ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

দুঃস্থদের টাকা গেল বিত্তবানদের ঘরে !

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ  সনাতন সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের মাধ্যমে সমগ্র দেশে মন্দির সংস্কার ও অসহায়, দুঃস্থদের জন্য দেশব্যাপী টাকা বরাদ্দ দেয়।

কক্সবাজারে দুঃস্থদের জন্য দেয়া এসব টাকা প্রদানে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে ট্রাস্টি বাবুল শর্মার বিরুদ্ধে। প্রকৃত অসহায় ও দুঃস্থদের বাদ দিয়ে নিকট আত্মীয়, পূজা কমিটির নেতা, স্বচ্ছল, বিত্তবানদের হাতে তুলে দেয়া হয়। এ নিয়ে জেলার সনাতন সম্প্রদায়ের মাঝে ক্ষোভ, মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা করতে দেখা যায়।

হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্ট থেকে প্রাপ্ত সূত্রে জানা যায়, এবারে জেলার জন্য মন্দির সংস্কার ও দুঃস্থদের জন্য ২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাষ্টি ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক বাবুল শর্মার মাধ্যমে বিতরনের জন্য দেওয়া হয়। গত ১৮ অক্টোবর ট্রাষ্টি বাবুল শর্মার সভাপতিত্বে শহরের গোলদীঘির পাড়স্থ সৎসঙ্গ আশ্রমে উক্ত টাকা বিতরণ অনুষ্টান অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উদ্ভোধক ছিলেন রামু- ককসবাজারের মাননীয় সাংসদ আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল।

যদিও প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডঃ সিরাজুল মোস্তফা ও বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডঃ রনজিত দাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা উপস্থিত ছিলেন না। অনুষ্ঠানে চেক বিতরণে ট্রাস্টি বাবুল শর্মার অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ধরা পড়ে। অনুষ্ঠানে ত্রাণ নিতে আসা দু্ঃস্থদের দেখে অনেকটা হতবাক হয়ে পড়ে প্রকৃত অসহায় ও দুঃস্থরা। ট্রাস্টি বাবুল শর্মার নিকট আত্মীয়, স্বচ্ছল, বিত্তবান এবং পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারাই দুঃস্থ হিসেবে টাকার চেক গ্রহণ করেছেন।

অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত সনাতন ধর্মের অনেকে জানিয়েছেন, অসহায় দুঃস্থের কেউ ৮ হাজার, কেউ ৫ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন। তবে আশ্চর্যজনক হচ্ছে দু’একজন ছাড়া সবাই বিত্তবান এবং পূজা পরিষদ ও বাবুল শর্মার আত্মীয়।

তাদের দেয়া তথ্য মতে, দুঃস্থের তালিকায় চেক পেয়েছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও ট্রাষ্টি বাবুল শর্মার বোন কল্পনা শর্মা। অথচ তিনি স্বচ্ছল ও তার ছেলে-মেয়ে সকলেই সরকারী চাকুরীজীবী, স্বামীও পেশাজীবী। টাকা পেয়েছেন জেলা পূজা কমিটির সহ-সভাপতি শহরের পরিচিত মুখ বিপুল সেন। তিনি শহরের গোলদীঘির ঐতিহ্যবাহী ইন্দ্রসেন বাড়ীর সন্তান ও বিত্তশালী। গোলদীঘির পূর্ব পাশে তার বিশাল জায়গা ও দোকান-পাট রয়েছে। দুঃস্থ নামে টাকা পেয়েছে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তা সাংবাদিক বলরাম দাশ অনুপম, ইলিয়াছ মিয়া হাই স্কুলে চাকুরীরত সবিতা মল্লিক, তিনি পূজা কমিটির মহিলা সম্পাদিকা, কয়েক জনের নামে চেক নিয়েছেন পৌর পূজা কমিটির দপ্তর সম্পাদক শুভ দাশ। এ ছাড়া আরো একাধিক স্বচ্ছল লোক চেক পেয়েছেন। অনুষ্ঠানে মন্দির ভিত্তিক স্কুলের একাধিক শিক্ষক থাকলেও তাদের কেউ চেক পাননি।
দূর্গা পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় ট্রাষ্ট কতৃক পূজা মন্ডপের জন্য টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে, এবারের পূজা শুরু হয়ে গেলেও পূজা মন্ডপে এখনো ট্রাষ্টের টাকাবিতরণ করা হয়নি, সেই টাকা বিতরনেও অনিয়মের আশংকা করেন সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি এ্যাডভোকেট রণজিদ দাশ বলেন, ‍দুঃস্থ, অসহায় মানুষের তালিকা কিভাবে করা হয়েছে আমি জানি না।এ বিষয়ে আমার সাথে কেউ যোগাযোগও করেনি। হয়তো এটি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের কাজ নয় বলে ট্রাষ্টি আমার সাথে পরামর্শ করেন নি। এখন ট্রাষ্টির টাকা স্বচ্ছলকে দিয়েছে নাকি অস্বচ্ছলকে দিয়েছে আমি জানি না।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্ট কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী প্রকল্প পরিচালক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীর বলেন, ব্যক্তি বাছাই ও টাকা বিতরণের বিষয় তিনি কিছুই জানেন না। এটি তার কাজও নয়।
তিনি বলেন, আমি মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের স্কুলের বিষয় দেখাশুনা করি মাত্র।সবকিছু ট্রাষ্টিই নির্ধারন করেন। তিনি এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাষ্টি বাবুল শর্মার সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন।

জানতে চাইলে ট্রাষ্টি ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারন সম্পাদক বাবুল শর্মা টাকা বিতরণের বিষয়টি ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করে বলেন, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবেন। তবে এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল।

পাঠকের মতামত: