ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

টেকনাফ শামলাপুর বাজারে আড়াই কোটি টাকার সরকারী জমি বেদখল

03শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার :::

জমির মালিক সরকার। অথচ অবৈধ দখল করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণের পর মাসে মাসে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকায় আয় করছে ভুমিদস্যু চক্র। এতে করে কতিপয় প্রভাবশালী চক্রের স্বার্থ হাসিল হলেও সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব আয় থেকে। দোকানঘরগুলো মোটা অংকের টাকায় বেচাবিক্রিও করা হচ্ছে এখানে। এই হলো কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর বাজারে বর্তমান দৃশ্যপট।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকরি কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় মুল্যবান সরকারী জায়গায় উদ্ধারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে বাজারটি দখলমুক্ত করার জোর দাবী স্থানীয়দের।

টেকনাফ উপজেলার সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহি বাজারের নাম ‘শামলাপুর’ বাজার। সাগড় সৈকতের পাশ ঘেষে সরকারী অন্তত ১৫ একর জমিতে গড়ে উঠা বাজারটি ইজারা দিয়ে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে আসছে। বাজারটিতে প্রায় দেড় সহ¯্রাধিক দোকানপাট রয়েছে। সরকারী ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ‘মহিলা’ মার্কেট। তবে মহিলা মাকের্ট নামে হলে পরিচালনা করে পুরুষরা। প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে এখানে।

ঐতিহ্যবাহি বাজারটি দিনদিন শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। বাজারটির জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো দখল করে প্রভাবশালী ভুমিদস্যু চক্র বিভিন্ন সাইজের পাকা দালান, দোকান গৃহ ও মার্কেট স্থাপন করে তারা প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে আয় করে চলেছে। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভুমিকা প্রশ্মবিদ্ধ করেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শাপলাপুর বাজারের চৌরাস্তার মোড়ের উত্তর পাশটি দখলে নিয়েছে হাজি আকতার কামালের ছেলে আতিক উল্লাহ ৫টি টিন সেট আধা পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করেছে। এগুলো মাসিক ভাড়াও দেয়া হয়েছে। একই পাশে নুরুদ্দীন মিস্ত্রি ৩/৪টি কাচা-পাকা দোকানঘর নির্মাণ করেছে। এসব দোকানও ভাড়া দেয়া হয়েছে। পশ্চিম পাশের সৈকত রোড়ের দু’পাশ দখল করেছে মৃত রশিদ আহম্মদের ছেলে আবদু সালাম কোম্পানী বাশের বেড়ার কাচা দোকান ঘর নির্মাণ করেছে। মৃত নুরু ফকিরের ছেলে মৌলভী ছৈয়দ আলম বাঁশের বেড়ায় তৈরি দোকানঘর ১টি। মৃত মৌলভী ফজল হকের ছেলে সামশুল আলম সেমিপাকা টিন সেড ১টি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিস গৃহের পাশে ইউ সাইজের সেমিপাকা টিনসেড ২০ কক্ষবিশিষ্ট মার্কেট করেছে মৃত হাজি আমির হামজার ছেলে মোক্তার আহম্মদ আমির, পূর্বপাশ দখল করেছে সেমিপাকা টিনসেড দোকান ঘর নির্মাণ করেছে মৃত মাগন আলীর ছেলে ফরিদ আহম্মদ প্রকাশ ফরিদ ডিলার, শামলাপুর বাজারের পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের মাঠ দখল করে ৬টি সেমিপাকা টিনসেড দোকানঘর নির্মাণ করেছে বাহারছড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শওকত আলী।

বাজারের মুল্যবান সরকারী খাস জমি দখল করে ভুমিগ্রাসির চক্রের স্বার্থ হাসিল হলেও সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।

ভুমিদস্যুদের কবল থেকে বাজারটিকে রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় অধিবাসিদের মতে, শামলাপুর বাজার যেভাবে দখলবাজ চক্রের থাবা পড়েছে আগামী কিছুদিনের মধ্যে এক ইঞ্চি জায়গাও খালী থাকবে না। এক্ষত্রে উপজেলা প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতা সচেতন মহলকে রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কবিরের ছেলে আবু ছিদ্দিক বলেন, স্থানীয় শামলাপুর বাজারের জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো প্রভাবশালী চক্র দখল করে বিভিন্ন সাইজের মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে, সেগুলো মাসিক ভাড়া দিয়ে , প্রয়োজনে দোকানঘরগুলো মোটা অংকের টাকায় বেচাবিক্রি করা হচ্ছে। শুনে আসছি অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করবে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

এসব অবৈধ স্থাপনাগুলো দ্রুত উচ্ছেদ করে ঐতিহ্যবাহি বাজারটির সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার দাবী জানান তিনি।

বাজারের দখলদার সাবেক চেয়ারম্যান শওকত আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি অবৈধ দখলদার নই। আমার খতিয়ানভুক্ত জমিতে মার্কেট নির্মাণ করেছি। বাজারে শুধু আমারই খতিয়াভুক্ত জমি আছে, কারো কোন কাগজ নেই।

এব্যাপারে শামলাপুর বাজার ব্যবসায়ি সমবায় সমিতির সভাপতি মাষ্টার এমএ মনজুর বলেন, বাজারে দোকানঘর নির্মাণ করেছি এটা নতুন নয়। এগুলো নির্মাণ করা হয়েছে আরো ৪/৫ বছর আগে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, শামলাপুর বাজারের কিছু অংশ বেদখলে আছে সে বিষয়টি আমার জানা আছে। তবে আমার পূর্বের ইউএনও’র সময় বিষয়টি নিয়ে একটি মামলা হয়। দখলদাররা হাইকোটে রীটও করেছে। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে। এর পরেও অবৈধ দখলদারের ব্যাপারে সহকারী কমিশনারকে (ভুমি) নিয়ে বিষয়টি দেখছি।

পাঠকের মতামত: