কক্সবাজার প্রতিনিধি :: রোদ বৃষ্টি লুকোচুরি খেলায়, বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় কক্সবাজারে শেষ হলো রাখাইন সম্প্রদায়ের তিন মাসব্যাপী বর্ষা উৎসব।
সৈকতের শৈবাল পয়েন্ট সংলগ্ন ঝাউবাগানে দিনব্যাপী উৎসবে চলে আড্ডা,গানসহ নানা আনন্দায়োজন।
আজ শুক্রবার (২৮ জুলাই) দুপুরে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, এক পাশে উপচে পড়ছে সাগরের উত্তাল ঢেউ, অন্য পাশে সবুজ ঝাউবন। এরই মাঝে চলছে উৎসবের আনন্দ। কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি। এই লুকোচুরির মধ্যেই চলছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ষা আনন্দ।
প্রতি বছর মে মাসে এ উৎসব শুরু হলেও এ বছর (২১ এপ্রিল) শুক্রবার এ উৎসব শুরু হয় বলে জানান রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন।
জানা গেছে, প্রতি বছর বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান তিন মাসব্যাপী আষাঢ়ী পূর্ণিমার আগে (আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত) আড়াই থেকে তিন মাস সৈকতে এ উৎসব পালন করে থাকে রাখাইন সম্প্রদায়।
দিনভর আনন্দ উল্লাসের পর সন্ধ্যায় সমুদ্রস্নান শেষে উৎসবের ইতি টানে হাজারও মানুষ।
এটি রাখাইনদের কোনো সামাজিক বা ধর্মীয় উৎসব নয়, শুধু সবাই মিলে-মিশে বৃষ্টি এবং সাগরের জলে সিক্ত হয়ে মহাআনন্দে মেতে ওঠার জন্যই এ উৎসব বলে জানান রাখাইন যুবক কেংগ্রী রাখাইন।
সৈকতের ঝাউবাগানে অন্যান্যদের সঙ্গে গোল করে বসে মজার আড্ডায় মেতেছিল তারা। রাখাইন তরুণ-তরুণী উসিবু, মি. ছেন, মাছানু, নিলাসহ ১৫ জনের একটি দল।
উসিবু বলেন, “এ উৎসবের সঙ্গে ধর্মীয় উৎসবের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সংঘাত, হানাহানি ভুলে সবাই মিলে নেচে-গেয়ে আনন্দ উল্লাস করে সারাদিন মেতে থাকার জন্যই মূলত এ আয়োজন।”
বান্দরবান থেকে আসা মাছানু রাখাইন বলেন, “উৎসবে এলেই একান্তই নিজের মতো সময় কাটানো যায়। পুরনো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়। তাই প্রতি বছর এ উৎসবে আসি শুধু মনের টানে।”
উৎসবে এসে কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নে আরেক তরুণ বলেন, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে উৎসবে এসেছি। সবাই মিলে-মিশে বৃষ্টি এবং সাগরের জলে সিক্ত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠার জন্যই মূলত এখানে আসা।
রাখাইন নেত্রী মার্টিন টিন জানান, ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে এ উৎসবের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু মজা করার জন্য শতাব্দীকাল ধরে রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করে আসছে। প্রথম দিকে হিমছড়ির জঙ্গলে এ উৎসব পালন করা হতো এবং শুধু কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করতো। গত তিন দশক ধরে সমুদ্র আর প্রকৃতিকে আরও নিবিড়ভাবে কাছে পেতে সৈকতের ঝাউবাগানে পালন করা হচ্ছে মন রাঙানো এ বর্ষা উৎসব।
পাঠকের মতামত: