ইমাম খাইর, কক্সবাজার :: বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবায়ু উদ্বাস্তুর আশ্রয়ণ প্রকল্প কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে। ২৫৩ একর জমির প্রকল্পে পাঁচতলা বিশিষ্ট ১৩৯ টি ভবন নির্মিত হবে। প্রকল্পে পুনর্বাসন করা হচ্ছে ৪৪০৯ টি পরিবার। ইতোমধ্যে ২০ টি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এখানে সবচেয়ে আকর্ষণের বিষয়টি হচ্ছে, নির্মিত ২০টি অত্যাধুনিক ভবনের নামকরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই করেছেন। নামগুলো হচ্ছে-১) সাম্পান, ২) কেওড়া, ৩) রজনীগন্ধা, ৪) গন্ধরাজ, ৫) হাসনাহেনা, ৬) কামিনী, ৭) গুলমোহর, ৮) গোলাপ, ৯) সোনালী, ১০) নীলাম্বরী, ১১) ঝিনুক, ১২) কোরাল, ১৩) মুক্তা, ১৪) প্রবাল, ১৫) সোপান, ১৬) মনখালী, ১৭) শনখালী, ১৮) দোলনচাঁপা, ১৯) ইনানী, ২০) বাঁকখালী।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার জানিয়েছেন, আশ্রয়ণ কেন্দ্রে সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ১৯টি ভবনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আরো একটি সমাপ্তির পথে। কাল বৃহষ্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
উদ্বোধনের পরে প্রাথমিকভাবে ৬০০টি পরিবার যাবে। পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত ৪৪০৯টি পরিবার আশ্রয়ণ কেন্দ্রে স্থান পাবে। ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে উদ্বাস্তুদের জন্যই এই প্রকল্প। তারা স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে খুশি হলেও, দাবি জানিয়েছেন কর্মসংস্থানের।
জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারগুলোকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরীর আশ্বাস দিয়েছে সরকার। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, কক্সবাজারের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতা যেন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আবহমান বাংলার প্রকৃতি এবং কক্সবাজারের নানা স্থান নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কমতি নেই।
জানা গেছে, কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বিমান বন্দরে রূপাদানের জন্য এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্যে। খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাদের পুনর্বাসিত করা হচ্ছে তারা সবাই কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতি পাড়ার বাসিন্দা। লোকগুলো বিমানবন্দরের পাশের সরকারি খাস জমিতে বসবাস করে আসছিল ১৯৯১ সালের পর থেকে।
বিমান বন্দর সম্প্রসারণের কারণে ঘূর্ণিঝড়ে এসব ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে আশ্রয়হীন হয়ে না পড়ে তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এখানে ১০তলা বিশিষ্ট একটি ভবন হবে। যার নাম শেখ হাসিনা টাওয়ার।
খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে মূল শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ব্রিজ নির্মাণ ও সংযোগ সড়ক স্থাপনের। কস্তুরাঘাট এলাকা হয়ে বাঁকখালী নদীর উপর নির্মাণ করা হচ্ছে ৫৯৫.০০ মিটার ব্রিজ। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে বহুমুখী যাতায়াত ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে জেটিঘাট হতে অফিস পর্যন্ত এইচবিবি রাস্তা নির্মাণ, কৃষ্টের দোকান থেকে সালেহ আহমেদ কোম্পানী পর্যন্ত এইচবিবি রাস্তা নির্মাণ, আলহাজ্ জয়নাল আবেদীন সংযোগ সড়ক নির্মাণ।
৪৪০৯টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যাতে নিরাপদে পানি ব্যবহার করতে পারে তারও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এজন্য ৯৭২ লক্ষ টাকার বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে। যার লক্ষ্য পাম্প হাউস ও পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা পুনর্বাসিত হবে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যও নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। পুনর্বাসিত পরিবারকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, বিনোদনের জন্য পার্ক, স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
স্থানত্যাগ করতে যাওয়াদের অধিকাংশই মৎস্যজীবী বিধায় তাদের জীবিকার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আধুনিক শুটকি পল্লী নির্মাণে। যেটি নির্মিত হবে আধুনিক নগরায়ন পরিকল্পনায়। এই প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প হবে কক্সবাজার জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা।
পাঠকের মতামত: