পেকুয়ায় ইউপি নির্বাচনের আগাম হাওয়া শুরু হয়েছে। এখন সর্বত্র ইউপি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ঝড় চলছে। চলছে নানা হিসেব নিকেষ। দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচন অনুষ্টিত হতে যাওয়ায় প্রধান দুই দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা নির্বাচনকে মর্যদার লড়াই হিসাবে দেখছে। দলগুলোর তৃণমূল পর্যায়েও চলছে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ। ইতোমধ্যে সরকারী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোয়ন নেয়ার জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে। আওয়ামীলীগ সরকারে থাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও বিভিন্ন মামলার আসামী এমন কিছু দাগী লোকও এ দলটির মনোনয়ন ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে দলের নেতাকর্মীরা জানায়। তবে এ দলের শীর্ষ নেতারা জানান; কোন খারাপ লোককে এবার মনোনয়ন দেয়া হবে না।
এলাকাবাসী মনে করছে, আগামী নির্বাচনে পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা ভাল অবস্থানে থাকবে। এ দলটিতে অনেক জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছে যাদেরকে বিগত সময়ের নির্বাচনে কায়দা করে, এমন কী অনেককে জোর করে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের এবার বিজয়ী হয়ে আসার সুযোগ এসেছে। তাদের অনেকে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে ময়দানে রয়েছে। পেকুয়া উপজেলার ৭(সাত) ইউনিয়নের মধ্যে আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের এ রকম ৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী এবং পেকুয়া সদর, শিলখালী, বারবাকিয়া, টৈটং-এ বিএনপি’র প্রার্থী, মগনামায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এবার পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে ৬ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী সংস্থার দেয়া তথ্য ও এলাকায় জরিপ চালিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। ইতোমধ্যে সংস্থাগুলো আসন্ন ইউপি নির্বাচনে পেকুয়ায় জনপ্রিয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকাও সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এসব তালিকায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা ও চকরিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, উজানটিয়া ইউনিয়নে যুবলীগের সাবেক সভাপতি, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান এটিএম শহীদুল ইসলাম চৌধুরী, রাজাখালী ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাবুল, শিলখালী ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচী, টৈটং ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ বি.এ, বারবাকিয়া ইউনিয়নে সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জেলা যুবলীগের নেতা জি.এম কাশেমের নাম রয়েছে। তাদেরকে হেভিয়েট প্রার্থী হিসাবে ধরে নেয়া হচ্ছে। এরা আগামী নির্বাচনে বিএনপি’র দূর্গে আঘাত করে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন বলে মতামত দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে পেকুয়া সদরের সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম ইতোপূর্বে দুইবার নির্বাচন করে নিকটতম প্রার্থী ছিলেন। এ ইউনিয়নে ওই এসময় এ দলটির একাধিক প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু দুইবার নির্বাচনে সর্বমোট ভোটে নিজদলের অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে সাংবাদিক জহিরুল ইসলামই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। গত বছর পেকুয়া সদরে কয়েকবার ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। ওই বন্যার সময় সাংবাদিক জহিরুল ইসলামই একমাত্র ব্যক্তি যিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ কেটে দিয়ে পানি বন্যার পানি বের করার ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের প্রায় ২৩টি ভাঙন তিনি রাতদিন বেড়িবাঁধে উপস্থিত থেকে পুনঃনির্মাণ করে নিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে গিয়ে নিজ হাতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গরীব লোকদের প্রায় ১(এক)কোটি টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। তিনি এমনিতেই প্রতিনিয়ত এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে থাকেন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কোন অভিযোগ নেই। সবমিলিয়ে তিনিই এ ইউনিয়নে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। উজানটিয়া ইউনিয়নের বর্তমান সফল চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম চৌধুরী গত বছরের বন্যার সময় তার এলাকায় প্রচুর কাজ করেছেন। রাজাখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম চৌধুরী চোর ডাকাত দমন করতে সমর্থ হয়েছেন। কোন ভাল মানুষের ক্ষতি করেনি বলে সুনাম রয়েছে তার। শিলখালী ইউনিয়নের ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচী গত নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে গেলেও তিনি সেখানে লেগে থেকে কাজ করেছেন। এবার তিনি শিলখালীতে জনপ্রিয় প্রার্থী। টেটং ইউনিয়নে দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ বি.এ বরাবরই জনপ্রিয় লোক। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি চক্র তাকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করে হয়রানি করেছে। এতে তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। বারবাকিয়া বর্তমান চেয়ারম্যান তেমন কোন কাজ করতে না পারায় জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি.এম কাশেমের প্রতি ঝুকছে সাধারণ মানুষ। মগনামায় আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল এনামের নামও রয়েছে। তাছাড়া সবকটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ বিএনপি’র প্রার্থীদের মধ্যে শক্ত লড়াই হবে। উল্লেখিত হেভিয়েট প্রার্থীরা ছাড়াও পেকুয়া সদর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাক আবুল কাশেম (আগেও দুইবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন), জেলা আওয়ামীলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক প্রবীন রাজনৈতিক সাবেক চেয়ারম্যান এম কামাল হোসেন ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, উজানটিয়ায় আওয়ামীলীগের সভাপতি তোফাজ্জল করিম, টৈটংএ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, বারবাকিয়ায় উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বারেক, যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ মুফিজ, রাজখালী ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মাষ্টার নূর মোহাম্মদ, উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার আমজগীর চৌধুরী, মগনামায় উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী বাবুল, সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুচ চৌধুরী, যুবলীগের নেতা মোজাম্মেল হক, শিলখালী ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা কাজীউল ইনসান, নুরুল আলম মেম্বার আওয়ামীলীগের মনোয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা জানান; পেকুয়া উপজেলায় কোন ইউনিয়নে একক প্রার্থী এখনই নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। একক প্রার্থীর ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্ভব নয়।
অন্যদিকে এ উপজেলায় কয়েকটি ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী চুড়ান্ত রয়েছে বলে একটি অসমর্থিত সুত্রে জানা গেছে। এ সুত্র মতে পেকুয়া সদরে বর্তমান চেয়ারম্যান এম বাহাদুর শাহ, টৈটং এ বর্তমান চেয়ারম্যান জেট মুসলেম উদ্দিন, শিলখালী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান নুর হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন। এছাড়া শীলখালীতে বিএনপি নেতা আবু ছৈয়দ, রাজাখালীতে সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সিকদার, সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, বারবাকিয়ায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, উজানটিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী মানিক বিএনপি’র মনোয়ন চাইছেন বলে জানা গেছে। মগনামা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান শহীদুল মোস্তফা জামায়াত সমর্থিত হওয়ায় সেখানে এখনও বিএনপি’র প্রার্থীর ব্যাপারে কোন আলোচনা শুনা যায়নি।
পাঠকের মতামত: