ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

বনের জমি দখল করে জমিদারী, প্লট বিক্রি করছে নব্য আ‘লীগ নেতারা

নিউজ ডেস্ক :: কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জে সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে প্লট বিক্রির রমরমা বাণিজ্য চলছে। বনকর্মীরা দিনে উচ্ছেদ করে ফিরলে রাতে ফের দখল ও ঘর তৈরি করছে সন্ত্রাসীরা। তালিকাভুক্ত অনুপ্রবেশকারী এক রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্বে দখলবাজরা এই কান্ড ঘটাচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে দুর্নাম হচ্ছে আওয়ামী লীগের। খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দীন ও তার বাহিনী দখল করে একখড়া ৭-৮ হাজার বিক্রি করছে। যারা ক্রয় করেছেন এদের মধ্য ছাদেক, মিজান, আজিমসহ আরও ২০-২৫ জন রয়েছে। মোঃ শরীফ ও শাহাজান চৌধরীর নেতৃত্বে ২ পক্ষে শাহাবুদ্দিন, হেলাল উদ্দিন আব্দুর রশিদসহ (পাঠান) বাড়ি ৭-৮টি নির্মাণাধীন রয়েছে। জুমনগরের লুতু অর্থাৎ ইউপি চেয়ারম্যান কালামের নেতৃত্বে দখলকৃত জায়গা জনপতি ৪৫ খড়া ভাগ করে নিয়েছে। ওই জায়গায় বর্তমানে ৩টি টিনের ঘর আছে।জানা যায়, সাবেক বিএনপি সদস্য মোঃ শরীফের (নব্য আওয়ামী লীগ) নেতৃত্বে গঠিত সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে ইসলামপুর সামাজিক বনায়নের অংশীদাররা নিগৃহীত হচ্ছে। বনবিভাগ স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সামাজিক বনায়নের প্লট প্রদান করলেও সন্ত্রাসীরা দুই ব্যক্তির বনায়ন জোর করে কেড়ে নিয়ে জবরদখল করেছে। ওই পাহাড় থেকে মাটি-বালু বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নব্য আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ শরীফ। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতর সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম এবং তার সহোদর নব্য আওয়ামী লীগ নেতা শরীফকে জরিমানা করেছে। বর্তমানেও ৪টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বনবিভাগের পাহাড় কেটে বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্লট কেড়ে নেয়ার বিষয়টি কাউকে প্রকাশ না করতে সামাজিক বনায়নের অংশীদার আবদুল খালেক ও মাস্টার আবদুচ্ছালামকে এক প্রকারে জিম্মি করে তিন লাখ টাকা হারে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশকারী শরীফ ও তার বাহিনী বেপরোয়া হওয়ায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মোঃ ওসমান গণি ইপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।সূত্র জানায়, ইসলামপুর ইউনিয়ন বিএনপির তালিকায় ৪৩ নং সদস্য হিসেবে নাম রয়েছে জেলা বিএনপির নেতা ও স্থানীয় ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামের ছোট ভাই শরীফের। এই শরীফ ইসলামপুর আওয়ামী লীগের অফিস ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর মামলার আসামি। সম্প্রতি বিএনপি সদস্য শরীফ কৌশলে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পাহাড় কাটা, বনজসম্পদ দখল, মাটি-বালু বিক্রি, বনাঞ্চলে ঘর নির্মাণ ও সংরক্ষিত বনের জায়গা জবরদখল করে প্লট হিসেবে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্থানীয় বাজারে স’ মিল স্থাপন করে সংরক্ষিত বনের কাঠ চেরাই করছেন দিনরাত্রি। এসব অবৈধ অপকর্মে আওয়ামী লীগের দুর্নাম হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের এই অবস্থা চলতে থাকলে কক্সবাজারের সর্বত্র আওয়ামী লীগের দুর্নাম রটে যাওয়া ছাড়াও কোণঠাসা হয়ে পড়বে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিম মাদু বলেন, মোঃ শরীফ ইতোপূর্বে বিএনপি কমিটিতে ছিলেন কি না আমার জানা নেই। তবে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা বলেন,আমরা অসহায়,নব্য আওয়ামীলীগ এবং দলে অনুপ্রবেশকারীদের কর্মকান্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্য হচ্ছে। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক সোহেল রানা জানান, সেই বাগানে সত্যিকার অর্থে সরকারের সব স্বার্থ রক্ষা হয়েছে। বর্তমানে সেই বাগানে ৯ এবং ১০ অক্টোবর দুই বার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে আমরা দিনে উচ্ছেদ করে ফিরে আসলে সন্ত্রাসীরা রাতে আবার দখল করে নেয় বনজ সম্পদ। এখন আবারও উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হবে। তিনি বলেন, আগে বনায়নের জন্য জন প্রতি ১ হেক্টর জমি দেয়া হত। এখন ১ একর করে দেয়া হবে। সে জন্য আগে ১০ জনকে দেয়া হয়েছিল এবং সেই জায়গায় ২৫ জনকে দেয়া সম্ভব হবে। তবে সন্ত্রাসীদের কারনে এখন কেউ সরকারি বাগান নিতে রাজি হয়না। পূর্বের লিজ গ্রহণকারীরা অগ্রাধিকার পাবে। এদিকে উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগের জায়গা জবরদখল করে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ঘর, মার্কেট নির্মাণ করছে,চাইন্দা বিট কর্মকর্তা আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে বনকর্মীরা চেইন্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নির্মিতব্য একটি দালান গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আবদুল করিম ওরফে লেডু বনভূমি দখল করে এই দালান নির্মাণ করছিল। উত্তর বনবিভাগের ইসলামপুর এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দলখলকৃত বনভূমিতে অসংখ্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া টেকনাফে রোহিঙ্গা আগমনের সূত্র ধরে প্রভাবশালীরা বনভূমি দখল করে অসংখ্য মার্কেট নির্মাণের পর ভাড়া দিয়েছে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের।

 

পাঠকের মতামত: