ইফতেখার শাহজীদ, কুতুবদিয়া :
কুতুবদিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন গাইড বই প্রকাশনীর গোপন চুক্তির অভিযোগ অনেক আগের। প্রতি বছরই নিম্নমানের গাইড, বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজী গ্রামার পাঠ্য করাতে বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগীতায় পুরো উপজেলায় দাবড়িয়ে বেড়ায় গাইড বই প্রকাশনীর অসাধু দালালচক্র। বছরের অক্টোবর থেকেই তারা শুরু করে গোপন চুক্তির কার্যক্রম। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষককে ম্যানেজ করে নিম্ন মানের গাইড, বাংলা ব্যাকরণও ইংরেজী গ্রামার পাঠ্য করানো এবং বই ক্রয়ে অভিভাবকদের বাধ্য করানোই তাদের মূল কাজ। গোপন চুক্তির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গ্রুপিং ও দন্ধের সৃষ্টি হয়েছে বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
দেখি আইন কী বলে, প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নোট বই নিষিদ্ধ করে আইন করা হয় ১৯৮০ সালে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকায় নোট বই বাজার থেকে নিষিদ্ধ হয়নি বরং প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের নোট বইও বাজারে সয়লাব হয়ে যায়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নোট বই ছাপানো বন্ধের উদ্যোগ নেয়। মন্ত্রণালয় ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর সরকারের অননুমোদিত নি¤œমানের বই, নোট বই ও গাইড বই বাজারজাত বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাহায্য নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়। মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আবু তাহের ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, বাজারে নোট বই নয়, গাইড বই প্রকাশ করে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। কিন্তু রিট আবেদনকারীর যুক্তি খন্ডন করে হাইকোর্ট একই বছরের ১৩ মার্চ ১৯৮০ সনের নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইনের আওতায় নোট বইয়ের সঙ্গে গাইড বইও বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে মন্ত্রণালয়ের আদেশ বহাল রাখে। হাইকোর্ট রায়ে বলেন, গাইড বইও নোট বইয়ের অন্তর্ভুক্ত। হাইকোর্টের রায়ের পর রিট আবেদনকারী আপিল করলে শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।
নোট বই নিষিদ্ধ করণ আইন ১৯৮০ এর আইনটির ২ (খ) ধারায় নোট বইয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বোর্ড বা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ ছাড়া প্রকাশিত এমন বই যাতে পাঠ্য বইয়ের কোনো বিষয়ের ওপর নোট, ব্যাখ্যা, মন্তব্য বা রেফারেন্স অথবা পাঠ্য বইয়ের কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান দেয়া থাকে অথবা পাঠ্য বইয়ের কোনো বিষয় বা অধ্যায়ের অনুবাদ অন্তর্ভূক্ত হয়।
৩ (১) ধারায় নোট বই ছাপানো, প্রকাশ, আমদানি, বিক্রি বিতরণকে সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইন লঙ্ঘন করলে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড দেয়ার বিধান আছে।
কুতুবদিয়া উপজেলায় কমপক্ষে এক ডজন বইয়ের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট-গাইড। এ ছাড়া সরকারের বিনা মূল্যে দেওয়া বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ বই অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে না।
ব্যাপক খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, উপজেলার বইয়ের দোকানগুলোতে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নোট-গাইড প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। এ সব দোকান গুলোতে লেকচার, পাঞ্জেরি, জুপিটার, মাতৃছায়া, গ্যালাক্সি, অনুপম, নবদূত, কাজল, অ্যাডভান্স, স্টারসহ বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা সদরের মেডিকেল গেইটে অবস্থিত বিসমিল্লাহ লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখা গেছে প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রি হচ্ছে। প্রকাশনী ভেদে গাইড গুলোর দাম ৮০ থেকে ৯৫০ টাকা। উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড বই কিনতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বাধ্য করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কতিপয় বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরাই প্রকাশনা সংস্থার কাছ থেকে পাইকারি দরে সব শ্রেণীর গাইড বই নিয়ে বিদ্যালয়ে বসে তা বিক্রি করছেন। এ ছাড়া উপজেলা শিক্ষক সমিতি মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন পেয়ে বিভিন্ন প্রকাশনীর নিন্মমানের বাংলা-ইংরেজি ব্যাকরণ ও নোট-গাইড বই উপজেলার সব বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে উপজেলা শিক্ষক সমিতির নেতারা।
পাঠকের মতামত: