ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বায়তুশ শরফ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ধর্মীয় শিক্ষা ও মানবসেবা মূলক কাজ করে যাচ্ছে -আল্লামা কুতুব উদ্দিন

Baitush-Sorof-1প্রেস বিজ্ঞপ্তি :
গতকাল ২১ মার্চ কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমী মাঠে ‘কবি বরণ, দেয়ালিকা উৎসব ও কবি সম্মাননা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচীব (মেলার কবি) আসাদ মান্নান বলেন, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার পেছনে মিশে আছে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত। স্বাধীনতার এই মাসে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমীর এই আয়োজন প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, বায়তুশ শরফ শিক্ষা, চিকিৎসা ও মানব সেবার যে আলো জ্বালিয়েছে তা নিভে যাবার মত নয়। তিনি মন্তব্য করে বলেন, দেশের প্রতিটি এলাকায় বায়তুশ শরফের মত অসাম্প্রদায়িক চেতনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে দেশ জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা থেকে মূুক্ত থাকবে।
পীর সাহেব বায়তুশ শরফ আল্লামা কুতুব উদ্দিন বলেন, কুরআনী জ্ঞানের আলো সূর্য্যরে আলোর চেয়েও জ্যোতির্ময় ও গতিময়। আল্লাহর মেহেরবাণীতে বায়তুশ শরফ সারাদেশে ১৮০ টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেছে, যার মধ্যমে মানুষের আত্ম শুদ্ধি, শিক্ষা , চিকিৎসা ও মানব সেবার কাজ হচ্ছে।
কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমী ক্যাম্পাসে সকাল ১০টায় শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠান স্থলে এসেই একাডেমী ক্যাম্পাসে সেট করা ৫৯ টি দেয়ালিকা উদ্বোধন করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়ালিকা উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচীব মেলার কবি আসাদ মান্নান। তিনি বায়তুশ শরফের পীর সাহেব আল্লামা কুতুব উদ্দিন ও জাতিসত্তার কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা কে নিয়ে দেয়ালিকা উদ্বোধন করেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার সরকারী কলেজের প্রিন্সিপ্যাল শিক্ষাবিদ প্রফেসর ফজলুল করিম, বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম ও অতিথিবৃন্দ।
দেয়ালিকা উদ্বোধনকালে কবি আসাদ মান্নান বলেন, ছোটকালে স্কুলে পড়ার সময় এভাবে দেয়ালিকা করার কথা তার মনে পড়েছে বায়তুশ শরফ ক্যাম্পাসে এসে। বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষা। ক্রমান্বয়ে মৌলবাদীরা এগুলো দখলে নিয়েছে। বায়তুশ শরফ অসামপ্রদায়িক চেতনায় ধর্মীয় শিক্ষা ও মানবসেবা মূলক কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বায়তুশ শরফের এই অসামপ্রদায়িক চেতনায় সারা দেশে ধর্মীয় শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে পারলে বাংলাদেশকে সামপ্রদায়িকতামূক্ত করা সম্ভব হবে। এবিষয়ে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একাডেমীর মাঠে সেট করা ৩৮টি শাখার ৫৯টি মনোরম দেয়ালিকা উদ্বোধন কালে তিনি বলেন, এটি সত্যিই বিরল। এগুলো অনন্য এবং সৃষ্টিশীল। তিনি এগুলো এ্যালবাম করে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন।
২১ ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষা দিবস, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮ তম জন্ম দিবস, ২৫ মার্চ আজকের মহিরুহ বায়তুশ শরফের স্বপ্নদ্রষ্টা হাদিয়ে জামান মুজাদ্দেদে মিল্লাত মরহুম আল্লামা আব্দুল জব্বার রহঃ এর ১৯ তম ইন্তেকাল বার্ষিকী, ২১ মার্চ কবি বরণ ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে এই দেয়ালিকা গুলো প্রকাশ করা হয়।
ডজন খানেক দেশী বিদেশী কবিদের এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বায়তুশ শরফের পীর সাহেব আল্লামা কুতুব উদ্দিন (ম জি আ)।
সভাপতির বক্তব্যে পীর সাহেব বায়তুশ শরফ আল্লামা কুতুব উদ্দিন বলেন, আল্লাহর মেহেরবাণীতে বায়তুশ শরফ সারাদেশে ১৮০ টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেছে। যার মাধ্যমে মানুষের আত্ম শুদ্ধি, শিক্ষা , চিকিৎসা ও মানব সেবার কাজ হচ্ছে। অবশ্যই কুরআনী শিক্ষার অলো সূর্য্যরে আলোর চেয়েও অনেক গতিময় ও জ্যোতির্ময়।
সংবর্ধিত অতিথি কক্সবাজার সরকারী কলেজের প্রিন্সিপ্যাল প্রফেসর ফজলুল করিম বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ওপার্বত্য জেলা সহ বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বায়তুশ শরফ থেকে শিক্ষা চিকিৎসা ও মানব সেবার ক্ষেত্রে উপকৃত হচ্ছে। একই সাথে ৫৯টি দেয়ালিকা প্রকাশ অবশ্যই নজিরবিহীন। এটি শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের পরিচায়ক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব এম এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, পীর মুর্শিদের রূহানী তওয়াজ্জুর বদৌলতে বায়তুশ শরফের বিশাল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মসজিদ, মাদরাসা, হেফজ খানা, এতিম খানা, জব্বারিয়া একাডেমী, ও বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল দেশের দক্ষিনাঞ্চলের এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদমুক্ত এই প্রতিষ্ঠান মানুষের আধ্যাত্মিক সংশোধন ও শিক্ষা-চিকিৎসা এবং মানব সেবার অসাম্প্রদায়িক এক অনন্য উদাহরণ।
সংবর্ধিত অতিথি জাতিসত্তার কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা, তাঁকে সংবর্ধিত করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া এবং বায়তুশ শরফ কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি উপস্থিত সহ¯্র শিক্ষার্থীদেরকে ছড়ায় ছড়ায় ‘আলোর হরফ বায়তুশ শরফ, নূরের হরফ বায়তুশ শরফ’ বায়তুশ শরফ বায়তুশ শরফ’ শুনিয়ে মুগ্ধ করেন।
কবিতা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক কবি ফরিদ আহমদ দুলাল বলেন, বায়তুশ শরফ একটি ব্যতিক্রম প্রতিষ্ঠান। ৬০ দশকে তিনি স্কুল জীবনে দেয়াল পত্রিকা করেছিলেন। বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমীতে একসাথে ৫৯ টি দেয়ালিকা প্রকাশ একটি অনন্য বিষয়। এটি বাংলা সাহিত্যের অগ্রগতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কবি নিশাত খান বলেন, এখানে জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দেয়া হয়না। এখানে সত্যিকার মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত ও পুরস্কৃত জন বহুমাত্রিক লেখক কবি কামরুল হাসানকে সম্মাননা ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধিত করা হয়। সংবর্ধিত ও পুরস্কৃত জন বহুমাত্রিক লেখক কবি কামরুল হাসান তার বক্তৃতায় বলেন, বায়তুশ শরফের মহাপরিচালক শিক্ষাবিদ এম এম সিরাজুল ইসলামের সহযোগিতা ও প্রেরণায় তিনি আজ সম্মানিত ও সংবর্ধিত। এজন্য তিনি বায়তুশ শরফের প্রাণ পুরষ আল্লামা কুতুব উদ্দিন (ম জি আ) এবং মহাপরিচালক ও বায়তুশ শরফের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বক্তব্য রাখেন ভারতের কবি শাকিল আহমদ, নেপালের কবি সুবাস প্যারাজুলি ও কবি কিরণ ভট্ট। কবি বরণে নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন ছলা উদ্দিন বেলাল।
অন্ষ্ঠুানে পীর সাহেব বায়তুশ শরফ আল্লামা কুতুব উদ্দিন (ম জি আ) কে কবিতা বাংলার পক্ষ থেকে, প্রধান অতিথি আসাদ মান্নানকে, জাতিসত্তার কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদাকে ও কক্সবাজার কলেজের প্রিন্সিপ্যাল শিক্ষাবিদ প্রফেসর ফজলুল করিমকে বায়তুশ শরফের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।
বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলামকে কবিতা বাংলার পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ছৈয়দ করিম। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন, শহীদুল ইসলাম, শিক্ষক নিজামুল বাহার ও ইমতিয়াজ হাসান।

পাঠকের মতামত: