শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ১৩ নভেম্বর ॥
কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপকূলীয় এলাকার দারিদ্র্যের ছিন্ন-ভিন্ন পরিবার ও অতিদরিদ্র পীড়িত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ অবস্থায় ফরম পুরনে টাকা জোগাড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ১৩ নভেম্বর ফরম পুরণের শেষ দিনে অতিরিক্ত জোগাড় করতে না পেরে অর্ধশত শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
গংশ্লিষ্ট মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ওয়েব সাইটসুত্রে ২০১৭ সালের বোর্ড কর্তৃক ফরম পূরণ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, নিয়মিত প্রতি পরীক্ষার্থী থেকে সর্বসাকুল্যে আদায় যোগ্য ফি ১৩’শ৮৫ টাকা।
কিন্তু শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ আদায় করছে মানবিক শাখায় ২২’শ টাকা থেকে ২৫’শ টাকা সাথে কোচিং বাবদ দেড় হাজার টাকা দেখিয়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা এবং বিজ্ঞান শাখায় ২৫’শ থেকে ২৮’শ টাকা। আদায়কৃত টাকায় রয়েছে, ফরম পুরণের ব্যাংক ড্রাপ বাবদ ১৪’শ টাকা, কেন্দ্র ফি ৩’শ টাকা, সাথে যুক্ত করছে কোচিং ফি ১৫’শ টাকা ও অকৃতকার্য ( ক্রস ১ বিষয়ে) ফি ৫’শ টাকা এবং উন্নয়ন ফান্ডের নামে আরো নেয়া হচ্ছে ৫’শ টাকা। ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ১০৯ জন শিক্ষার্থী এ বিদ্যালয় থেকে অংশ নিচ্ছে।
কয়েকজন অভিভাবক ও পরীক্ষার্থী সুত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবরে সম্পন্ন হওয়া নির্বাচনী পরীক্ষায় ৩টি বিষয়ে প্রশ্ন পত্র ফাঁস করে দিয়ে বিপুল অংকের টাকাও উপার্জন করে শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেট। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পত্রে পরীক্ষা সম্পন্ন করা হলেও এলাকাবাসি ও অভিভাবকদের তোপের মুখে ইংরেজী ১ম, ২য় পত্র ও গণিতে পুনঃ পরীক্ষা নেয়া হয়। এবিষয়ে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক এমএমনজুর বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি জানার পর ওইসব বিষয়ে পুনঃ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।
কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী জানান, ইংরেজী দু’বিষয়ে পুনঃ পরীক্ষায় অংশ নেননি বেশির ভাগ ছাত্র ছাত্রী । যারা পুনঃ পরীক্ষায় অংশ নেননি তাদের পুঁজি করে ফাঁদ বসানো হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেন অভিভাবকরা।
সুত্রে আরো জানা যায়, কয়েক বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ার ধোয়া তুলে ফরম পুরণে আদায় করা হচ্ছে দুই থেকে আড়াই গুন অর্থ।
অনেক পরিবার এ বিশাল অংকের অর্থ জোগান দিতে না পারায় অনেক মেধাবী ছাত্র ছাত্রী আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, কোচিংয়ের নামে ফি নেওয়া অবৈধ হলেও সরকারী এই নির্দেশনা প্রধান শিক্ষক এমএ মনজুর মানতে রাজি নন। তার বেঁধে দেওয়া আইনেই চলছে পুরো প্রতিষ্টানের কার্যক্রম।
সরকারী নিয়মে কোচিং বানিজ্য নিষিদ্ধ হলেও দেদারছে এ শিক্ষা প্রতিষ্টান হাতিয়ে নিচ্ছে শিক্ষার্থী প্রতি দেড় হাজার টাকা, যদিও বিষয়টি সম্পুর্ণ অবৈধ। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নীরব ভুমিকায় স্থানীয় সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।
বাহারছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমএ মনজুর এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোচিং ফি নেয়ার বিষয়টি অপকটে স্বীকার করে বলেন, ব্যাংক ড্রাফসহ সর্বসাকুল্যে ৪ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকাগুলো স্কুলের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হবে। এটা টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অবগত আছেন।
এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিউল আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারী নির্ধারিত ফির এর বাইরে অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। এবিষয়ে আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রাম মোহন সেন এর সাথে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাঠকের মতামত: