এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: পরিবারের বটবৃক্ষ সুরেশ চন্দ্র সুশীল মারা গেছেন দশদিন আগে। স্বামীকে হারিয়ে এমনিতে শোকে কাতর ছিলেন মানু বালা শীল (৬২)। এই মধ্যে মঙ্গলবার ভোরে নাড়িছেড়া বুকের ধন পাঁচ ছেলেকে হারিয়ে বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েছেন। শোকের কাতর মানু বালার চোখে কান্না নেই, তবে সকাল থেকে বুকপাটা আর্তনাদে তাঁর চোখের জলও শুকিয়ে গেছে। পাঁচ ছেলের মরদেহ সামনে নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় বসে আছেন নিরব নি:শব্দে। নেই কোন অনুভূতিও। দৃশ্য দেখা মনে হচ্ছে, রাজ্যৈর চরম হতাশা ভর করছে তাঁর জীবনে।
আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশি সবাই মানু বালা শীলকে ঘিরে রেখেছে। কেউ কেউ উচ্চ কন্ঠে আবার কেউ নিরবে কান্না করছে বাড়ির উঠান ও ভেতরে। শোকাবিহবল এই অবস্থা দেখে কঠিন হৃদয়ের মানুষও কান্না ধরে রাখতে পারবেনা। একসঙ্গে একই পরিবারের পাঁচ ভাইয়ের এমন হৃদয় বিদারক মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের বুক ফাটা আর্তনাদ যে মালুমঘাট হাসিনাপাড়ার হিন্দুপল্লীর আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, বাবা সুরেশ চন্দ্র সুশীল মারা গেছেন ১০ দিন আগে। গতকাল মঙ্গলবার ছিল অন্তোষ্টিক্রিয়া বা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন। এইজন্য ভোর সকালে পরিবারের সাত ভাই ও এক বোন গিয়েছিলেন শ্বশানে। সাথে নিয়েছিলেন শ্রদ্ধা কর্মের সমস্ত উপকরণ। মোমবাতি জ্বালিয়ে শুরু করেছিলেন প্রার্থনা। প্রতিজ্ঞা ছিল পবিত্র হবেন, হয়েছেনও। কিন্তু বিধাতার নির্মম নিয়তির কাছে মুর্হুতে জীবন প্রদীপ নিভে গেছে চার ভাইয়ের।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট বনবিভাগের নার্সারীর পাশে সড়কে একটি ঘাতক পিকআপর গাড়ীটি তাদেরকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ৪ ভাই। আহত হয় আরো চার ভাই- বোন। পরে স্থানীয় লোকজন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এ সময় ছুটে আসে হাইওয়ে পুলিশ ও আশপাশের লোকজন। তারা ঘটনাস্থল থেকে অনুপম শীল, নিরুপম শীল , দীপক শীল , চম্পক শীল ।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের অপর ভাই সরণ শীল প্রাণ হারায়। আহত অপর তিন ভাই বোনকে মালুমঘাট হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, পারিবারিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিহত ৫ ভাইকে সৎকারের জন্য রাখা হয়েছে বাড়ির উঠানে।
সরেজমিনে বাড়িতে দেখা গেছে পরিবারের বড় ছেলে অনুপম শীলের স্ত্রী পপি শীল স্বামীর মরদেহ সামনে নিয়ে বুকফাটা আর্তনাদ করছেন। পপি শীল একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স। কিছুক্ষন পর পপি শীল ও পরিবারের আরো কিছু নারী সদস্য উঠানের অপর মরদেহ ঘিরে বিলাপ ধরে কান্নাকাটি করছিলো। তাদের কান্না ও আহাজারিতে পুরো এলাকার আকাশ ভারী হয়ে উঠছিল।
পপি শীল আর্তনাদ করে বলছিল আমাদের পরিবারের এমন নির্মম পরিণতি কেমনে সইব। আমাদের দেখাশুনা করবে কে?, পরিবারকে আগলে রাখবে কে? তারা বেঁচে থাকলে আজ তাদের বাবা সুরেশ চন্দ্র শীলের অন্তোষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হতো। এইজন্য সব আয়াজন সম্পন্নও করেছিল। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী সবাইকে নিমন্ত্রণও করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের কপালে বাবার অন্তোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা আর সম্ভব হলো না। #
পাঠকের মতামত: