় বাড়েনি তাহলে মাসে অন্তত ৩/৪ হাজার টাকা বাড়তি খরচ আমি কিভাবে যোগাড় করবো ? এখানে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা ছাড়া ভাল আছে সেই কথা কেউ বলতে পারবেনা।
এদিকে শহরের বড় বাজার এলাকার চাল ব্যবসায়ি জসিম উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন টিটু, তরকারি ব্যবসায়ি মোহাম্মদ আলী, হার্ডওয়ার ব্যবসায়ি রাসেদুল মোস্তফা, মুরগী ব্যবসায়ি আল আমিন সহ অনেকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, নিজেরা ব্যবসা করে নিজেদের ঘরে ঠিকমত খাবার তুলে দিতে পারছি না। এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে। আর জ¦ালানী তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে সব কিছুর দাম বেড়েছে এখানে কারো কিছুই করার নেই।
পাঠকের মতামত: