ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

টেকনাফ থেকে ৫০ টাকায় বিদেশ সফর!

sbg20160413153312 নিউজ ডেস্ক ::

দু’টো আলাদা স্বাধীন দেশ। কিন্তু এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রবেশে লাগে না কোনো পাসপোর্ট। শুধু নিজ দেশের ইমিগ্রেশন দপ্তর থেকে দেওয়া বর্ডার পাসটা দেখালেই হবে। ওই দেশে প্রবেশে আর কোনো বাধা নেই। তবে এক দেশ থেকে আরেক দেশ সফরের অনুমতি পেতে খরচ করতে হবে মাত্র ৫০ টাকা!

বলছিলাম, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কথা। নাফ নদীর ওপর দিয়ে এই দু’দেশের মানুষ বর্ডার পাসের মাধ্যমে বৈধভাবে যাতায়াত করে সপ্তাহের সাতদিনই। ১৯৮৫ সালের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সাধারণ ব্যবসা চুক্তি অনুযায়ী এটি হয়ে আসছে।

এক্ষেত্রে দুই দেশের মানুষ বাংলাদেশের টেকনাফ স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও মিয়ানমারের মংডু ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করেন।

টেকনাফ স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যালয়ে দুই দেশের মানুষের এ অবাধ যাতায়াতের বিষয়ে কথা হয় ইমিগ্রেশন অফিসার এএসআই আবুল হোসেনের সঙ্গে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিনই ৩৫-৪০ জন করে রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইন অধিবাসী বাংলাদেশে আসেন চিকিৎসা ও ব্যবসার কাজে। আবার বাংলাদেশিরাও নিয়মিত সেখানে যান ব্যবসার কাজে।

আবুল হোসেন আরও বলেন, রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের এদেশে আসতে পাসপোর্ট লাগে না। ওই দেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে দেওয়া বর্ডার পাসটা দেখালেই হবে। এরপর আমরা তাদের ৫০ টাকার বিনিময়ে তিনদিন বাংলাদেশে থাকার অনুমতি দিই। এর চেয়ে বেশিদিন থাকতে হলে প্রতিদিনের জন্য ২০০ টাকা করে চার্জ দিতে হয়। বাড়তি দিনগুলোতে তাদের একেকজনের জিম্মায় আরেকজনকে রাখা হয়। যাতে কেউ এদেশে এসে স্থায়ীভাবে থাকতে বা এদেশ ব্যবহার করে অন্যদেশে চলে যেতে না পারে। তারা সর্বোচ্চ ৯০ দিন থাকতে পারবে বাংলাদেশে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের নাগরিকদের মিয়ানমার যেতে ওদের মুদ্রায় ৮০০ কিয়াট (১৬ কিয়াট= ১ টাকা) জমা দিতে হয়। বাঙালি মুসলিম সেদেশে গিয়ে তিনদিনের বেশি থাকতে পারবে না। শুধু মংডু শহরেই থাকতে পারবেন এ তিনদিন।- যোগ করেন আবুল হোসেন।

চেকপোস্টের বাইরে সরেজমিনে দেখা যায়, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের ১৪ জন রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে এসেছেন চিকিৎসার জন্য।

ইমিগ্রেশন অফিসের কর্মকর্তারা জানান, মূলত ব্যবসায়িক স্বার্থে বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও প্রায় রোহিঙ্গা নাগরিকই আসেন চিকিৎসার কাজে।

ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে কথা হয় মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের অধিবাসী সত্তরোর্ধ্ব মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি কক্সবাজার শহর থেকে চিকিৎসা শেষে মিয়ানমারে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন।

আবদুল্লাহ বলেন, আমরা নিজ দেশে পরাধীন। ভোট দেওয়ার অধিকার নেই, চিকিৎসা সেবাও পাই না। আমাদের মংডু শহরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। তাই বাংলাদেশে এলাম চিকিৎসার জন্য।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে শরীরজুড়ে বাতের ব্যথা। সাতদিন আগে বাংলাদেশে এসেছিলাম। কক্সবাজারে চিকিৎসা করেছি। এখন চলে যাচ্ছি।

আবদুল্লাহ আরও বলেন, বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন অফিসে তিনদিনের এন্ট্রি পাসের বিনিময়ে মাত্র ৫০ টাকা জমা দিলে হয়। নাফ নদীর ওপর দিয়ে বাংলাদেশে আসতে জনপ্রতি আমাদের মুদ্রায় সাড়ে চারহাজার কিয়াটের মতো লাগে। বাংলাদেশে আসতে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো নাফ নদীর ওপর ট্রলারে চড়তে হয় তাদের।

একই রাজ্যের নুরুল আমিন নামের আরেক অধিবাসী বাংলাদেশে এসেছেন তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে।

নুরুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। আমাদের ওখানে এরকম রোগীর খারাপ অবস্থা হয়ে গেলে কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তাই আগেভাগে চলে এলাম স্ত্রীকে নিয়ে। সাতদিনের জন্য এদেশে থাকার অনুমতি নিয়েছি। চিকিৎসা শেষে নিজ দেশে ফিরে যাবো।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসার কাজে প্রায় মিয়ানমারে যাতায়াত করেন টেকনাফের বাসিন্দা নাছির উদ্দিন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আনা নেওয়ার কাজে প্রায়ই মিয়ানমারের মংডুতে যাওয়া হয়। এজন্য মংডু ইমিগ্রেশন অফিসে মাত্র ৮০০ কিয়‍াট, মানে আমাদের টাকায় ৫০ টাকা জমা দিলেই হয়। এর বিনিময়ে আমরা তিনদিন ওই দেশে থাকতে পারি।

টেকনাফ ইমিগ্রেশন অফিসের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে মিয়ানমার যেতে ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসতে এটাই একমাত্র বৈধ পথ। এছাড়া নাফ নদীর ১০টি পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসে।

এ ১০ পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসতে বেশি অর্থ খরচ হলেও ‘সুবিধা’ আছে। কেননা এই পথ ব্যবহার করে বাংলাদেশে আসতে পারলে গোপনে এদেশে থাকা যায়, আবার এদেশের কেউ কেউ তাদের কাছ থেকে অন্যায় সুবিধা নিয়ে বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার সুযোগও করে দেয়।

পাঠকের মতামত: