শাহীন মাহমুদ রাসেল, কক্সবাজার :: ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নেই কোনো যানবাহনের আওয়াজ। থেমে থেমে চলছে দু-একটি গাড়ি। কুয়াশায় আচ্ছন্ন পুরো মহাসড়ক।
ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড শীতে নাজেহাল কক্সবাজারসহ সারাদেশের মানুষ। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়াটা বেশ কষ্টের। এমন শীতের মধ্যেও ভোর থেকে অনায়াসে মাটি আর পানি দিয়ে ইটভাটায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শিশুসহ শত শত শ্রমিক।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৬টায় কক্সবাজারের রামু উপজেলার চাকমারকুল ও ফঁতেখারকুল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ইটভাটায় সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশার মধ্যে ভাটার স্তুপ থেকে গুলানো মাটি নিচ্ছেন বেশ কিছু শ্রমিক। সেখান থেকে ট্রলি দিয়ে আবার ইট বানানোর লাইনে মাটি নিচ্ছেন কেউ কেউ। সেখানে ইট বানিয়ে যাচ্ছেন আরও কিছু শ্রমিক। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে ইটভাটা শ্রমিকদের।
প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশার মধ্যে ইটভাটায় কাজ করছেন এমন কয়েকজন শ্রমিকেরা জানান, প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় ইটভাটায়। তবে শুক্রবার দুপুরে কাজ বন্ধ থাকার কারণে রাত ৩টায় কাজ শুরু হয়ে চলে সকাল ৭টা পর্যন্ত।
শীতের বিষয়ে জানতে চাইলে চাকমারকুল এলাকার একটি ইটভাটায় কর্মরত হায়দার আলম (২৭) বলেন, রাত ২টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৩টা থেকে কাজ শুরু হয়ে চলে সকাল ৭টা পর্যন্ত। কাজের সময় কোনো শীত লাগে না। কাজের ব্যস্ততায় শীত বা কুয়াশা বোঝা যায় না।
একই ইউনিয়নের ভূতপাড়া গ্রামের ইমান আলী (৩৫) বলেন, ভোর থেকে ইটভাটার গোলা (মাটির স্তুপ) থেকে মাটি কেটে ট্রলিতে ভরে মেশিনে দেওয়া শুরু করি। শুরুতে শরীরে শীতবস্ত্র থাকলেও পরে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে খুলে রাখি। এভাবে চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। কাজ শুরু করার সময় কিছুটা শীত লাগলেও কাজ শুরুর পরে শীত পালিয়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার চার কন্যা সন্তানের জনক আব্দুল বারি বলেন, সারা বছর এলাকাতে ভ্যান চালাই। কার্তিক মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলার ইটভাটায় কাজ করতে চলে আসি। কাজের আগে ও পরে শীত অনুভব করলেও কাজের সময় কোনো শীত লাগে না। তবে প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে মাঝে মাঝে কাশি হয় বলে জানান তিনি।
ইটভাটার মিল সরদার রফিক উদ্দিন জানান, প্রতিটি মিলে ১৮ জন করে শ্রমিক কাজ করেন। ভাটা থেকে গুলানো মাটি নিয়ে ইট বানানো পর্যন্ত তাদের কাজ। এদের অনেককেই কাজের আগে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অনেককেই আবার সপ্তাহ শেষে বেতন দেওয়া হয়।
প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টাকার মতো বেতন আসে ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের। তবে যারা ইট বানান তাদের বেতন এর চেয়ে একটু বেশি। দরিদ্রতার কারণে ইটভাটায় কাজ করেন এসব শ্রমিকেরা। সারা বছর রিকশা ভ্যান বা অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাওয়া এসব শ্রমিকেরা ইটভাটা থেকে আয়ও করেন বেশ ভালো। কাজেই এদের শীতে নাজেহাল হওয়া মানে পরিবার নিয়ে উপোস থাকা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও শাহীন আব্দুর রহমান জানান, প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশার কারণে শীতকালীন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। তবে চলতি বছরে সদর হাসপাতালে এখনও রোগীর অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। তবে এসব রোগ থেকে সুস্থ থাকার অন্যতম উপায় হিসেবে সচেতনতাকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, সূর্যের আলো দেখা গেলেই শীতের প্রকোপ কমতে শুরু করবে। আবহাওয়া শুষ্ক এবং কোথাও কোথাও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। তবে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়াও সারা দেশের মতো কক্সবাজারেও রাতের ও দিনের তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পাঠকের মতামত: