ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ার পাহাড়ে ডাকাত আলমগীর বাহিনী বেপরোয়া: আতংকে ৫ হাজার বাসিন্দা

ffমুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :::

কক্সাবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকায় সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারীদের নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আলমগীর ডাকাত। দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়ার দুই ইউনিয়নের পাহাড়ি অঞ্চলে নানান ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত করে আসলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ওই আলমগীর ডাকাত ও তার অস্ত্রধারী বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আর আলমগীর ডাকাত বাহিনীর কারণে পাহাড়ের প্রায় ৫ হাজার বাসিন্দা চরম আতংকে দিনাতিপাত করছে। ওই ডাকাত বাহিনীর বিরুদ্ধে পাহাড়ে কেউ মুখ খুললে তার উপর নেমে আসে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের খড়ক। তাই পাহাড়ের কোন বাসিন্দা ভয়ে আলমগীর ডাকাত ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। পেকুয়ার বারবাকিয়া ও টইটংয়ের পাহাড়ে অপরাধের ত্রাসের এক রাজত্ব কায়েম করেছে বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী এলাকার জাফর আলমের পুত্র ও ডাকাতি, চুরি, সরকারী বননিধসহ নানান ধরনের অপরাধের কারণে কয়েক ডজন মামলার আসামী মো. আলমগীর (২৮) ওরফে আলমগীর ডাকাত। বনরাজা খ্যাত কুখ্যাত সন্ত্রাসী আলমগীরের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ওই জনপদের প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দা মানুষ। এমন কোন অপরাধ নেই যা ওই আলমগীর ডাকাত ও তার বাহিনী পাহাড়ী জনপদে সংগঠিত করছেন না।

 ওই ডাকাত আলমগীল ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে বারবাকিয়া ও টইটংয়ের সরকারী বনভূমির মূল্যবান গাছ কেটে পাচার, পাহাড় কেটে মাটি পাচার, বালি দস্যুতা, নারী নির্যাতন, চুরি-ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্রবাজি, ধর্ষণ, হত্যার হুমকিসহ বহু অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। পেকুয়া থানা ও চকরিয়া আদালতে মামলাও রয়েছে কয়েক ডজন। এসব মামলার কয়েকটিতে বর্তমানে গ্রেফতারী পরোয়ানাও রয়েছে।

 সরেজমিন ২৪ এপ্রিল টইটং ইউনিয়নের পাহাড়ী জনপদের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ওই ডাকাত আলমগীর ও তার বাহিনীর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা। তাদের হাতে কতটা জিম্মি সাধারণ মানুষ তা সরেজমিনে এলাকায় না গেলে বুঝার প্রশ্নই আসেনা।

 ভূক্তভোগী এক পরিবারে বায়োবৃদ্ধ ব্যক্তি জানান, আলমগীর ডাকাতের নির্যাতনের কারণে এলাকার মেয়েদের বিয়ের উপযুক্ত হয়ে ওঠার আগেই অন্যত্র পাঠিয়ে দিতে হয়। নয়তো শিকার হতে হয় আলমগীরের কু-লালসার। তার এক মেয়েকেও অনৈতিক প্রস্তব দিয়ে আসছিল ওই ডাকাত আলমগগীর। পরে মেয়েকে চট্টগ্রাম শহরের একটি পোশাক কারখানায় পাঠাতে বাধ্য হন এ পিতা। পরে সেখান থেকে মেয়েকে এলাকায় এনে বিয়ে দিয়ে ঘরজামাই রাখেন ওই পরিবার। কিন্তু এতেও নিস্তার মেলেনি। বর্তমানেও নিয়মিত উত্যক্ত করে চলেছে ওই মেয়েকে। পরিবারের সদস্যের অগোচরে তাদের ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালায় ওই ডাকাত ও তার বাহিনী। এর বিচার চেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ধারে ধারে ঘুরেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ডাকাত আলমগীর বাহিনীর অস্ত্রের ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি এলাকার কেউ। নিতে পারেননি আইনী সহায়তা।

 আক্ষেপের সাথে ওই বায়োবৃদ্ধ ব্যক্তি এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজিয়েছেন বেশ কয়েকবার। পরিশেষে নির্বিকার হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার চেয়ে টেনেছেন আলাপের ইতি।

 স্থানীয় এলাকাবাসীরা নাম প্রকাশ না করা শর্তে আরো বলেন, ওই দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে পাহাড়ী জনপদে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে রয়েছে টইটংয়ের সোনাইছড়ি রমিজপাড়া, এবাদাতখানা, জুগিরছড়া, ধনিয়াকাটার পূর্বপাড়া, নতুনঘোনা, বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালীসহ দুই ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। অস্ত্রের মুখে সাধারণ মানুষের দখলীয় ভূমি বা বসতঘরের মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া, পাহাড়ী ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করে চললেও বনবিভাগ থাকে নির্বিকার। তাই সরকারী ওই দপ্তরের দিকে অপরাধীদের সাথে আতাঁতের অভিযোগের আঙ্গুল স্থানীয়দের। এছাড়াও পাহাড়ি জনপদে মাদক ব্যবসা, নারী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে

 বনরাজা খ্যাত ডাকাত আলমগীরের এক ভাই সম্প্রতি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বেড়ে গেছে তার দাপট। নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরো বিস্তর পাহাড়ি বনভূমি ও এলাকা। ডাকাত আলমগীর বাহিনীর লালিত-পালিত অস্ত্রধারী ক্যাডারদের হাতে নির্যাতিত হয়ে সাধারণ মানুষ বিচার চাইতে গিয়ে মারধরের শিকার হবার অভিযোগও রয়েছে ওই ইউপি সদস্য ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

 এছাড়াও টইটংয়ের রমিজ পাড়া এলাকার এমরান হোছন, সাকের হোসেন, আবদুল মান্নান, রমিজ উদ্দিন, খোকননসহ আরো কয়েকজন জানান, বৈধভাবে বালি উত্তোলনের জন্য একটি মেশিন বসালেও বনরাজা খ্যাত কুখ্যাত ডাকাত আলমগীর ও তার বাহিনীর লোকজনকে ৩০হাজার টাকা চাঁদাদাবী, মারধর ও হুমকির কারণে বালি উত্তোলন করতে পারছেন না তারা। অথচ তার একটু ধুরে ডাকাত আলমগীরের একটি ও তার ভাই ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের একটিসহ দুইটি মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে।

 এ ব্যাপারে জানতে বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ডাকাত আলমগীরের ভাই জাহাঙ্গীরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে এসব কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র বলে দাবী করেন।

 টইটং ইউনিয়ন পরিষদেরে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। ওইসব এলাকায় কিশোরী মেয়ে রাখতে পারছেন না অভিভাবকরা। পাহাড়ের মধ্যে ডাকাত আলমগীর ও তাদের পিতা জাফর মিলে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা অন্যের জমি কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু ভোক্তভূগিদের জিম্মি করে রাখায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসছেনা। তারপরেও এব্যাপারে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 পেকুয়া থানার অফিার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন সন্ত্রাসী ও ডাকাতকে ছাড় দেওয়া হবেনা। অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

পাঠকের মতামত: