সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার) প্রতিনিধি,
কক্সবাজার সদরের পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার ৬ নং ¯ুইস গেইটটি ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতের পর সংস্কার না হওয়ায় ফের গত বুধবার- বৃহস্পতিবার পূর্ণিমার জোয়ারে লবণ মাঠ, চিংড়ি ঘের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চলাচল রাস্তা তলিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা যেতে পারছেন না স্কুল মাদ্রাসায়।ভেসে গেছে প্রায় দুই হাজার একর মাঠের লবণ। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ ¯ুইস গেইট দিয়ে জোয়ারের পানি অনুপ্রবেশ করার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকার ডি ব্লক, এ ব্লক, রিয়াইজ্যাকাটা ও বারডইল্যা ঘোনায় চলছে জোয়ার ভাটা। যে কারনে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত গোমাতলীর কয়েক শতাধিক লবণ চাষী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বলে জানা গেছে। লবণাক্ত পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল, বীজতলা, চিংড়িঘের, লবণ মাঠ, মাছ ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরিকল্পিত বেড়ীবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ জনগণ প্রতি বর্ষা আসলেই আরো একটি ২৯শে এপ্রিলের ছোবল আতঙ্কে রীতিমত ভয়ে থাকেন। শীঘ্রই অরক্ষিত এ বেড়ীবাঁধ নির্মাণের জোর দাবী জানান স্থানীয়রা। ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বেঁড়িবাধ ও ¯ুইস গেইটসমুহ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে টেকসই কোন পরিকল্পনা গ্রহণ না করার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকার অভিজ্ঞ মহলের ধারনা। প্রতিদিনকার জোয়ার ভাটার কারনে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীন সড়ক উপ-সড়কসমুহ।
এক তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার ৬ নং ¯ুইস গেইট এলাকা ভাঙ্গনের কারনে ওই পয়েন্ট দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়াতে চলতি লবণ মৌসুমে শত শত একর জমি লবণ চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি পূর্ণিমার ভরা জোয়ারের পানিতে ফের তলিয়ে গেছে লবণ মাঠ। এতে করে এলাকার বিপুল সংখ্যক লবণ চাষী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানান ইউপি সদস্য মাহমুদুল হক দুখু মিয়া। প্রান্তিক লবণ চাষীদের মুখে এখন আশার আলো নিভু নিভু জ্বলছে।
কারণ জানতে গিয়ে দেখা গেছে, গোমাতলীর দু’ শত ফুট বেঁড়িবাধ সংস্কার না হওয়ায় এ পেশায় জড়িত প্রায় ২ হাজার লবণ চাষীর পরিবারকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। লবণের দাম স্বাভাবিক থাকলেও ১২ শত একর মাঠ খালি থাকছে বলে স্থানীয় লবণ চাষীদের অভিমত। অনেক দিনের পুরনো পেশা হিসেবে ছেড়েও দিতে পারছেনা লবণ চাষ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকায় অবস্থিত সি বক, ডি বক, এ ব্লক ও রিয়াইজ্যাকাটা ঘোনাসহ আরো বেশ কয়েকটি ঘোনার চাষীরা লবণ উৎপাদন শুরু করেন। এরই মধ্যে সীমানা বেড়িবাধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ায় চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার বেশ ক‘জন লবণ চাষীকে মাঠের পলিথিন ও সরঞ্জাম গুটিয়ে নিতে দেখা গেছে।
রাজঘাট এলাকার লবণ চাষী বাদশা মিয়া জানান, গত ১৫-১৬ অর্থ বছরের লবন মৌসুমে উৎপাদিত লবনের দাম ছিল ,আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চাষীরা খুবই লাভবান হয়েছিল। বর্তমান মহাজোট সরকার প্রান্তিক লবণের মূল্য নির্ধারণ ও বিদেশ থেকে আমদানী বন্ধ করে দেওয়ায় গোমাতলীর লবণ চাষিরা লাভবান হয়েছিল।
একই এলাকার ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন জানান, গত রোয়ানুর তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বেঁড়িবাধটি দীর্ঘদিন মেরামত না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে জোয়ার ভাটায় চলছে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম।
গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নুরুল আজিম জানান, জোয়ারের পানির কারনে ওই এলাকার উত্তর গোমাতলী, আজিমপাড়া, কাটাখালী ও রাজঘাট এলাকার কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছেনা। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন জোয়ারের পানি উলেখিত এলাকার বসতঘর ও শিক্ষা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ছে। পাউবোর ৬৬/৩ নং পোল্ডার সংলগ্ন এলাকার ২শ মিটার ভাঙ্গনটিই এলাকার লোকজনকে বেশী ভোগান্তিতে ফেলেছে বলে জানালেন সমিতির ঐ প্রভাবশালী নেতা।
গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক মুসলেম উদ্দিন বলেন, পাউবো ভাঙ্গন এলাকা সংস্কার করার জন্য বাজেট প্রনয়ন করেছেন। দ্রুত ভাঙ্গন এলাকায় কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়নের উত্তর গোমাতলী ৭ নং ওয়ার্ড রাজঘাট পাড়া ফুলছড়ি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। প্রতিদিন জোয়ারের পানি অনুপ্রবেশ করার কারণে এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। যে কারনে রাজঘাট পাড়ার মানুষ গত ১১ মাস ধরে নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে মসজিদ কবরস্থান ও রাজঘাট। জোয়ার ভাটার কারনে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বেঁড়িবাধটি দীর্ঘদিন মেরামত না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ জানতে গিয়ে দেখা গেছে, পাড়ার দু’ শত ফুট বেঁড়িবাধ সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসী মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। এলাকাবাসী ভাঙ্গনরোধে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহ ও সদর রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানান, গোমাতলীবাসীর দূর্ভোগ লাঘবে পাউবোর কাছে আবেদন করা হয়েছে। সম্প্রতি কউক চেয়ারম্যান কর্নেল অব: ফুরকান আহমদ ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শণ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সংস্কার করার জন্য জোর তাগিদও দিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের জন্য জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: