ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

বাঁকখালী নদীতে ড্রেজারে বালি উত্তোলন, মুহুর্তেই বিলীণের শংকায় দুটি গ্রাম

নিউজ ডেস্ক :: কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর সদরের খরুলিয়া ও রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি অংশে সড়ক ও দু’পাশের ফসলি জমির ১০-২০ গজের মধ্যে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ড্রেজার দিয়ে রাত-দিন বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে প্রভাবশালী ও পেশাদার বালু খেকোরা।

এতে নদীর দু’পাড়ে ইতোমধ্যে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।ফলে নদীগর্ভে ফসলি জমি, সড়ক ও গ্রামীণ বাড়ি-ঘর বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
অথচ, ২০১০ সালের বালু উত্তোলন নীতিমালা অনুযায়ী যন্ত্রচালিত মেশিন দ্বারা ড্রেজিং পদ্ধতিতে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। এছাড়াও সেতু, কালভার্ট, ফসলি জমি ও রেললাইনসহ মূল্যবান স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন বেআইনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, বাঁকখালী নদীর দক্ষিণাংশে জনগুরুত্বপূর্ণ মিঠাছড়ি-রাজারকুল সড়ক আর উত্তরাংশে খরুলিয়ার কোনার পাড়া ও ঘাটপাড়া। নদীর সাথে উভয়পাড়ের দূরত্ব প্রায় ২০-৪০ গজ। এ অংশেই নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে তীরবর্তী ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর বিলীন হবার আশঙ্কায় রয়েছে দুই গ্রামের মানুষ।এ নিয়ে চাপা আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাদের মতে, একাধিকবার বুঝিয়েও বালু খেকোদের রোধ করা যায়নি। উল্টো নানা হুমকি-ধমকি দিয়েছেন প্রভাবশালী বালু খেকোরা।
বিজ্ঞাপন

তাদের মতে, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর থেকে প্রতিদিন বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রশাসনের অবহেলায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বালু দস্যুরা। বালু তোলার ফলে নদীর ভাঙনরোধে বসানো কোটি টাকার আরসিসি ব্লকও সরে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঁকখালী নদীর উত্তরপাড়ের খরুলিয়া কোনার পাড়ার জাহাঙ্গীর নামে এক যুবকের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র নদীতে ২টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।তাদের ড্রেজার বসানোর স্থানের দক্ষিণে মিঠাছড়ির পশ্চিম উমখালী এলাকার বাঁকখালী নদীর তীর ভাঙনরোধে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে আরসিসি ব্লক বসানো রয়েছে।

বালু খেকোরা নদী থেকে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি নদীর তীরের ফসলি জমিতে জমা পলি মাটিও প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন মাটি ও বালু ভর্তি অসংখ্য ট্রাক চলাচলের কারণে নদীর তীরের কাঁচা সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ।সব মিলিয়ে এলাকার ফসলি জমি, নদীর পাড়ের ব্লক ও বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। বাড়ছে নদীর তীর ভাঙনও।

রামুর মিঠাছড়ির উমখালী গ্রামের আবদুল করিম ও রহমত উল্লাহ (ছদ্মনাম) বলেন, গত বছরও কোনারপাড়ার ‘জাহাঙ্গীর সিন্ডিকেট’ ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের হয়ে কয়েক কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করে। এরপর পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভাঙনের কবলে পড়ে নদী গর্ভে তলিয়ে যায় আমাদের পাঁচ একর ফসলি জমি। বালু তুলে কোটি টাকা পাওয়া যায় দেখে লোভের বশবর্তী হয়ে এবার নিজস্ব ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছে তারা। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে নদীর ভাঙনে আরসিসি ব্লক, নদীর তীরবর্তী উমখালী, পশ্চিম উমখালী, মিঠাছড়ি, ঘাটপাড়া গ্রামের শত শত একর আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় চাষিরা জানান, শুকনো মৌসুমে নদীর চরে শত শত একর জমিতে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ হতো। বর্গা কিংবা লিজে জমি নিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতো শত শত চাষি। কিন্তু তীরের জমির পলি তুলে নিয়ে খানাখন্দ করায় আগের মতো চাষাবাদ করা যায় না। আবার পলির উপর বালু জমিয়ে রাখায় অনেক জমি চাষের আওতামুক্ত থাকছে। এসব বিষয় বলতে গিয়ে বালু খেকোদের দ্বারা হত্যার হুমকির শিকার হতে হয়েছে অনেকে।

অভিযোগের পর রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কয়েকবার অভিযানে এলেও আগাম খবর পাওয়ায় তা বিফল হয়েছে। প্রশাসন আসার আগে মেশিনগুলো তুলে নিয়ে চলে গেলে আবার আগের জায়গায় বসানো হয়। ভুক্তভোগীদের মতে, এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে ভরা বর্ষায় বসত ভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে।

পাঠকের মতামত: