মাতৃভূমির মাটিতে ফিরতে মরিয়া ভারতের বিচারাধীন মামলায় থাকা সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি ইতিমধ্যেই মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছেন । সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে সালাউদ্দিন আহমদ ভারতের শিলংয়ে শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্ত রয়েছেন ।তবে এখনই তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট-৪৬’ এ দায়ের করা মামলার কার্যক্রমও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আইনী প্রক্রিয়া শেষ হলেই দেশে ফিরতে পারবেন তিনি।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জেরা ও যুক্তিতর্কের পরই রায়। আর এই রায় পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বিএনপির সাবেক এই যুগ্ম মহাসচিবকে।প্রসংগত তিনি ৬২ দিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ছিলেন।পরে ভারতের মেঘালয়ে শিলংয়ে তার খোজ মিলে।
সালাউদ্দিন আহমেদের পারিবারিক সূত্রে আরো জানা যায়, ভারতে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপির এই নেতা। শারীরিকভাবে এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ।
গত বছরের প্রথমদিকে বিএনপি নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকেন সালাহউদ্দিন আহমদ।তখনকার ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলাকালে ১০ মার্চ (২০১৫) রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাউদ্দিন আহমেদকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন তার স্ত্রী এডভোকেট হাসিনা আহমেদ।
তুলে নেওয়ার ৬২ দিন পর ২০১৫ সালের ১১ই মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের গলফ লিংক এলাকায় খোঁজ মেলে সালাউদ্দিন আহমেদের। ভারতে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরার সময় সেখানকার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে
মীমহ্যানস, সিভিল হাসপাতাল ও নেগ্রিমস হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি। এর মধ্যে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট-৪৬’ এ দায়ের করা মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে মেঘালয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এ চার্জশিট জমা দেয়া হয়। চার্জশিটে ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারা অনুযায়ী বৈধ ডকুমেন্ট ছাড়া অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। শিলংয়ের আদালত থেকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন পান তিনি। মামলার চার্জশিট হওয়ার আগে থেকেই মামলার কার্যক্রম চালানোর জন্য আইনজীবী এসপি মোহান্তকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি আইনগত দিকগুলো গভীর ভাবে দেখছেন বলে সুত্র জানায় ।
এদিকে জানা গেছে , সালাউদ্দিনের মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার (আইও) সাক্ষী শেষ। এরপর একপক্ষ আরেক পক্ষকে জেরা করবে ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের বাকি। এর পর পরই রায়। আদালতের নির্দেশে সপ্তাহে একদিন শিলং পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এবং ধার্য তারিখে অনুপ্রবেশের মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে তাকে।তিনি এখন ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে অবস্থিত ‘সানরাইজ গেস্ট হাউজ’-এ আছেন। সেখানে তার সঙ্গে রয়েছেন ব্যক্তিগত সহকারী, দুইজন তত্ত্বাবধায়ক। এছাড়া তার ভাতিজারা তিন মাস অন্তর অন্তর পালাক্রমে থাকছেন। তার আইনজীবী এসপি মোহান্ত ও শিলংয়ে বসবাসরত কয়েকজন বাংলাদেশি তাকে এ ডুপ্লেক্সটি ভাড়া নিতে সহায়তা করেছেন।
ইতিমধ্যেই দলীয় নেতাকর্মী ও দেখতে যাওয়া শুভাকাংখীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে , খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া সালাউদ্দিন বাসা থেকে বাইরে বের হন না। কোথাও গেলে সার্বক্ষণিক সঙ্গীকে নিয়ে বের হন।নামাজ রোজা ও বাসায় বিভিন্ন খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক দেখে সময় পার করেছেন তিনি। যোগাযোগ রাখতে চেষ্টা করছেন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও। দলীয় প্রধানসহ দলের নেতাকর্মীদের খবর নিচ্ছে নিয়মিতই।
পারিবারিক সুত্র জানান, সালাহউদ্দিন আহমদ এখনো পুরো পুরি সুস্থ নন ।সম্প্রতি তার একটি অপারেশন হয়েছে দিল্লিতে ।আরো একটি বড় অপারেশন বাকি আছে কোর্টের নির্দেশ পেলে এটি করাবেন। এবং তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। এবং দেশে ফিরতে চাইছেন। এদিকে এই ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপাসনের প্রেস ইউংয়ের সদস্য শায়রুল কবির জানান,আমরা নিয়মিত সালাহউদ্দিন সাহেবের যোগাযোগ রাখছি।তার খবরা খবর দলের হাইকমান্ড নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত ।সালাহউদ্দিন আহমদ দেশে ফিরতে চাইছেন ।এবং সবাইকে দোয়া করতে বলছেন। তবে আদৌ কখন তিনি দেশে ফিরবেন তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
পাঠকের মতামত: