ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

বাজারে বিক্রি হচ্ছে মানহীন ভিটামিন

কক্সবাজার প্রতিনিধি :::: 3
কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন ফার্মেসীতে বিক্রি হচ্ছে মানহীন ভিটামিন। এসব ভিটামিনের মান নিয়ে সন্দেহ আছে খোদ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।  তাদের দাবী কিছু ভাল কোম্পানী ছাড়া বাজারে এমন সব ভিটামিন দেখা গেছে যেগুলো আসলেই গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। এছাড়া রোগিদেরও এসব ভিটামিন খেয়ে সুস্থতার চেয়ে উল্টো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। আর সাধারণ মানুষ ও অনেকটা না জেনেই ব্যবহার করছে এসব মানহীন ভিটামিন। সচেতন মহলের দাবী ঔষধ তত্ত্বাবধায়কদের ম্যানেজ করে কিছু অখ্যাত কোম্পানী বাজারে এসব ভিটামিন ছড়িয়ে দিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
সদর উপজেলার চৌফলদন্ডি এলাকার মৌলভী আবদুল মালেক বলেন, কিছুদিন আগে আমি শারীরিক অসুস্থতার কারনে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখালে আমার শারীরিক দূর্বলতার জন্য তিনি অন্যান্য ঔষধের পাশাপাশি দুইটি ভিটামিনও দেয়। আমি হাসপাতাল সড়কের একটি দোকান থেকে ঔষধ কিনে ১০/১৫ দিন খাওয়ার পরে দেখছি আমি মুটিয়ে যাচ্ছি অর্থাৎ আমার ওজন বেড়ে যাচ্ছে। আর সব সময় ঘুমঘুম ভাব থাকে। পরে আমি স্থানিয় এক চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে তিনি বলেন, আপনি ভিটামিন খাওয়া বন্ধ করে দেন। তার কথা অনুযায়ী আমি ভিটামিন খাওয়া বন্ধ করে দিলে দেখছি আমার বেশ ভালই লাগছে। পরে যাচাই বাছাই করে জানতে পারলাম বাজারে বিক্রি হওয়া এসব ভিটামিন কোন কাজের চেয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি করে। আসলে এসব ভিটামিন খুবই নি¤œমানের। তাই এগুলো রোগিদের উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে শহরের মা শিশু কল্যাণ কেন্দ্র  থেকে বের হওয়ার সময় ঘোনারপাড়া এলাকার মনুজমন আরা বেগম নামের এক মহিলা বলেন, আমি এখানকার ডাক্তারের পরামর্শে শেভরনের নিচের ফার্মেসী থেকে ১৮০ টাকা দিয়ে ভিটামিনের একটি কৌটা কিনে নিয়ে গিয়ে নিয়মিত খাওয়ার পর কোন ফলাফল পায় নি। পরের বার ডাক্তার দেখানোর পর সেই ভিটামিন ডাক্তারকে দেখালে তিনি বলেন আমিতো এই ভিটামিন আপনাকে দেইনি, ফার্মেসীতে আপনাকে ভাল কোম্পানীর ভিটামিনের বদলে নি¤œমানের কোম্পানীর ভিটামিন দিয়েছে। তাই আপনার দূর্বলতা কমছে না। তিনি বলেন, আসলে বাজারে বেশ আজেবাজে কোম্পানীর ভিটামিন বের হয়েছে যা খাওয়ার চেয়ে না খাওয়া ভাল।
এভাবে আরো বেশ কয়েকজন রোগি বাজারে চলমান ভিটামিনের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, তাদের দাবী বাজারে ভিটামিনের নামে রোগিদের সাথে প্রতারনা করছে ফার্মেসীগুলো। এ ব্যাপারে পানবাজার সড়কের বেশ কয়েকটি ফার্মেসীতে গিয়ে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন বর্তমানে প্রায় ৭০/৮০ কোম্পানীর ভিটামিন চালু আছে। আমাদের মতে এখানে সর্বোচ্চ ২০ টি কোম্পানীর ঔষধ বা ভিটামিন মানসম্মত বাকিগুলো আসলেই নি¤œ মানের এগুলো কৌটার অবস্থা দেখলেই বুঝা যায়। তাদের দাবী মূলত ডাক্তাররা এসব ভিটামিন লিখে বলেই এসব নি¤œমানের ভিটামিন চালু আছে। সেসব কোম্পানীর সাথে কিছু কিছু ডাক্তারের চুক্তি থাকে তারাই এসব নি¤œমানের ঔষধ লিখে। অবশ্য মানুষ বুঝে ঔষধ লিখে।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ নুরুল আলম বলেন, এটা আসলে বলা ঠিক না। তার পরও মানুষের সচেতনতার জন্য বলা ডাক্তাররা প্রেসক্রিপসনে যে ঔষধ লিখে দেয় সেটাই ফার্মেসীতে দিয়েছে কিনা সেটা ধারনা থাকা দরকার। আর বাজারে আসলেই কিছু ভিটামিনে নাম শুনা যায় সে একটু প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা রোগির অবস্থা বুঝে ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি বা যে কোন কারনে ভিটামিন দিয়ে থাকি। মানুষ আস্থা নিয়ে টাকা দিয়ে সেই ভিটামিন খেয়ে যদি উপকার না পায় সেটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমার মতে ড্রাগ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের আরো একটু ভূমিকা রাখা দরকার।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ ফরিদুল আলম বলেন, যেকোন ঔষধ মানুষের জীবন মৃত্যুর মাধ্যম সেটা নিয়ে সামান্যতম অবহেলার কোন সুযোগ নেই। আর ভিটামিন আরো গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে যদি নি¤œমানের ভিটামিন মানুষকে খাওয়ানো হয় সেটা খুবই অন্যায় আমার মতে ঔষধ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ আসাটাও কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা আমরাও এ দায় এড়াতে পারি না।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনু বলেন, আসলে ঔষধের মান নির্ণয় করা আমাদের কাজ না। সেটা ড্রাগ কর্তৃপক্ষের কাজ। তবে আমার কাছে ভিটামিনের মান নিয়ে কেউ কোন দিন অভিযোগ করেনি।

পাঠকের মতামত: