ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

নিরাশার অন্ধকারে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর

কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
২০০৯ সালে ক্ষমতার আসার আগে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুত প্রকল্পের মধ্যে ছিল সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। ওই সময় সরকারের পরিকল্পনায় ২০১৫ সালের মধ্যে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রথম অংশের কাজ শেষ করার লক্ষ্যও ছিল। এ নিয়ে সরকার কয়েক বছর তোড়জোড় করলেও চলতি মেয়াদের শেষে এসে আলোচনা থেকেই হারিয়ে গেছে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলো নিয়ে আলাদা যে পুস্তিকা প্রকাশ করে তাতে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর বিষয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত এই প্রকল্পটির বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত ছিল না। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো নজরদারি করে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। এর সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। প্রতি দু’তিন মাস পরপর ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি প্রতিবেদনও তৈরি করে ইআরডি। কিন্তু সম্প্রতি তৈরি করা প্রতিবেদনগুলোতেও সোনাদিয়ার প্রসঙ্গে কিছু উল্লেখ করা হচ্ছে না।
গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেছিলেন, পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ থেকে সরকার অনেকটা সরে এসেছে। কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর হবে। ওই বক্তব্যের এক দিন পরই চট্টগ্রাম বন্দরের ওই অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, মাতারবাড়ী হোক বা সোনাদিয়ায় হোক গভীর সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম অঞ্চলে হতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এর ঘোষণা দেবেন বলেও জানান তিনি। এই দুই মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত হবে আশা দেখছিল অনেকে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় সে প্রতিফলন ঘটেনি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি গিয়াস উদ্দীন বলেন, পায়রার চেয়ে প্রাকৃতিকভাবে সোনাদিয়া অনেক বেশি উপযুক্ত ছিল। প্রাকৃতিক সুবিধা থাকায় সোনাদিয়া অগ্রাধিকার তালিকায় প্রাধান্য পাওয়া উচিত ছিল। দেশের অর্থনীতিকে চিন্তা করলে সোনাদিয়াকে প্রাধান্য দিতে হতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৪ সালের জুনে চীন সফরের সময় দেশটির সঙ্গে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এরপরই চাপা পড়ে যায় এই প্রকল্পটি। সোনাদিয়ার পরিবর্তে পায়রা বন্দর গুরুত্ব পেতে থাকে। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে এসে পরিকল্পনামন্ত্রী আ.হ.ম. মুস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, সরকার গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে আপাতত পায়রাকে গুরুত্ব দেবে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর হবে কি হবে তা নিয়ে আরও ভাববে সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক কারণে সোনাদিয়া বন্দর আটকে গেছে। চীন-ভারতসহ কয়েকটি দেশ এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থায়নে আগ্রহ দেখালেও ভবিষ্যত্ আধিপত্য বিস্তারের কারণে সরকারও আপাতত এর তোড়জোড় স্থগিত করেছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট শেষে প্রকাশিত পুস্তিকায় সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর সম্পর্কে বলা হয়েছিল, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের আনুমানিক ব্যয় ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে সম্পাদনযোগ্য ব্যয় ৭৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। প্রকল্পের অবশিষ্ট ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার এবং লিঙ্ক প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ৫৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার পিপিপির বাইরের (নন-পিপিপি) উৎ্স থেকে সংগ্রহ করা হবে। নন-পিপিপি অংশের অর্থায়ন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে সরকার।

পাঠকের মতামত: