অনলাইন ডেস্ক :: তামাক ব্যবহারজনিত বিভিন্ন অসুস্থতায় বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন। আর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন বিলম্বে এ মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্রুত আইনটি সংশোধন দরকার।
রোববার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সুপারিশ করেছেন বক্তারা। এটি আয়োজন করেছে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, তামাক মৃত্যু ঘটায়। প্রধানমন্ত্রীর সামনে তামাকের ক্ষয়ক্ষতি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করে তামাক নিয়ন্ত্রণ সংশোধিত আইন দ্রুত পাশ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান বলেন, ই-সিগারেট তামাকের মতোই ক্ষতিকর। তরুণদের সুরক্ষায় ই-সিগারেটসহ সব ধরনের ভ্যাপিং পণ্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি ও সাংবাদিক মিনার মনসুর বলেন, আইন শক্তিশালী করার পাশাপাশি তামাকের ভয়াবহতা হ্রাসে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বজায় রেখে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের সুরক্ষা প্রদান সম্ভব নয়। কাজেই বিদ্যমান আইনের ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’ রাখার বিধান বাতিল করতে হবে।
থাইল্যান্ড, নেপাল, তুরস্ক, যুক্তরাজ্যসহ ৬৭টি দেশ পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি হ্রাসে শতভাগ ধূমপানমুক্ত আইন বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমান আইনে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তরুণ ও শিশুদের আকৃষ্ট করতে বিক্রয়স্থলের দৃশ্যমান স্থানে তামাকপণ্যের প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। তরুণদের সুরক্ষায় সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ ৫০টি দেশ বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেরও উচিত হবে বিক্রয়স্থলে তামাক পণ্যের প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, বর্তমানে তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট এবং ভ্যাপিং পণ্যের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ভারতসহ কমপক্ষে ৩২টি দেশ ইতোমধ্যে এসব পণ্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনীটি দ্রুত পাশ করার মাধ্যমে ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং পণ্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
এপির বাংলাদেশ ব্যুরো চিফ জুলহাস আলম বলেন, শিশু ও নারীসহ সব অধূমপায়ীকে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দ্রুত আইন সংশোধন করে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা রাখার বিধান বাতিল করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সব সংস্থার উচিত হবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে একযোগে কাজ করা।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোম্পানিগুলো তরুণ ও কিশোরদের তামাকে আকৃষ্ট করতে বিক্রয়স্থলে তামাক পণ্যের প্যাকেট প্রদর্শন করছে। এটি নিষিদ্ধ করতে হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় বৈঠকে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
অনুষ্ঠানে আত্মার কনভেনর মোর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে।
পাঠকের মতামত: