ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

টেকনাফ তহসিলদার জাহেদের অধীনে ওম্মেদার ফারুকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন

Coxsbazar pict 04.09.2016শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, নিজস্ব প্রতিনিধি, কক্সবাজার, ৪ সেপ্টেম্বর ॥

কক্সবাজারের টেকনাফ সদর ভুমি অফিসের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক অবৈধ ওম্মেদার ফারুক। আর তাকে দিয়েই সদর ভূমি অফিসের তহসিলদার জাহেদ যতসব অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্যের ঘটনা যেন রেওয়াজে পরিণত করেছে। ভুমি অফিসের রেকর্ড ফাইল, গোপনীয় নথিও প্রায় সময় তার কাছে এমনটি বাসা বাড়িতেও থাকে বলে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন টেকনাফ সহকারী কমিশনার (ভুমি) জাহেদ ইকবাল। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত নির্দেশে টেকনাফ ভুমি অফিসে ওম্মেদার নিষিদ্ধ করা হলেও প্রকাশ্যে ওম্মেদার ফারুক ঠিকই অবৈধ কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনাফ পৌরসভার অলিয়াবাদের ইব্রাহীমের ছেলে মোঃ ফারুক টেকনাফ ভূমি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে ‘ওম্মেদার’ হিসাবে রয়েছে। ভুমি অফিসে সরকারী ভাবে এধরনের কোন পদ না থাকলেও তহসিলদারের সৃষ্ট অঘোষিত ভাবে ওম্মেদার নিয়োগ করেছে তহসিলদার জাহেদ হোসেন। ওম্মেদার ফারুক সামান্য বেতনে এ অফিসে চাকরী করলেও চলাফেরা যেন রাজার হালে । সম্প্রতি বিলাসবহুল বাড়িও নির্মাণ করছে। তার টাকার গরমে ভুমি অফিসে সেবাপ্রার্থী সাধারণ কাউকে পাত্তা দিতে চান না এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। কথিত ওম্মেদার ফারুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী জনৈক মোঃ আয়ুবের পার্টনার এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কোন সেবা প্রার্থী যে কোন কাজে ভুমি অফিসে গেলেই তার হাতে নানাভাবে হয়রানীর শিকার হন। তহসিলদার জাহেদের কুটকৌশলে নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। অতচ ফারুক ভূমি অফিসের সরকারি কোন কর্মচারি না হয়েও ঘুষের লেনদেন তাকে দিয়ে করাচ্ছে তহিসদার জাহেদ।

এদিকে, ওম্মেদার ফারুক ও তার গডফাদার খ্যাত তহসিলদার জাহেদ হোসেনের হাতে ভোক্তভুগী টেকনাফ কুলালপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসহাক বাদী হয়ে গত ২৮ আগস্ট বির্তর্কিত ওম্মেদার ফারুকের বিরুদ্ধে হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়,দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

ভুক্তভোগীরা আরো জানায়, ওম্মেদার ফারুক ভূঁয়া খতিয়ান সৃজন, নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত কাজের জালিয়াতির মহা কারিগর। কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ডকুমেন্ট তৈরীর মতো অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সুত্র জানিয়েছে, ওম্মেদার ফারুক ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মোটা অংকে ম্যানেজ করে সম্প্রতি টেকনাফ পৌরসভার ভূমি অফিস সংলগ্ন কুলাল পাড়া এলাকার হাজী হোছন আহমদ ওরফে সৈয়দ হাজীর ১০ জন ওয়ারিশের মধ্যে ৯ জনের নাম বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নুরুল ইসলাম নামের এক ছেলের নামে দু’টি নামজারি খতিয়ান ( নং- ৭৯১৪ ও ৭৯১৫, তাং- ২০/০৯/২০১৫) সৃজন করে দিয়েছে। ওই হাজী হোছন আহমদের ৯ ছেলে মধ্যপ্রাচ্য ও কাতারে অবস্থানের সুযোগে ওই ফারুক মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গোপন চুক্তিতে ওই জাল খতিয়ান সৃজন করেছে। একাজে ভূমি অফিসের সংশি¬ষ্ট কর্মচারীদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজও করেছে।

ভোক্তভুগীরা জানিয়েছে, সাধারণ মানুষকে হয়রানির একাধিক অভিযোগ থাকলেও সহকারি কমিশনার (ভূমি) সহ সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তারা ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেননি। সহকারী কমিশনারের কাছে সাধারণ লোকজন অভিযোগ করলেও অদৃশ্য কারণে সেই সব অভিযোগ এড়িয়ে গেছেন কর্তা ব্যক্তিরা।

এ ব্যাপারে টেকনাফ ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহেদ ইকবাল বলেন, তহসিলদার জাহেদ এবং ওম্মেদার ফারুক এর বিষয়টি আমার জানা আছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি অভিযোগের তদন্ত করছেন।

অভিযুক্ত তহসিলদার জাহেদ হোসেন বলেন, ওম্মেদার ফারুক নামের কোন কর্মচারী ভুমি অফিসে নেই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও টেকনাফ ভুমি কর্মকর্তার নির্দেশে ওম্মেদারের নামে কোন কর্মচারী যেন কাজ না করে সে ব্যাপারে নোটিশ টাঙ্গানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ওম্মেদার ফারুকের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ৯ বছর ধরে এখানে চাকরী করছি। এ পর্যন্ত কেউ অভিযোগ আনতে পারেনি। ভুমি অফিসের কাগজপত্র জালিয়াতির বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি তো সাধারণ কর্মচারী। কাজগপত্রে জালিয়াতি করার আমার কোন সুযোগ নেই। এসব স্যারেরা জানবেন।’

পাঠকের মতামত: