ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ

নিউজ ডেস্ক :::rohinga

লোক চক্ষুর আড়ালে কক্সবাজার দক্ষিন বন বিভাগের রিজার্ভ উখিয়ার ঘাট গভীর বনাঞ্চলের বালুখালী বন ভূমিতে গড়ে তোলা রোহিঙ্গা বস্তি নিয়ে জনমনে নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের জহিঙ্গারা এখানে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের আবাসন, পয়ঃ নিস্কাষন, স্যানিটেশন, সুপের পানি, মসজিদ মাদ্রাসা নির্মান সহ বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সামগ্রী বিতরন চালাচ্ছে অবাধে। এসব ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা স্বতেও স্থানীয় প্রশাসনের অজ্ঞাত শৈতিলতায় নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে এগুলো হচ্ছে এখানে।
উখিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিঃমিঃ দুরে বালুখালী পানবাজার থেকে প্রায় ২কিঃমিঃ পশ্চিমে বন বিভাগের গভীর বনাঞ্চলে সৃজিত সামাজিক বনায়ন উজাড় করে সম্প্রতি পড়ে তোলা হচ্ছে এ রোহিঙ্গা বস্তি। উক্ত বস্তিতে যাতায়াতের একমাত্র পথ বালুখালী পানবাজার থেকে কিছু অংশ ইট বিছানো গ্রামীন রাস্তা, বাকী অংশে কোন রাস্তা নেই। এ পথটুকু হেঁটেই যাতায়াত করতে হয় বস্তি পর্যন্ত। পক্ষান্তরে উখিয়ার অপর রোহিঙ্গা ক্যাম্প কুতুপালংয়ের অবস্থান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫কিঃমিঃ দুরে এবং কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক সংলগ্ন। এখানে যে কারো সহজে যাতায়াত করা সম্ভব। কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরের তত্বাবধানের জন্য সরকারের একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে রয়েছে সশস্ত্র পুলিশ, আনসার সদস্যরা।
এছাড়া ও কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির ও বস্তির কয়েকশত গজের ব্যবধানে রয়েছে কচুবনিয়া বা উত্তর ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি ও উখিয়া টিভি উপকেন্দ্র রয়েছে পুলিশ বাহিনী। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির ও বস্তিতে বর্তমানে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অবস্থান। এটি মোটামুটি কিছুটা সরকারের নিয়ন্ত্রনে থাকার পরও এখানে অবৈধ অস্ত্র, ইয়াবা সহ সব ধরনের মাদকের কারবার ও অসামাজিক কার্যকলাপ সহ জঙ্গিদের আনা গোনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু যাতায়াত ও নিরাপত্তা বিচ্ছিন্ন বালুখালীর গহীন বনাঞ্চলে অতি উৎসাহী হয়ে স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়নের জনৈক জনপ্রতিনিধি ও তার মাদক পাচারকারী বাহিনী অজ্ঞাত উৎসের অর্থায়নে নতুন ভাবে আরও একটি রোহিঙ্গা বস্তি স্থাপনে স্থানীয় লোকজন, প্রশাসন ও দায়িত্বশীল মহল উদ্বিগ্ন।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ফজলুল কাদের ভুট্রো, বালুখালী এলাকার প্রবীন মুরুব্বী রওশন আলী, উখিয়ার উপজেলা বিএনপি নেতা জাফর ইকবাল, উখিয়া ছাত্রলীগ নেতা মোঃ ইব্রাহীম, সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সচেতন স্থানীয় লোকজন বালুখালীর পাহাড়ী জঙ্গলে রোহিঙ্গা বস্তি স্থাপনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পাশ্ববর্তী কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারনে এমনিতে কিশোর-যুবক, অনেক বিবাহিত/অবিবাহিত পুরুষদের নিয়ে নানা ভাবে সামাজিক, পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সে গুলোর কারনে অনেক পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছে, যা সমাজের সর্বত্র প্রভাব পড়ছে। বালুখালীর রোহিঙ্গা বস্তিকে ঘিরে ইতি মধ্যে স্থানীয় কিশোর- যুবকদের যাতায়াত বাড়ছে। বস্তি স্থাপনের ভূমিকা পালনকারীরা এলাকায় চিহ্নিত ইয়াবা পাচারকারী সন্ত্রাসী। দেশ বিদেশের অজ্ঞাত উৎসের অর্থে রোহিঙ্গা বস্তিটিকে বালুখালীতে স্থায়ী করতে পারলে এখানে ঐ চক্রের দুইটি উদ্দেশ্যে সফল হবে। তম্মধ্যে ইয়াবা পাচার ও  মজুদের নিরাপদ আস্তানা, দেশী বিদেশী জঙ্গিদের ঘাঁটিতে পরিনত করে স্থানীয় কিশোর ও যুবক সমাজকে ধ্বংস করাই তাদের মূল লক্ষ বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয় ভাবে গণ অসন্তোষের মাঝেও সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বালুখালীর রোহিঙ্গা বস্তি সরকারের পরিকল্পনার অংশ ঠেঙ্গার চরে স্থানান্তর বিরোধী নানা চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে উক্ত মহল। তাদের অভিমত অন্যত্র স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত বালুখালীর রোহিঙ্গা বস্তি কুতুপালংয়ে সংযুক্ত করলে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব। পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অত্র ইউনিয়নে বালুখালী বনাঞ্চল দখল করে রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে তোলাকে ভয়ংকর আখ্যায়িত করে অদুর ভবিষ্যতে স্থানীয় যুবক ও কিশোরদের সামাজিক অবস্থা, ইয়াবা ও উগ্রপন্থীদের কবল থেকে রক্ষা করতে এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও সংস্থাগুলোকে স্থানীয় গন অসন্তোষ ও উদ্বেগের বিষয়গুলো এবং সমূহ ক্ষতির দিকগুলো তোলে ধরা হচ্ছে। যাতে বালুখালীতে নতুন ভাবে রোহিঙ্গা বস্তির বিস্তৃতি ঘটতে না পারে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় ধরে দাবি করে আসছি মিয়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিকরা এ দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। যেটির প্রমাণ গত বছর টেকনাফের নয়া পাড়া শরনার্থী শিবিরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যকে হত্যা করে বিপুল পরিমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণের গোলাবারুদ লুট করেছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। যা সম্প্রতি দীর্ঘ পরিশ্রমের জন্য র‌্যাব বাহিনী উদ্ধার করেছে ও জড়িতদের আকট করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের অত্যাচারে এলাকার লোকজন সর্বদা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তাই এখান থেকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের টেঙ্গার চর বা অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি জানান তিনি। উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল খায়ের বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সব সময় দুঃচিন্তায় থাকতে হয়। কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি মোটামুটি অনেকটা নিয়ন্ত্রনে থাকলেও বালুখালী গভীর বনাঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠা নতুন রোহিঙ্গা বস্তি এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা নিয়ে উদ্বেগে থাকতে হয় বলে তিনি জানান। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, বর্তশান রোহিঙ্গা শরনার্থী সমস্যা জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বিষয় বিধায় উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা ছাড়া কোন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। তা ছাড়া অনুমোদন বিহীন ত্রান সামগ্রী বিতরন ও স্থাপনা নির্মান বেআইনি। এব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

পাঠকের মতামত: