বাংলাদেশ-মিয়ানমার দু’দেশে উৎপাদিত পণ্যের পসরা সাজিয়ে প্রতিবছর বাণিজ্য মেলার আয়োজন করবে। উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা সরকারের সহযোগিতায় যৌথভাবে পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত সীমান্ত বাণিজ্য মেলার আয়োজন করবে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার দু’দেশের সম্পর্ক আরও উন্নত করতে প্রতি ২-৩মাস পর পর ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের মধ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্টিত হবে। এতে সীমান্ত বাণিজ্য চাঙ্গা করে তুলতে কি কি করনীয় এবং সমস্যা দেখা গেলে তা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ বের করা সম্ভব হবে। মিয়ানমারের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে তাদের একটি বন্ধুপ্রতিম দেশ। তাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণ বিভিন্ন উৎপাদিত পণ্য রয়েছে। তবে সে পরিমাণ ক্রেতা নেই। ইয়াঙ্গুন রয়েছে প্রায় ৮’শ মাইল দূরে। বাংলাদেশ তথা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা পাঠালে তারা (মিয়ানমার) অগ্রাধিকার দেবে। যেহেতু একসময় চট্টগ্রামের সঙ্গে মিয়ানমারের যোগাযোগ ছিল অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়ে রাখাইন এ্যাস্টেট চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্টিজের চেয়ারম্যান টিন অং উ বলেন, এখন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যত পণ্য কিনবেন, রাখাইন রাজ্যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তত উৎপাদন বাড়বে। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে জানান তিনি। সোমবার মিয়ানমারের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এদেশের ব্যবসায়ীদের কক্সবাজারে হোটেল ওশান প্রাডাইজের শাহ সুজা হল রুমে অনুষ্টিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনায় এসব বক্তব্য উঠে আসে। রাখাইন প্রদেশের ৯ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক দলের নেতৃত্ব দেন রাখাইন এ্যাস্টেট চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান টিন অং উ। সহযোগিতায় ছিলেন, সিটুয়েস্থ (আকিয়াব) বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের কাউন্সিল ও হেড অফ মিশন শাহ আলম খোকন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহসভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য বৈঠকে প্রধান অথিতি হিসেবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন কক্সবাজারে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ বিষয়ক কি-নোট উপস্থাপন করেন। সভায় দু’দেশের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা মতে তালিকা প্রেরণ এবং ওসব পণ্য আমদানি-রফতানি করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মিয়ানমার রাইখাইন প্রদেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়ীদের সীমান্ত বাণিজ্য উন্নয়ন শীর্ষক মতবিনিময় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহসভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আন্তরিক বৈদেশিক কুটনৈতিক প্রচেষ্টার ফসল আজকের দ্বি-পাক্ষিক এ বৈঠক। বৈঠকের মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সু-সম্পর্ক ও আস্থা সৃষ্টির পাশাপাশি সীমান্ত বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ ঘটানো। মিয়ানমারে বাংলাদেশী পণ্যের নতুন বাজার এবং চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে উন্নীত করা। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা, দুই দেশের স্থলবন্দরের সুবিধা বৃদ্ধি করণ, ইমিগ্রেশন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ, আমদানি-রফতানির মূল্য পরিশোধে ব্যাংক ব্যবস্থা, পর্যটন ও সীমান্ত হাঁটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পারস্পরিক সফল আলোচনা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ, কাঠ, সিমেন্ট, স্টিল, ইলেকট্রিক লাইট, ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রী, আতপ চাল ও গার্মেন্টস্ সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফতানির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে নির্বিঘেœ ব্যবসা পরিচালনা এবং বাণিজ্যিক ঘাটতি কমানোই হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রধান লক্ষ্য। আমদানি-রফতানি সহজীকরণসহ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে উভয় দেশের আঞ্চলিক পর্যায়ের ভূমিকার ব্যাপারেও উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ রয়েছে বলে জানান তিনি। সোমবার সকাল ১০টায় কলাতলীর তারকা মানের হোটেল ওশান প্যারাডাইজের শাহ সোজা হল-এ আরাকান রাজ্যের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল, সরকারী কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ মোট ৬৫জন অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রতি মাসে টেকনাফের সুবিধাজনক স্থান ও মিয়ানমারের মংডু শহরের সীমান্তে বাজার বসানো, সীমান্ত বন্দর সম্প্রসারণ, ব্যবসার উন্নয়ন বিষয়ের পাশাপাশি পর্যটনের বিষয়েও ফলপ্রসং আলোচনা হয়েছে। আগাফম নবেম্বরে মিয়ানমারে এ বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। সভা শেষে মিয়ানমারের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা রামু পরিদর্শনে যান। এছাড়া মঙ্গলবার চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
পাঠকের মতামত: