ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য বঞ্চিত জেলাবাসী

আজিম নিহাদ, কক্সবাজার :
কক্সবাজার জেলায় গত কয়েক বছর ধরে বিক্রি হচ্ছে না ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র পণ্য। এর ফলে সরকারের ন্যায্য মূল্যের পণ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এবার টিসিবির পণ্য বিক্রি চালু করতে ভিন্ন পন্থায় মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন। আসন্ন রমজানে টিসিবির পণ্য বিক্রি না করলে কক্সবাজারের সকল ডিলারশীপ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে সদর উপজেলার ঈদগাঁও বাজারের টিসিবি একটি ডিলারে নি¤œমানের পণ্য সরবরাহ করে। এনিয়ে ক্রেতাদের সাথে বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটে ডিলার মালিকের। পরে ওই ডিলারের মালিক নুরুল আজিম মাষ্টার টিসিবি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ওই ঘটনার পর থেকেই কক্সবাজারের ডিলারেরা টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
ডিলার মালিকদের অভিযোগ, টিসিবি উন্নত পণ্যের কথা বললেও সরবরাহ করে নি¤œমানের পণ্য। একারণে ক্রেতারা এসব পণ্য কিনতে চায় না। এর ফলে লোকসানে পড়তে হয়। তাই বাধ্য হয়ে তারা টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।
ডিলার মালিকদের এই অভিযোগ নাকচ করে জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. শাহাজান আলী বলেন, মূলত অতি মুনাফার লোভে নি¤œমানের পণ্যের অযুহাত দেখিয়ে টিসিবির পণ্য বিক্রি করে না ব্যবসায়ীরা। ঈদগাঁও বাজারে সেই সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি ছিল একটি ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা। টিসিবি যে, নি¤œমানের পণ্য সরবরাহ করে সেই অভিযোগ সত্য নয়।
তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিকভাবে ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে বিদেশি পণ্য আমদানী করে টিসিবিও একই জায়গা থেকে পণ্য আমদানী করে। এছাড়াও ডিলারদের কাছে সরবরাহ করার আগে ওই পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় প্রায় ২৪ টি টিসিবির ডিলার রয়েছে। এসব ডিলার মালিকেরা সংঘবদ্ধভাবে ‘চক্রান্ত’ করে টিসিবি’র পণ্য থেকে কক্সবাজারের সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করছে।
গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন রমজানের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
টিসিবির ডিলার মালিকদের পক্ষে নানা অযুহাত তুলে ধরেন সদর উপজেলার পিএমখালী বাংলাবাজার এলাকার ডিলার আব্দুল কাদের। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স কাদের এন্টারপ্রাইজ। আব্দুল কাদের বলেন, টিসিবির পণ্য বিক্রি করলে নানা বিপদে পড়তে হয়। কারণ এসব পণ্য অনেক সময় বিক্রির উপযোগী থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে ডিলার মালিকেরা টিসিবির পণ্য তুলে না।
কক্সবাজারের জন্য বরাদ্ধ করা পণ্য গুলো ডিলার মালিকেরা ডিও দিয়ে অন্য জেলার ডিলারদের বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ তুলেন জেলা জাসদের সভাপতি নইমুল হক চৌধুরী টুটুল। তিনি বলেন, ‘ডিলারদের কারসাজির কারণে আমরা টিসিবির পণ্য বঞ্চিত হচ্ছি। টিসিবির পণ্য চালুর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে’।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সবকিছুতে ভুল হয়। হয়ত ঈদগাঁও’র ঘটনাটি ছিল একটি অনাকাঙ্খিত বিষয়। কিন্তু এটার রেশ টেনে বছরের পর বছর টিসিবির পণ্য বিক্রি হবে না, তা সহ্য করার মত নয়। এখন ডিলারদের জন্য দুটি অপশন খোলা আছে, হয় টিসিবির পণ্য বিক্রি করবে, নয়তো ডিলারশীপ বাতিল করা হবে। কোন অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া যাবে না। বিশেষ করে রমজানে টিসিবির পণ্য বিক্রি স্বাভাবিক রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ঢালাওভাবে টিসিবির পণ্য খারাপের অভিযোগটি একেবারেই অসত্য। কারণ দেশের অন্যান্য সব জেলায় বেশ ভালভাবে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: