ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

নতুন তিন বাচ্চা নিয়ে ফুরফুরে মা-বাবা, নজর কাঁড়ছে দর্শনার্থীর

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বিরল প্রজাতির ইমু পাখির প্রজননে বিরাট সফলতা

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::  দ্বিতীয়বার তিনটি বাচ্চা ফুটেছে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বিরল প্রজাতির পাখি ইমু’র ঘরে। পার্ক প্রতিষ্ঠার পর ইমু পাখির প্রজনন সফলতায় কর্তৃপক্ষ বেশ খুশি। সদ্য ফোটা বাচ্চা তিনটিকে বড় করে তুলতে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে দুই কর্মচারী। অপরদিকে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে বেশ খুনসুটিতে রয়েছে বেষ্টনীতে থাকা স্ত্রী প্রজাতির দুটি এবং বিপরীত লিঙ্গের একটি ইমু পাখি।
সরজমিন দেখা গেছে, বেস্টনীর চারপাশে বানরের বিচরণ থাকায় তাদের খপ্পড় থেকে রক্ষায় এক মুহূর্তের জন্যও বাচ্চাগুলোকে চোখের আড়াল করছে না এসব ইমু পাখি। আর গতকাল রবিবার থেকে মা-বাবার সঙ্গে বেষ্টনীতে বাচ্চাগুলোকে ঘুরতে দেখে দর্শনার্থীরাও বেশ আনন্দ উপভোগ করছে। বিশেষ করে বড়দের সঙ্গে আগত শিশুদেরও নজর কাঁড়ছে ডিম থেকে সদ্য ফোটা ইমু পাখির বাচ্চাগুলো।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্ক প্রতিষ্ঠার পর স্ত্রী প্রজাতির একটি ইমু পাখি আনা হয় পার্কে। পরবর্তীতে আনা হয় আরো দুটি ইমু পাখি। বিপরীত লিঙ্গের দুটি ইমু পাখি যৌথবাহিনীর অভিযানে জব্দ করা হয়েছিল সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বাড়ি থেকে। সেই দুটিসহ পার্কে ইমু পাখির সংখ্যা দাঁড়ায় তিনে। ইমু পাখির প্রজনন বাড়াতে পার্ক কর্তৃপক্ষের অনেক চেষ্টার ফসল হিসেবে ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে ইমু পাখির ঘরে বাচ্চা ফোটে একটি। এর দুইবছর একমাস পর ডিম থেকে তিনটি ফুটফুটে বাচ্চা ফুটলো বিরল প্রজাতির ইমু পাখির ঘরে। যা ইমু পাখির প্রজননে সাফারি পার্কের ইতিহাসে বড় ধরণের সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) এবং সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ কালের কণ্ঠকে জানান, প্রতিবছরই ইমু পাখি একসঙ্গে ৭-৮টি করে ডিম দেয়। কিন্তু বার বার সব ডিমই নষ্ট হয়ে যায়। ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে সাতটি ডিম দেয় ইমু পাখি। তন্মধ্যে মাত্র একটি বাচ্চা ফোটাতে পেরেছিল। তবে আশার কথা হচ্ছে, সপ্তাহখানেক আগে এবার একসঙ্গে তিনটি বাচ্চা ফোটাতে পেরেছে ইমু পাখি। প্রজননে বিরাট সফলতায় বেশ আনন্দ লাগছে। সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলোকে সেবা-শশ্রƒষা করতে সার্বক্ষণিক দুইজন কর্মচারী নিয়োজিত করা হয়েছে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, ইমু পাখি সাধারণত সর্বভুক প্রজাতির পাখি। এরা কলমি শাক, কঁচি শাক ও পাহাড়ি লতা-গুল্ম, কীট-পতঙ্গ, পোল্ট্রি ফিড, গম, ভুট্টা ও চাল ভাঙা খেতে অভ্যস্ত। এরা পাখির মধ্যে বেশ শক্তিশালী। পানির কাছাকাছি ঝোপঝাড়মুক্ত উম্মুক্ত ঘাসভূমিতে এদের আবাসস্থল। ইমু পাখি ৫ থেকে সাড়ে ৬ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার হয়ে থাকে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ইমুর ওজন ৩৮ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের আয়ুষ্কাল প্রকৃতিতে ৫ থেকে ১০ বছর এবং আবদ্ধ অবস্থায় এরা বাঁচে ১২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত।
পার্ক কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ইমু পাখি ঘন্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌঁড়াতে পারে। এদের পায়ের লাথি খেলে বেশ চোট লাগে। এমনকি অনেক সময় মানুষও মারা যায়। তাই খুব সতর্কতার সাথে এদের পরিচর্যা করতে হয়। পার্কে আগত ইমু পাখির ঘরের নতুন তিন অতিথিকে বেশ পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে তোলা হবে।’

পাঠকের মতামত: