ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার :: একসময় দালাল ছাড়া যাওয়া যেত না পাসপোর্ট অফিসে। ফরম পূরন, বই জমা ও নেয়াতে টাকা ছাড়া কোন সেবা পাচ্ছে না বলে বরাবর অভিযোগ ছিল কক্সবাজারবাসীর।
কিন্তু আজ আগের মত নেই, অনেক বদলে গেছে কক্সবাজার আ লিক পাসপোর্ট অফিসের চিত্র। কোনো অভিযোগ নেই পাসপোর্ট করতে আসা মানুষগুলোর, নেই দালালের আনাগোনা, প্রতিটি কক্ষের ভেতরে-বাইরে বিরাজ করছে শান্ত-শৃঙ্খল পরিবেশ।
বিভিন্ন মোড়ে-জায়গায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামরা। সেই সিসি ক্যামরা ও বাস্তবে চোখ রেখে তদারকি করছে স্বয়ং কক্সবাজার আ লিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম।
অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষগুলো শান্ত ও সুশৃঙ্খলভাবে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্টের জন্য ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিচ্ছেন। যথেষ্ট ধৈর্যের সঙ্গে তাদের সাপোর্ট এবং সেবা দিচ্ছেন অফিস কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি এমনই চিত্র চোখে পড়ে কক্সবাজার আ লিক পাসপোর্ট অফিসের। অথচ কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে বরাবরই নানা অভিযোগ ছিল ভুক্তভোগীদের।
পাসপোর্ট অফিসে দালালদের খপ্পরে পড়ে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হতো সাধারণ মানুষকে। ফরম পূরণ, বিভিন্নজনকে ম্যানেজ, পুলিশ ভেরিফিকেশন, মেশিনের সমস্যাসহ নানা অজুহাতে সরকারি খরচের বাইরেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করতো দালালরা। সেই গুনেধরা দালালরা এখন অনেকটা কোনঠাসা।
ঠুকঠাক গ্রাম থেকে আসা মানুষকে খপ্পড়ে ফেলে মাঝে মধ্যে কয়েকটাকা নিলেও তা বুঝে উঠতে সক্ষম হয়না। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন টাকা ছাড়া একেবারে হয়না বলে জানান অনেরক ভুক্তভোগি।
আগে এসব কর্মকাণ্ডে অফিসের গুটিকয়েক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দালালদের যোগসাজশের অভিযোগও ছিল ভুক্তভোগীদের। যা বরাবরই অস্বীকার করতো অফিস কর্তৃপক্ষরা। কিন্তু সৎ, নিষ্টা ও কড়াকড়ি অফিসার বলে খ্যাত আবু নাঈম মাসুম এর কারণে সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের চিত্র।
সচেতন কক্সবাজারের অনেক লোক জানিয়েছেন, যদি কক্সবাজারে এই অফিসার না থাকতো তাহলে এই রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার প্রায় এক লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট বানিয়ে নিত। এরকম অনেক জালিয়াতি চক্রের সদস্য, ভূয়া ছেলে-মেয়ে বানিয়ে পাসপোর্ট নিতে আসা অনেক ধরে সাজা ও জরিমানা করা হয়েছে।
কুতুবদিয়া থেকে আসা আবদুল করিম জানান, কর্মসংস্থানের কারণে বিদেশ যাওয়ার জন্য তিনি পাসপোর্ট করতে এসেছেন। সরকারি খরচের বাইরে কাউকে কোনো টাকা দেননি বা কোনো টাকা দাবি করা হয়নি। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী মায়ের নাম ফরমে ভুল লেখায় একবার হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তা সরাসরি অফিসারের কাছে গেলে মুহুর্তেই সংশোধন করে দেন।
টেকনাফের হ্নীলা পানখালী এলাকার ইউসুফ বলেন, দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য রবিবার অফিসে যথারীতি ফরম জমা দিই। অফিস কর্তৃপক্ষ ৩০ মিনিটের ভিতর আমার ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট সম্পন্ন করেছে। তিনি দালাল বা অফিস কর্তৃপক্ষের কারও কাছে কোথাও কোনো অনিয়ম বা হয়রানির শিকার হননি বলে জানান।
চিকিৎসা করতে ভারত যাওয়ার জন্য চকরিয়ার খুটাখালী থেকে আসা ইলিয়াছ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে বলেন, কয়েকমাস ধরে জাতীয়ভাবে সমস্যার কারনে পাসপোর্ট পেতে সমস্যা হচ্ছে। তারপরেও আমাকে চিকিৎসা করানোর জন্য পাসপোর্ট পেতে দ্রুত সহায়তা করেন। সহকারী পরিচালক আবু নাঈম স্যার আমার পাসপোর্ট স্লিপে ঢাকা অফিসে যাওয়ার জন্য লিখে দিলে আমি দ্রুত পাসপোর্ট পায়।
কক্সবাজার আ লিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম চকরিয়া নিউজকে বলেন, পাসপোর্ট করতে এসে একজন ব্যক্তিও যেন হয়রানির শিকার না হন, তারা তাদের প্রাপ্য সেবা পান, সবসময় আমরা সে চেষ্টাই করি। সেবার মান নিশ্চিত করতেই আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তবে কক্সবাজার জেলা যেহেতু রোহিঙ্গা প্রবণ এলাকা সেহেতু কড়াকড়িতে মাঝে মধ্যে কিছু মানুষের কথাবার্তায় ভূল বুঝাবুঝি হয়।
তিনি আরো বলেন, পাসপোর্ট অফিসে দালালদের অপতৎপরতার অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে আমরা পেয়েছি কিন্তু তাদের চিহ্নিত করতে না পারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে অফিস দালালমুক্ত রাখতে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত: