মো: ছফওয়ানুল করিম, পেকুয়া :::
দিনমজুর নুরুল আলমের স্ত্রী হাজেরা। চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের চরপাড়ায় ৬ সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন গত ২০ বছর ধরে। সম্প্রতি উন্মত্ত মাতামুহুরীর খরস্রোতের করাল গ্রাসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় তার বাড়িটি। বসত ভিটার পাশাপাশি তার বসতভিটার গাছপালাও গিলে খেয়েছে মাতামুহুরী। এখন ঠিকানাহীন হাজেরার মাথা গুঁজার ঠাঁই নেই। তাই ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে মাতামুহুরীর পাড়ে খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। শুধু হাজেরা নয় রুবেলের স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা ফরিদা, ফিরোজ খতুন, নুরুল হক সহ মাতামুহুরী নদী পাড়ের হাজারো গরীব অসহায়ের বাড়ী নদী গর্ভে বিলিন হয়ে তাদের ঠিকানা এখন রাস্তায়। এছাড়াও নদীর দুইপাড়ের অন্তত শতাধিক স্থানে বেড়ী বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। তারমধ্যে চকরিয়ার কাকারা, দিগরপানখালী, কুরুইল্যারকুম, পুরুইত্যাখালী, পেকুয়ার মগনামা কাকপাড়া, শরতঘোনা, উজানটিয়া সহ বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
নদীর ধর্ম হল এ পাড় ভাঙে ওপার গড়ে। কিন্তু মাতামুহুরীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, দখলদার ভূমিদস্যুদের কারণে নদী তার স্বাভাবিক গতিপথ হারাচ্ছে। যারফলে ভাঙছে বেড়ীবাঁধ, হাজার হাজার মানুষ হারাচ্ছে তাদের ঘরবাড়ি। নদীর পাড় দখলের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার নজরদারীও নেই। সম্প্রতি ৩০ কি:মি: মাতামুহুরীর পাড় পরিদর্শন করে দেখা যায়, নদীর যেপাশে চর জাগছে সেদিকেই প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা লিজ নিয়ে বা কর্তৃপক্ষের অগোচরেই মাছের ঘের তৈরী করে ফেলছে। এতে করে নদীর নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি স্রোতের গতিধারা পরিবর্তন হয়ে স্রোতের ধাক্কাটি সরাসারি আঘাত করছে অপর পাড়ে গিয়ে। এ সময় উম্মত্ত মাতামুহুরীর তীব্র সোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অপরপাড়ের বেড়ী বাঁধ, ঘরবাড়ী সহ সবকিছু। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন পাহাড়ী পলি জমে মাতামুহুরী নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় বানের পানি ওভার ফ্লো হচ্ছে। যার কারণে বেড়ীবাঁধ টিকানো যাচ্ছেনা। তারা মনে করেন, নদীর দুপারের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় এ নদীর গতিপথ ঠিক না থাকলে জনপদের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। ভরাট হওয়া মাতামুহুরী ড্রেজিং করা না হলে সামনের দিনগুলোতে মাতামুহুরী আরো বিরূপ আচরণ করবে বলে জানান তারা। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাহাড়ী পলি জমে মাতামুহুরী নদীর ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে তাই একটু বৃষ্টি হলেও বেড়ী বাঁধ উপচে বা কোথাও কোথাও ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা নদীটি শাসন করা ও ড্রেজিং করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে একটি জিডিপি তৈরী করছি যাতে আগামী শুস্ক মৌসুমে কাজ শুরু করা যায়। তিনি বলেন, অবৈধ দখলদাররা মাতামুহুরী নদীর দুইপাড়ে চিংড়ী ঘের বা বসতি তৈরি করে নদীর স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ করে দেয়ায় মাতামুহুরী অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তিনি মনে করেন প্রশাসন নদীর দুইপাড়ে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করা মানুষগুলোকে পুনর্বাসন করলে মাতামুহুরীর ভয়াল আচরণ থেকে অন্যান্য মানুষগুলোও রক্ষা পেতে পারে।
পাঠকের মতামত: