ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

প্রাণঘাতী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চকরিয়ায় ৩৩ দিনে নিহত ১৩ আহত ৩৮

নিজস্ব সংবাদদাতা, চকরিয়া ::

 চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া অংশ ও উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে সড়ক দুর্ঘটনা। আর এতে গত এক মাসে অন্তত ১৩ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে। যেন চলছে মৃত্যুর মিছিল। অকালে ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকেই। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নিয়ম–কানুনের তোয়াক্কা না করার পাশাপাশি কাগজপত্রবিহীন গাড়ির দাপট বেড়ে যাওয়ায় হরদম ঘটছে দুর্ঘটনা। আইনি দুর্বলতার কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে নিসচা নেতাদের অভিমত।

হাইওয়ে পুলিশের সূত্রমতে, ফেব্রুয়ারি মাসে পৃথক ১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ২৯জন আহত হয়। চলতি মার্চ মাসের ৫ দিনেই নিহত হয় ৭ জন ও আহত হয় ৯জন। মাত্র ৩৩দিনে চকরিয়ায় ১৩ জন নিহত ও ৩৮ জন আহত হয়। সর্বশেষ ৫ মার্চ সকালে চকরিয়া পৌরশহরে ট্রাক চাপায় ক্ষুদ্র নৃ– গোষ্টির এক মহিলা নিহত হন। এর দুইদিন আগেই একই দিনে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন মারা যায়। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে চকরিয়ার গয়ালমারা, বরইতলীর নতুন রাস্তার মাথা, বানিয়ারছড়া, জিদ্দাবাজার, পৌরশহর, ভাঙ্গারমুখ, হাঁসেরদিঘী, ছগিরশাহ মাজার, মালুমঘাট, মেধাকচ্ছপিয়া ঢালা। পূর্বে চকরিয়া কলেজ মোড় ছিল মৃত্যু ফাঁদ। ওই মোড়ে একাধিক সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ছাড়াও সড়ক লাগোয়া মোড়ে গাড়ি পিছলে পড়া রোধে ব্যবস্থা করায় ওই স্পটে দুর্ঘটনা কমেছে।

এছাড়া মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালের সামনে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় লোকজন প্রশাসেন দ্বারস্থ হয় দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নিতে। খোঁজ নিয়ে ও সড়ক সংশ্লিষ্ট হাইওয়ে–ট্রাফিক পুলিশ এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতাদের মতে, কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৩৯ কিলোমিটারে মহাসড়ক রয়েছে। এই সড়কের কয়েকটি পয়েন্ট পাহাড়ি ও উঁচু–নিচু ঢালা। বাঁক রয়েছে বেশ ক’টি। এসব পয়েন্টে নেই দুর্ঘটনা থেকে রক্ষায় সতর্কীকরণ চিহ্ন। এছাড়া ছোট–বড় বৈধ–অবৈধ গাড়িগুলো পণ্য ও যাত্রীবহন কালে নিজেদের ইচ্ছে মতো সড়কের উপর দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠা–নামানো এবং পণ্য্য লোড–আনলোড করে। পর্যটন শহরমুখী এই মহাসড়কের স্টেশন এলাকায় সড়কের উপর পরিবহন পার্কিং নিত্যকার ঘটনা। এছাড়া প্রশাসনিক নির্দেশ অমান্য করে ওয়াটারপ্রুফ ব্যবস্থা না নিয়ে লবণ পরিবহণ করায় ট্রাক থেকে লবণ জল গলে পড়ে সড়কে।

ভোরে হালকা কুয়াশায় ওই লবণ জল সড়ককে পিচ্ছিল করে তোলে। অন্যদিকে, কাগজপত্র বিহীন তিন চাকার যান ও মোটরবাইকগুলো হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ দেখলেই ধরপাকদের খপ্পর থেকে রক্ষা করতে দ্রুত পালাতে ঘিয়ে দুরপাল্লার যানবাহনের সাথে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চকরিয়া উপজেলা শাখার যুগ্ন–সম্পাদক সাংবাদিক মুকুল কান্তি দাশ বলেন, সড়ক নিরাপত্তায় প্রণিত আইন বাস্তবায়নে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ যথাযথ ভূমিকা রাখলে সড়কে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চকরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি সোহেল মাহমুদ বলেন, অদক্ষ চালক, শিশু–কিশোর বয়সে গাড়ি চালানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর অতিরিক্ত টাকা কামানোর লোভে গাড়ির মালিকরা চালকদের দিয়ে বিরতিহীনভাবে গাড়ি চালাতে বাধ্য করে। চালকরা বাধ্য হয়ে চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালায়। এতেও দুর্ঘটনা বাড়ছে। এজন্য হাইওয়ে পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে। চালকদের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির আইসি নুরে আলম বলেন, মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে ওভারটেক এবং চালকরা মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে অকালে ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। তাই এ ব্যাপারে চালকদের সচেতন করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

পাঠকের মতামত: