কক্সবাজার আসছে ইউরোপের বিলাসবহুল ভ্রমণতরী সিলভার ডিসকভারার
ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার :::
সরকারের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার পাশাপাশি সাগর পথে বিশ্ব পর্যটনের সাথে এখন যুক্ত হচ্ছে কক্সবাজার। বিলাসবহুল ভ্রমণতরী সিলভার ডিসকভারার এক শ’ পর্যটক নিয়ে খুব শিগগিরই কক্সবাজার আসছে বলে জানা গেছে। পশ্চিম ইউরোপের মোনাকো শহরভিত্তিক সিলভার সী নামের একটি সংস্থার ব্যবস্থাপনায় ওই পর্যটকরা সাগর পথে কক্সবাজার আসছেন। তারা মহেশখালী এবং সোনাদিয়া পরিদর্শন করে সুন্দরবনে যাবেন। সূত্রমতে, সাগর পথে বাংলাদেশে এটিই প্রথম কোন ইন্টারন্যাশনাল ট্যুর। সাগর পথে বাংলাদেশে পর্যটক আগমনের এই বিষয়টি দেশের পর্যটন খাতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। সিলভার সী’র বাংলাদেশের স্থানীয় পার্টনার ‘জার্নি প্লাসের’ প্রধান নির্বাহী তৌফিক রহমান সূত্রে জানাগেছে, ওই ভ্রমণ তরীতে আমেরিকা, ইউরোপ, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের এক শ’ পর্যটক থাকবেন। তাদের সাথে থাকবেন অরো এক শ’র মত ক্রু। এই ভ্রমণে তাদের প্রত্যেকের খরচ পড়বে ১৭ হাজার ১৫০ ডলার বা ১৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা। জানাগেছে, সিলভার ডিসকভারার-এর ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বংলাদেশ সরকারের পক্ষে পর্যটন সচিবের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স বিষয়টি সমন্বয় করছে। এ ব্যাপারে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও হয়ে গেছে। পর্যটন, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বন এবং নৌমন্ত্রণালয়-এর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গত বছর মে মাসে অনুষ্ঠিত ওই সভায় কাস্টম, ইমিগ্রেশন ও কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদেরও সম্পৃক্ত করা হয় বলে জানাগেছে। বিষয়টি পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক একেএম রফিকুল ইসলামের মতে, সাগর পথে ভ্রমণকারী ওই পর্যটকদেরকে তাদের এরাইভাল স্পটেই কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স দেয়া হবে। এতে দৃশ্যত তাদের ভিসা ফি, এরাইভাল ট্যাক্স, থাকা-খাওয়া ও যোগাযোগ থেকে যা পাওয়া যাবে, এর সুদূর প্রসারী সুবিধাটা হবে তার চেয়েও অনেক বেশী। তাঁর মতে, ভাল সেবা দিতে পারলে বহিঃবিশে^ বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বাড়বে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প আরো বিকশিত হবে। ট্যুরিজম রোর্ড সূত্রে জানাগেছে, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন থেকে শ্রীলঙ্কা, ভারত-মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সাগর পথে ট্যুরিজম ডেভেলপ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। গত একবছর চেষ্টার পর জার্নি প্লাসের মাধ্যমে সিলভার সী সিলভার ডিসকভারার নামের একটি বিলাসবহুল জাহাজ নিয়ে এক শত পর্যটককে বাংলাদেশে পাঠাতে সম্মত হয়েছে। জানাগেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারী সিলভার ডিসকভারার যাত্রা শুরু করে। শ্রীলঙ্কা ও আন্দামানে ৯ দিন অতিবাহিত করার পর সিলভার ডিসকভারার বঙ্গোপসাগরে যাত্রা শুরু করবে। যাত্রার ১২ দিনের মাথায় এটি মহেশখালী পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিলভার ডিসকভারার-এর পর্যটকরা মহেশখালীতে একটি বৌদ্ধবিহার ভ্রমণ করবেন এবং পুরোহিতগণের সাথে সাক্ষাত করে তাদের জীবনধারা সম্পর্কে জানবেন। স্থানীয় যানবাহনে চড়ে তারা স্থানীয় জীবনধারা অনুভব করবেন। পরে তারা একটি স্কুল ও ঠাকুরতলা গ্রামের রাখাইন এলাকায় ভ্রমণ করবেন। ১৩তম এবং ১৪তম দিনে তরীটি সুন্দরবন ভ্রমণ করবে। তরীটি সেখানে ভেড়ানো হবে পশুর নদীতে এবং স্থানীয় গাইড ও রেঞ্জাররা দিক-নির্দেশনা দিয়ে সুন্দরবন সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করবেন। স্থানীয় গাইডরা তাদেরকে সুন্দরবন সম্পর্কে জানাবেন। তারা বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে ঘুরে বেড়াবেন। সুন্দরবনে ৩৫০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও অন্যান্য প্রাণীর আবাসভূমি ঘুরে দেখবেন। ১৫তম দিনে এটি কলকাতার উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করবে। এ ব্যাপারে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, তার কাছে এধরনের কোন নির্দেশিকা এখনো পৌঁছায়নি। তবে হয়ত খুব তাড়াতাড়ি নির্দেশিকা পাবেন। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন জানতে চাইলে বলেন, এধরনের কোন কাগজপত্র তাঁর হাতে নেই। সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে কাগজপত্র না পাওয়া পর্যন্ত তিনি কোন মন্তব্য করতে পারছেন না। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ অলী হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে বিভিন্নভাবে লেখালেখি হচ্ছে, তবে তাঁর কাছেও এব্যাপারে এখনো কোন ইনফরমেশন নেই।
পাঠকের মতামত: