ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও বেতন বৈষম্যের শিকার শিশু ও নারী শ্রমিক

si sromikনুরুল আমিন হেলালী, কক্সবাজার :::

 ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে। আজকের শিশু আগমী দিনের ভবিষ্যত। তারাই পৃথিবী গড়বে তাই পরিবার, বিদ্যালয়, ও অর্থনৈতিক কর্মক্ষেত্রে শিশুদের উপর সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে এই পৃথিবীর যতকিছু চির কল্যাণকর অর্ধেক তার গড়িয়েছে নারী অর্ধেক তার নর। সরজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামে গঞ্জেও সব ধরনের অর্থনৈতিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নারী ও শিশুরা শ্রম দিচ্ছে। তবে বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না শ্রম আইন। অনেকেই মনে করছেন নারী ও শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে শ্রম আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে । হালকা থেকে ভারি ও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নারী ও শিশুদের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, আবার অনেকেই পরিবারকে সহযোগিতা করতে বাধ্য হয়ে পুরুষদের পাশাপাশি নারী ও শিশু শ্রমিকরা ঝুঁকিপুর্ণ এধরণের কাজে লিপ্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। সরেজমিনে, কক্সবাজার জেলা শহর, লিংক রোড, বিসিক শিল্প এলাকা, সদরের বৃহত্তম বাণিজ্যিক কেন্দ্র ঈদগাঁও বাজার ও ইসলামপুর শিল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ওখানকার প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে নারী ও শিশুশ্রমিক নিয়োজিত। দেখা গেছে, হোটেল ও রেস্টুরেন্টে, বিভিন্ন প্রসাধনি, মনিহারী ও কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী, চটপটি-চনামুড়ি বিক্রেতা, রিক্সা চালক, ভাঙ্গারী দোকান, মটর গ্যারেজ, মাইক্রোবাস-মিনিবাসের হেলপার, আসবাবপত্র তৈরীর কারখানা, ওয়েল্ডিং ও গ্রীল ওয়ার্কশপ, বেকারী-পেস্ট্রিশপ, পত্রিকার হকার, মাছ ও তরকারী বিক্রেতা, কাঠ ও লাকড়ি বিক্রি, ইটের ভাটায় ইট ভাংগা, লবণ মাঠ, ক্ষেতের জমি, শুটকি পল্লীসহ সব ধরনের কাজেই মুনাফালোভী মালিকরা স্বল্পমজুরীতে ওই সকল ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নারী ও শিশুদের ব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিক শ্রম আইন সংস্থা (আই এল ও) এবং ইউনিসেফ পরিচালিত সমীক্ষায় জানা গেছে, দেশের প্রায় তিন শ ধরণের অর্থনৈতিক কাজে শৈশব বিক্রি করছে শিশুরা। এই শিশু শ্রমিকদের বেশীর ভাগের বয়স ৭ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। শিশু শ্রম নিয়ন্ত্রনে আইন করা হলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। ফলে আইন অমান্য করে মালিক পক্ষ অত্যন্ত কম বেতনে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করছে শিশু ও নারী শ্রমিকদের। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩২ লক্ষ। এর মধ্যে ১৩ লক্ষ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। অন্য এক জরিপে দেখা গেছে এসব শিশু শ্রমিকের প্রায় ৫০ ভাগই পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। জেলায় নাম সর্বস্ব অর্ধ ডজন মানবাধিকার সংগঠন থাকলেও নির্যাতিত নারী ও শিশু কিংবা অপরাধ প্রবনতায় জড়িয়ে পড়া শিশুর মানবাধিকার রক্ষায় কেউ তেমন সচেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন অনেকেই । জেলায় প্রতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে নারী ও শিশু শ্রমিক নেই। ইট ভাটায় কাজ করা স্বামী পরিত্যক্তা রহিমা, করিমুন্নেছা, বেগমজানসহ কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান, সারাদিন পুরুষদের সাথে পালাøা দিয়ে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করার পরও মজুরি পান তাদের অর্ধেকের চেয়ে কম। শুধু চরম দারিদ্রতার কারনে তাদের বাবা-মা কিংবা পরিবার এধরনের কাজে ঠেলে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এটা ভবিষ্যত প্রজন্মের বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়। তাই কর্মক্ষেত্রে নারী ও শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে মালিকদের আরো সচেতন ও সতর্ক হতে হবে বলে মনে করেন কক্সবাজার সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক সরওয়ার সায়ীদ।

পাঠকের মতামত: