কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কক্সবাজার সদর উপজেলায় পিএসসি পরীক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। দুইটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র শনিবার ছাত্রদের হাতে দেখা যায়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। উৎকন্ঠার কথা জানিয়েছেন সচেতন অভিবাবকরা। খোদ বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও।
দুইটি বিষয়ের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ এবং ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ের প্রশ্নপত্রগুলো সদর উপজেলার সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য তৈরী করা হয়েছে। তবে প্রশ্নপত্র আসল কিনা কিংবা এ প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা হবে কিনা তা নিরপেক্ষ কোন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঘোনার পাড়া সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন বলেন, ‘বিকেলে ঘোনার পাড়ার কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর হাতে আমি দুটো প্রশ্নপত্র দেখি। ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ এবং ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ের। শিক্ষার্থীরা আমাকে জানিয়েছে, বিদ্যালয় থেকেই তাদের কাছে এ প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। অধিকাংশ পিএসসি পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্রগুলোর ছায়াকপি সংগ্রহ করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের সাথেও কথা বলেছি। তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।’
অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন আরও বলেন, ‘কঁচি শিক্ষার্থীদের যখন শেখার সময় এই সময়টাতে তাদের হাতে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র গেলে তা খুবই উদ্বেগের। এটি শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্তরায় হবে। নষ্ট হবে সুন্দর ভবিষ্যত।’
ঘোনার পাড়া সমাজ কমিটির আরেক জন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পিএসসি পরীক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষার সব প্রশ্নপত্রই ফাঁস হয়েছে। প্রধান শিক্ষক জাফর আলমের কাছে যারা প্রাইভেট পড়েন তারাই মূলত এ প্রশ্নপত্রগুলো পেয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অভিবাবকরা উৎকন্ঠায় রয়েছে। তারা সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়েছে পড়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর আলম বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এমন কোন তথ্য আমি জানিনা। তবে এটুকু বলতে পারি, আমার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই প্রশ্নপত্র তাদের হাতে দেওয়া হবে। কেউ যদি কোন প্রশ্নপত্র পেয়ে থাকে তবে কিভাবে পেয়েছে সেটা তারাই বলতে পারবে।’
তিনি জানান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী মঙ্গলবার। এরপর শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হবে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শওকত আলম বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি আমিও শুনেছি। এটি খুবই বিব্রতকর। তবে বিষয়টি সত্য কিনা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। বিদ্যালয়ের কেউ যদি এ ধরনের অপকর্ম করে থাকে আমরা কোনভাবেই ছাড় দেবো না।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: সফিউল আলম বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে অভিযোগ এসেছে তা খুবই ন্যাক্কারজনক। কঁচি শিক্ষার্থীর নিয়ে এ ধরনের অপকর্ম মেনে নেওয়া যায়না। এ বিষয়ে আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি। যদি সত্যতা পাওয়া যায় তবে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘মডেল টেস্টের প্রশ্নপত্র তৈরী করা হয় সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে। পরীক্ষা শুরু দুই-একদিন আগেই মূলত সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রশ্নপত্রগুলো বিদ্যালয়ের প্রতিনিধিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ প্রশ্ন ফাঁসের ক্ষেত্রে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের কারও সম্পৃক্ততা আছে কিনা বা গাফেলতি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।’
পাঠকের মতামত: