তুষার তুহিন :
কক্সবাজার পৌরসভার সচিব সামছুদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারীর মত ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। টমটম আটকের নামে টাকা আদায়, ফুটপাতের দোকান থেকে সচিব পরিচয়ে ভয় দেখিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া এখন তার নিত্যদিনের কাজে পরিনত হয়েছে। সেবা প্রার্থীদের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হওয়া, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করা ও পৌর কর্মচারীদের সাথে দূর্ব্যবহারের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে বহুদিনের। আর তাঁর অনিয়ম, দুর্নীতি আর দূর্ব্যবহার থেকে মুক্তির সন্ধানে খোদ পৌর পরিষদ।এছাড়া পৌর সচিবের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর অভিযোগও রয়েছে। ঈদুল আযহার আগে পৌর সচিবের অনিয়ম দুর্নীতি, ও দূর্ব্যবহারের কথা জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছেন পৌর পরিষদ।
পৌরসভা সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি কক্সবাজার পৌরসভার সচিব হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ সামছুদ্দিন। যোগদানের পর থেকেই একের পর এক অনিয়ম করে যাচ্ছেন ওই কর্মকর্তা। ঘুষ নেওয়ার অপরাধে ধাওয়া খেয়েছেন বাজার ঘাটার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এছাড়াও জড়িয়েছেন নারী কেলেংকারীতে।
চলতি বছরের শুরু দিকে মোহাজের পাড়া এক নারী তার বিরুদ্ধে পৌর পরিষদের কাছে অভিযোগ ও করেছেন। ওই নারী তার অভিযোগে লিখেছিলেন পৌর সচিব মো. সামছুদ্দিন তার বিবাহিত পরিচয় গোপন করে দীর্ঘদিন ওই নারীর সাথে সম্পর্ক চালিয়েছেন। প্রতারণা করে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন । তিনি পৌর পরিষদের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।
কক্সবাজার পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেল অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পৌর সচিবের বিরুদ্ধে ওই নারীর করা অভিযোগটি বর্তমানে পৌর মেয়রের কাছে রয়েছে।
শুধু নারী কেলেংকারী নয় ধরাকে সরা জ্ঞান করে ওই কর্মকর্তা প্রতিনিয়ত রুঢ ব্যবহার করছেন কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে। তার আশালীন আচরনের কারনে পৌরসভার অনেক অস্থায়ী কর্মচারী কাজে আসতে চাননা বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এবিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান জানান, পৌর সচিব সামছুদ্দিন রূঢ প্রকৃতির লোক। তিনি কারনে অকারনে কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে অশালীন আচরন করেন। এব্যাপারে তাকে কয়েকবার সাবধানও করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোন কথা কর্ণপাত করেননি।
শুধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে নয় পৌর সচিব সামছুদ্দিন সেবাপ্রার্থীদেরও হয়রানি করেন। বিনা কারনেই সেবা গ্রহীতাদের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন। এবিষয়ে প্রতিকার চেয়ে অনেক ভোক্তভোগী পৌর পরিষদের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা সিদ্দিকী জামশেদ জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ কক্সবাজার পৌরসভায় সচিব হিসেবে রয়েছে সামছুদ্দিন । দীর্ঘ সময় কাজ করার কারণেএখন ওই কর্মকর্তা পৌর পরিষদের কথা শুনতেই নারাজ। তিনি স্বেচ্ছাচারী আচরন শুরু করেছেন পৌরবাসীর সাথে। তার বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে।
পৌর সচিবের অনিয়ম আর দূর্ব্যবহারের ব্যাপারে দীর্ঘদিন পৌর পরিষদ চুপ ছিল। কিন্তু তার স্বেচ্ছাচারিতা মারাত্মক রূপ নেওয়ার ঈদের আগে জেলা প্রশাসকের কাছে মৌখিক নালিশ করেছেন কাউন্সিলরগণ।
এ বিষয়ে ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এসআই আকতার কামাল জানান, ঈদের আগের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কোরবানীর পশু জবাই ও বর্জ্য নিস্কাশন কমিটির বৈঠকে পৌর সচিবের নানা অনিয়ম , দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে জেলা প্রশাসককে নালিশ জানানো হয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় , পৌর সচিব সামছুদ্দিনের নামে ৪ টি টমটম রয়েছে। এছাড়া তিনি টমটম আটকের নামে চালকদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায় করেন। ঈদের দুদিন আগে বাসটার্মিনাল এলাকায় পৌর সচিব প্রায় শতাধিক টমটম থেকে ৩ শত থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করেছেন। এছাড়া পৌরসভার আশপাশের ফুটপাতে ফলের দোকান থেকে প্রায় প্রতিদিন সচিব পরিচয় দিয়ে সামছুদ্দিন বিনামূল্যে নানা খাবার নিয়ে যান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কক্সবাজার পৌরসভার সচিব মো. সামছুদ্দিন জানান, তিনি পৌরসভার একজন কর্মকর্তা । তার পক্ষে ফলের দোকান ও টমটম থেকে চাঁদা আদায় করা সম্ভব নয়। এছাড়া ঈদের দুদিন আগে তিনি বাসটার্মিনাল এলাকায় যাননি বলেও জানান।
তিনি আরো জানান, পৌর পরিষদের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই এমন নালিশ তার বিরুদ্ধে পৌর পরিষদ দিতে পারেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন না।
আর নারী কেলেঙ্কারীর বিষয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি তার বিরুদ্ধে সাজানো ষড়যন্ত্র ছিল। ওই নারীর সাথে কখনো তার কোন ধরনের সম্পর্ক ছিল না।
এদিকে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, পৌর কাউন্সিলরগণের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে পৌর মেয়র মাহাবুবুর রহমানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পৌর সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করে জেলা প্রশাসনকে অবহিতকরণের জন্য।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান জানান, পৌর সচিবের কিছু অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি একটি নারী কেলেংকারীর ঘটনার অভিযোগও রয়েছে। এসব বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
পাঠকের মতামত: