নুরুল আমিন হেলালী, কক্সবাজার ::
ঈদগড়-্ঈদগাঁও হয়ে ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, পোকখালীর বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে পতিত প্রাচীন ফুলেশ্বরী নদী (বর্তমান ঈদগাঁও নদী) দখল দূষণের থাবায় মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। নদী খেকোদের করাল গ্রাসে এ নদী নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মাইলের পর মাইল জুড়ে ঈদগাঁও নদীর দু,কুল জুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। দখল-বেদখলের দোলাচলে মৃত প্রায় নদীর চিরচেনা রুপ। অন্যদিকে জেগে উঠা চর যেন ধুঁ ধুঁ বালু। অনেক জায়গায় যানবাহনসহ লোকজন হেঁটে পার হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও নদীর তলদেশ ভরে ফসলের ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবর্ষা মৌসুমে উজান থেকে ঢলের পানির সঙ্গে নেমে আসা পলিতে ঘেরবেড়া দিয়ে দখল করে নিয়েছে দখলবাজরা। নদীর তলদেশের অনেকাংশে পানি শুন্য থাকার সুযোগে বালু খেকোরা নির্বিচারে বালি উত্তোলন করে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ বালি ব্যবসা। এছাড়া বাঁশঘাটা এলাকায় নদীতে মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করে বালি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। একদিকে দখলের প্রভাব অন্যদিকে খননের অভাব ফলে হারিয়ে যাচ্ছে ঈদগাঁওনদী। নদী তীরবর্তী ঈদগড়, ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, চৌফলদন্ডী, পোকখালী, গোমাতলীর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে এই নদীর পানি সেচের মাধ্যমে বোরো আবাদ করা হয় । নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর এসব এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর বোরো জমির অধিকাংশই সেচ সংকট দেখা দেয়ার কারনে অনাবাদি থেকে যায় বলে জানান কৃষকরা। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একজন বয়োবৃদ্ধ কৃষক জানান, এককালে ফুলেশ্বরী নদীতে শীত, বর্ষা-সব মৌসুমে অথৈ পানি থাকত। রঙ-বেরঙের পালতোলা নৌকা চলাচল করত। জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ ও পণ্য আনা-নেয়ায় জলপথ হিসেবে ব্যবহার হতো। হাজার হাজার কৃষকের পণ্য এ নদী দিয়ে হাট-বাজারে নেয়া হত। বর্তমানে নদী খেকোদের দখলের থাবা এর সাথে কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে সেই চিত্র এখন কল্পকাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া নদীর দূকুলজুড়ে গড়ে উঠেছে ডজন খানেক পোল্ট্রি ফার্ম। এসব ফার্মের মুরগির বিষ্টাসহ সব ময়লা আবর্জনা সরাসরি নদীতে পড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে নদীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ। অন্যদিকে নদী তীরবর্তী গড়ে উঠা দোকান পাট, হোটেল-রেস্তোঁরার সমস্ত ময়লা আবর্জনা ফেলছে নদীতে। একদিকে দখল অপরদিকে দূষণ ফলে অস্তিত্ব সংকটে ঈদগাঁও নদী। ঈদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক তারেক আজিজ ও সাংবাদিক কাফি আনোয়ার জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ এ নদীটি কয়েক বছরে দখলের থাবায় একেবারে মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। মাইলের পর মাইল জুড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ ঘরবাড়ি। ফলে নদী এখন ভরাখালে পরিণত হয়েছে। অনতি বিলম্বে দখল উচ্ছেদ পূর্বক নদী খনন করা না হলে প্রাচীন ঐতিয্যবাহি ফুলেশ্বরী নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বলে মন্তব্য তাদের। এছাড়া নদী খেকোদের কাছ থেকে ঈদগাঁও নদীকে বাঁচাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সচেতন মহল।
পাঠকের মতামত: